
বিপ্লব দাশ, কনটেন্ট হেড: দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে প্রাক্তন সাংসদ তথা বর্তমানে রাজ্যের মন্ত্রী বনাম বিজেপি সাংসদের বাদানুবাদ। গাড়ি থামিয়ে দুই নেতার একে অপরের দিকে অসৌজন্য আচরণ প্রত্যক্ষ করলেন সাধারণ মানুষ। তটস্থ পুলিশ প্রশাসন। জাতীয় সড়কে যানজট। ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ। যে জনগণেশের ভোটে দুই নেতাই জয়ী হয়ে মন্ত্রী বা সাংসদ হয়েছেন, রাস্তায় ভুক্তভোগী তারাই। অদ্ভুত দৃশ্য।
দুই নেতার একজন পেশায় গায়ক। বর্তমানে রাজ্যের মন্ত্রী বাবুল-সুপ্রিয়। ২০১৪ ও ২০১৯ সালে আসানসোল থেকে বিজেপির দুবারের নির্বাচিত সাংসদ। দুবারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ২০২২ সালে বিজেপির সাংসদ পদে ইস্তফা দিয়ে তৃণমূলে যোগদান। প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয় রাজ্যের মন্ত্রী। আর একজন হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতির আসনে এই রাজ্যের চাকরি ও শিক্ষা দুর্নীতি নিয়ে একের পর নির্দেশ নজর কেড়েছিল। সাধারণ মানুষ তাঁকে প্রায় ভগবানের আসনে বসিয়েছিলেন। এজন্য রাজ্যের শাসকদলের তরফে তাকে নিশানাও করা হয়েছিল। ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি রাজনীতির পা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিচারপতি পদে ইস্তফা দেন। বিজেপিতে যোগ দিয়ে তমলুক কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচন হন। এই দুই নেতার প্রকাশ্যে বাদানুবাদ নজর কাড়ল শুক্রবার রাতে। সংবাদ মাধ্যমে সেই ছবি ভাইরাল। বাদানুবাদের বিষয় সাংসদের গাড়ি গতি বনাম মন্ত্রীর গাড়ির গতি।
অভিযোগ মন্ত্রী বাবুল নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন, রাস্তায় সাইরেন বাজিয়ে তাঁর গাড়িকে ওভারটেক করে সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের গাড়ি। তারপরই মন্ত্রী সাংসদের গাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামান। একে অপরের বিরুদ্ধে তীর্যক মন্তব্য, প্রায় হাতাহাতির উপক্রম। সাংসদকে তাঁর আচরণের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে দাবি জানিয়ে সাংসদের গাড়ি আটকে রাখার অভিযোগ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। প্রশ্ন, সাংসদ হোক বা মন্ত্রী, তাঁদের সঙ্গে থাকে নিরাপত্তারক্ষী। সেই নিরাপত্তারক্ষীরাই সাংসদ-মন্ত্রীর গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেন। সঙ্গে থাকে পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি। এর বাইরে যদি কোনও সমস্যা হয়, তবে তা দেখার দায়িত্ব পুলিশ প্রশাসনের। যদি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের গাড়ির গতি বেশি থাকে, তার জন্য কেউ রাস্তায় দুর্ঘটনায় পড়েন সেটি দেখার দায়িত্ব পুলিশের। প্রশাসন এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কেন মন্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে সাংসদের গাড়ি আটকাবেন? সেটা কি তাঁর কাজ? সাংসদের গাড়িতে বেআইনি বাতি লাগানো আছে বলে অভিযোগ বাবুলের। তা তিনি পুলিশকে জানাতে পারতেন। তা জানিয়ে নিজে আইন হাতে তুলে নেবেন কেন? অন্যদিকে সাংসদ নিজেই বলছেন তাঁর তাড়া ছিল। তাড়া ছিল বলে তিনি তো সাধারণ মানুষের অসুবিধা করতে পারেন না। সাইরেন বাজিয়ে গতি বাড়িয়ে যাওয়াটা বেআইনি। একজন প্রাক্তন বিচারপতি হয়ে আইন ভাঙা কিন্তু বিচারব্যবস্থার প্রতি অনাস্থার প্রকাশ।
মন্ত্রী ও সাংসদ দুই জনপ্রতিনিধির এই আচরণ কি তাঁদের ‘অধিকারের দম্ভ’ প্রকাশ? দুজনেই জনগণের দ্বারা নির্বাচিত। তাই জনগণের প্রতি যে দায়বদ্ধতা দেখানো দরকার ছিল তা তাঁরা দেখান নি। দুজনের বাদানুবাদে জাতীয় সড়কে যানজট তৈরি হয়েছে। দুজন ভিন্ন দলের হলেও দুজনেই এই বাংলার শিক্ষা-সংস্কৃতি সম্পর্ক যথেষ্ট সচেতন। তাহলে কেন দুজন জনপ্রতিনিধি প্রকাশ্যে এমন আচরণ করবেন? কেন এমন অসৌজন্য আচরণ। যা বাংলার শিক্ষা-সংস্কৃতিকে কালিমালিপ্ত করবে। কোন অধিকারে?