
তাপস ঘোষ, রঘুনাথগঞ্জ : ওয়াকফ বিল প্রত্যাহারের দাবিতে তীব্র জনবিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল রঘুনাথগঞ্জ থানা এলাকার উমরপুর। সোমবার দুপুরে জাতীয় সড়ক অবরোধ ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক খণ্ডযুদ্ধের জেরে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা। উত্তেজিত জনতা পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে চলে ইটবৃষ্টি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোঁড়ে পুলিশ। এই ঘটনায় আপাতত দুই পুলিশকর্মীর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরেই ওয়াকফ বিল প্রত্যাহারের দাবিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছিল জঙ্গিপুরের বিভিন্ন এলাকায়। সুতি, সামশেরগঞ্জ ও রঘুনাথগঞ্জ এলাকায় একাধিকবার বিক্ষোভ প্রদর্শনের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ শুরু থেকেই কড়া অবস্থানে ছিল। সোমবার দুপুরে রঘুনাথগঞ্জ থানার অন্তর্গত উমরপুরে ওয়াকফ বিল প্রত্যাহারের দাবিতে একটি বিশাল মিছিল বের করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মিছিলে অংশগ্রহণকারী বহু মানুষ স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দেন, ওয়াকফ বিল প্রত্যাহার না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামা হবে এবং তার ফল আগুন ছড়াতে পারে।
এরপর কয়েকশো মানুষ ১২ নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধ শুরু করেন। পুলিশ অবরোধ তুলতে গেলে উত্তেজনা চরমে পৌঁছয়। শুরু হয় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের বচসা। এর পরই উত্তেজিত জনতা ইট-পাথর ছুঁড়ে আক্রমণ করে পুলিশকে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে শুরু করলে পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ করে এবং পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। কিন্তু তাতেও জনতা থামেনি। প্রতিরোধে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে তারা। এর মাঝেই পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা এই খণ্ডযুদ্ধে গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। নেতৃত্বে ছিলেন জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার আনন্দ রায়। তাঁর তত্ত্বাবধানে টিয়ার গ্যাস ও বাড়তি বাহিনী এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালানো হয়। বিকেলের দিকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। তবে এলাকায় এখনো চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পুলিশের দাবি, ঘটনায় আপাতত দুজন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। যদিও স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, কয়েকজন বিক্ষোভকারীও আহত হয়েছেন সংঘর্ষে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও গ্রেফতারের কথা জানানো হয়নি। তবে এলাকায় টহলদারি ও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
ওয়াকফ বিল নিয়ে রাজ্যজুড়ে যে অশান্তির স্রোত বয়ে চলেছে, সোমবার রঘুনাথগঞ্জের ঘটনা তারই এক জ্বলন্ত উদাহরণ। পুলিশের আশ্বাস, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে, তবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আরও বাহিনী মোতায়েন রাখা হবে।