
সুমন গঙ্গোপাধ্যায়ঃ এবার রীতিমত অঙ্ক কষে ময়দানে নামছেন রাহুল গান্ধী। হ্যাঁ রীতিমতো অংক কোষেই, আর সেই অঙ্কের লক্ষ ২০২৪ এর লোকসভা। আর দেশ দখলের ফাইনাল টেস্টে রাহুলের চমক ‘ভারত ন্যায় যাত্রা’। ‘ভারত জোড়ো যাত্রার’ পর এবার ‘ভারত ন্যায় যাত্রা’। এর আগে কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত হেঁটেছিলেন পায়ে হেঁটে ছিলেন রাহুল। তবে যাত্রায়া সাড়া পেলেও ভোট বাক্সে তার প্রভাব পড়েনি। বিশেষ করে হিন্দি বলয়ে তো বিশেষ প্রভাব পড়েইনি। সাম্প্রতিক তিন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল তেমনই ইঙ্গিত করছে। ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র ফলে নিজেদের সংগঠন জোরদার হলেও ভোট বাক্সে ঝড় তুলতে পারেন নি রাগা।
তবে, এবার লক্ষ লোকসভা। তাই রীতিমত প্ল্যান করেই এই যাত্রা পথ সাজিয়েছেন রাহুল। ৬৫ দিনের এই যাত্রায় রাহুল মোট ৬ হাজার ২০০ কিমি পথ পার হবেন। যার মধ্যে পড়বে ১৪টি রাজ্য ও ৮৫টি জেলা। কোন কোন রাজ্য দিয়ে যাবে রাহুলের যাত্রা? জানা যাচ্ছে মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অসম, মেঘালয়, বাংলা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, ছত্তিশগড়, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের ভিতর দিয়ে যাবেন রাহুল।
খুব ভাল করে দেখলে দেখা যাবে , যে যে রাজ্যের কংগ্রেসের সাংগঠনিক অবস্থা খুবই দুর্বল। আর তাই
সুকৌশলে এই যাত্রাপথ বাছাই করা হয়েছে। রাহুল যে যে রাজ্যগুলির উপর দিয়ে যাবেন, সেই রাজ্যগুলিতেই দেশের ৬৫ শতাংশ লোকসভা আসন পড়ে। মোট ৩৫৫টি লোকসভা কেন্দ্রে প্রভাব ফেলার চেষ্টা করবেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি।
আসলে যে ৩৫৫ টি আসন এই ১৪ রাজ্যে রয়েছে তার মধ্যে ২০১৯ সালে বিজেপি জিতেছিল ২৩৬টি আসন। কংগ্রেসের দখলে ছিল মাত্র ১৪টি। রাহুল ভালোমতোই জানেন বিজেপিকে হারাতে হলে এই ২৩৬ আসনের মধ্যে চিড় ধরাতে হবে। সেজন্যই এই রুট তিনি বেছেছেন। এই যাত্রা করে রাহুল ইন্ডিয়ার জোট সঙ্গীদের ও বার্তা দিতে চাইছেন বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। কি সেটা?
এবার একটু বিশ্লেষণ করা যাক, খুব বাস্তব এই মুহূর্তে অবস্থা যতোই খারাপ হোক, গোটা দেশে একমাত্র কংগ্রেস একক ভাবে ২১৫-২২৫ আসলে লড়াই করতে পারে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি নির্বাচনে কংগ্রেস খারাপ ফল করেছে অর্থাৎ একদিকে কংগ্রেস ছাড়া বিকল্প নেই, অপরদিকে শুধু ই কংগ্রেস, এমন ধারনাও এখন বদল হচ্ছে, সেদিক থেকে দেখতে গেলে কংগ্রেসকে ফের সর্বভারতীয় স্তরে নিজের জায়গা ধরে রাখতে আরো স্পষ্ট করে বললে দর কষাকসির জায়গাতে আসতে গেলে
নিজেদের শক্তি বোঝাতে হবে। সেই ক্ষেত্রে এই যাত্রা ঠিক লোকসভা নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ বলেই মত বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিৎ দাসের। তাঁর ব্যখ্যা,” একটি অরাজনৈতিক যাত্রা কতোটা পলিটিকাল ডিভিডেনট দিতে পারে তা ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ দেখিয়ে দিয়েছে, এর ফল কর্নাটকে কংগ্রেস পেয়েছে, যদি ও তিন রাজ্যে খারাপ ফলের কথা বলা হচ্ছে কিন্তু হিসাব করে দেখা যাবে শতাংশের হিসাবে কংগ্রেসের ভোট বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ গোটা দেশে চাইলে কংগ্রেস ২০০ ওপর আসন একা লড়াই করলেও ফল ভালো হবে সেটা বোঝা গিয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়ে এই যাত্রা দিয়ে কংগ্রেস আবার প্রমাণ করতে চাইছে গোটা দেশে এক মাত্র কংগ্রেসই বিকল্প। গোটা দেশে কংগ্রেসের যা সাংগঠন, ইন্ডিয়া জোটে বাকী দের তা নেই তাই স্বাভাবিকভাবেই জোটে আবার দর কষাকষির জায়গায় জায়গায় চলে আসবে কংগ্রেস এর পাশাপাশি কর্মীদের একটা বার্তা দেওয়া যাবে যে কংগ্রেস এখনো গোটা দেশে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে প্রাসঙ্গিক। ” এছাড়া ও আরও একটি বড় কারণও আছে আর তা হলো, জোটের ভিতরে তৃণমূল বা আম আদমি পার্টি কার্যত রাহুলকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে নারাজ। আর তাই শেষ ইন্ডিয়া জোটের মিটিং এ রাহুল গান্ধীর বদলে জোটের প্রধানমন্ত্রী মুখ হিসাবে মল্লিকারজুন খারগের নাম প্রস্তাব করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর তারা সমর্থন করেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল বিশ্বজিৎ দাসের ব্যাখ্যা ,” এই জায়গা থেকেও রাহুল গান্ধীর এই ভারত ন্যায় যাত্রা জোটেও যারা কার্যত রাহুল গান্ধীকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তাদের কাছেও একটি বার্তা যাবে। আর তা হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পাল্টা হিসাবে একমাত্র রাহুল গান্ধী মুখ হতে পারে, কারণ মনে রাখতে হবে ভারত জোড়ো যাত্রার পর এই ভারত ন্যায় যাত্রার মুখ ও কিন্তু রাহুলই।” তাই খুব ভেবে চিন্তেই রুট সাজিয়েছেন রাহুল।
তাছাড়া এই রুটে সেই রাজ্যগুলিও রয়েছে যে রাজ্যে ইন্ডিয়া জোটের আসনরফা নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তরপ্রদেশে আসনরফায় সুবিধা পেতে নিজেদের শক্তিও দেখিয়ে দিতে চায় কংগ্রেস।