
সুমন গঙ্গোপাধ্যায় : চলছে রাহুলের ন্যায় যাত্রা। উত্তর থেকে শুরু হয়ে সেই যাত্রা মুর্শিদাবাদ জেলায়। সেখান থেকে এই যাত্রা পা দেবে ঝাড়খণ্ড এ। তবে এই ন্যায় যাত্রায় মানুষের ভিড় কার্যত চমকে দিয়েছে রাজনৈতিক মহলকে। পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের র্যালি বা মিছিলে শেষ কবে এতো ভিড় হয়েছে, তা মনে করতে পারছেন না রাজনৈতিক মহল। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি বা মালদহ’র র্যালির ভিড় দেখে চোখ কপালে উঠতে পারে বিরোধীদের। এক কথায় পশ্চিমবঙ্গে চূড়ান্ত সফল ‘ভারত ন্যায় যাত্রা’। এবার প্রশ্ন হচ্ছে, এই সফল যাত্রা আদৌ কতোটা ডিভিডেন্ট দেবে প্রদেশ কংগ্রেসকে ? কয়েক দশক ধরে বাংলায় কার্যত মুখ থুবরে পড়েছে কংগ্রেস। মালদহ, মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়া, রায়গঞ্জ আর উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা ছাড়া প্রায় “হাতহীন” গোটা বাংলা। ২০১৬ সালে রাজ্য বিধানসভাতে বিরোধী দলের তকমা পেলেও,
সংগঠন কার্যত তলানিতে এসে পড়েছে কংগ্রেসের। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের সাথে জোট করেও শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাদের। এমনকী কংগ্রেসের গড় বলে পরিচিত মালদহ- মুর্শিদাবাদেও খাতা খুলতে পারেনি কংগ্রেস।
এমনকী ইন্ডিয়া জোটও ধাক্কা খেয়েছে রাজ্যে। সেখানে দাঁড়িয়ে আরও বেশি বেশি করে প্রশ্ন উঠছে কংগ্রেসের ভবিষ্যত নিয়ে। বাংলা থেকে এই মুহূর্তে লোকসভায় বহরমপুর ও মালদহ (দক্ষিণ) ছাড়া আর কোনো আসন নেই, ১৯ এর লোকসভায় রাজ্যের বেশির ভাগ আসনে জমানতই বাজেয়াপ্ত হয় হাত প্রার্থীদের। তাহলে এই ভারত ন্যায় যাত্রা করে আখেরে কী আদৌ কোনও লাভ হলো প্রদেশ কংগ্রেসের?
প্রতি নির্বাচনেই ভোট শতাংশ কমছে কংগ্রেসের। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই ন্যায় যাত্রা থেকে কতটা সুবিধা নিতে পারবে অধীর চৌধুরীরা? ২০২৪ এর নির্বাচনে আদৌ কি ‘সুবিধাজনক’ জায়গা তে আসবে হাত শিবির? বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক অভিষেক দে বিশ্বাস এর মতে, ” এটা ঠিক কংগ্রেসের কোনো র্যালি বা মিছিলকে নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে এই ধরনের উন্মাদনা চোখে পড়েনি, রাহুলের এই র্যালি রাজ্যের কংগ্রেস কর্মীদের অনেক টা চাঙ্গা করতে পারছে, একটা বড় টনিকের কাজ করছে। কর্মীরা সাহস নিয়ে রাস্তায় বের হচ্ছে, অর্থাৎ রাজ্যের কংগ্রেস কর্মীদের আত্মবিশ্বাস এই ন্যায় যাত্রা বৃদ্ধি করেছে।” তাঁর আরও ব্যখ্যা,” এই র্যালির একটা বড় প্রাপ্তি যুবকদের উপস্থিতি। এই ভিড় অন্তত কংগ্রেসের কোনো কর্মসূচীতে দেখা গেলো। ” অপরদিকে রাহুলের ন্যায় যাত্রা রাজ্যে কংগ্রেসের ‘হাল’ বদলে দিতে পারে মনে করছেন আরও এক বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিৎ দাস। তাঁর বক্তব্য, ” রাহুলের এই যাত্রা থেকে যদি ১০% ভোটে নিয়ে যেতে পারে তাহলে এই লোকসভা নির্বাচনে চমকে দিতে পারে কংগ্রেস। সংগঠন শক্তিশালী করতে পারলে আখেরে লাভবান হবে কংগ্রেস।” এর কারণ হিসাবে বিশ্বজিতের ব্যখ্যা, ” রাহুলের এই যাত্রা গোটা রাজ্যে কংগ্রেসের নেতা থেকে শুরু করে সাধারন কর্মীদের মারাত্নক উজ্জীবিত করতে পেরেছে। গোটা রাজ্যে অনেক বছর বাদে রাজ্যে রাহুলের মতো শীর্ষ স্থানীয় কোনো নেতা এই ধরণের কর্মসূচী করলো। প্রায় আন্দোলন ভুলে যেতে বসা বা কংগ্রেস করে কি হবে এই হতাশাতে থাকা দলীয় কর্মীরা রীতিমত অক্সিজেন পেয়েছে এই ন্যায় যাত্রাতে, স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনে দল কে জেতাতে হবে এই আত্মবিশ্বাস ফিরে আসছে কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে। ” তিনি আরও বলেন ” কর্মীদের পাশাপাশি রাজ্যের মানুষও দেখল যে রাহুল গান্ধীর মত নেতাকে রাজ্য প্রশাসন বিভিন্নভাবে আটকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। বা তার কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে তা সত্ত্বেও ন্যায় যাত্রা কোথাও বন্ধ করেননি রাহুল গান্ধী বরং যেখানে যাচ্ছেন কংগ্রেস কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়ছে এই র্যালিতে, এর ফলে কর্মীরাও একটা মনোবল পাচ্ছে যে তাদের নেতাকে হাজার চেষ্টা করেও আটকে রাখা যাচ্ছে না। অপরদিকে যারা ভোটার তাদের মনে প্রশ্ন জাগছে যে হঠাৎ করে কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন রাহুল গান্ধীকে কর্মসূচি করতে বাধা দিচ্ছে। বিশেষ করে মালদাতে রাহুল গান্ধীতে যেভাবে সরকারি গেস্ট হাউসে লাঞ্চ করতে দেওয়া হয়নি বা বহরমপুরে রাত্রে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় মাঠের ব্যবস্থা করা হয়নি তা নিয়ে মানুষ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে অর্থাৎ অন্ন, বস্ত্র বাসস্থানের মধ্যে অন্ন এবং বাসস্থান দুটোই দিতে চাইছে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। এটা একটা মারাত্মক ইমপ্যাকট পড়েছে। ” তিনি আরও বলেন, ” দেখুন মানুষ এখনও ৩৪ বছর ভুলতে পারে নি, অন্যদিকে প্রায় মাথা সমান দুর্নীতিতে ডুবে বর্তমান সরকার, আর বিজেপির ভরসা শুধু মাত্র রাম এ, তাহলে বিকল্প? সারা বছর পার্লামেন্টে কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে একাধিক সাধারণ মানুষের ইস্যু নিয়ে রীতিমতো সরকার পক্ষকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়ছেন না রাহুল গান্ধী, অর্থাৎ বিজেপি এবং তৃণমূলের বিকল্প হিসেবে কোথায় কোথাও কংগ্রেস ভরসার জায়গা হয়ে উঠছে। সেটাই সেটাই এই ন্যায় বুঝিয়ে দিচ্ছে। এমনকী এই রাজ্যের সংখ্যালঘুরাও দেখছেন সংসদ থেকে শুরু করে গোটা দেশেই বিজেপির বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় স্তরে সবথেকে প্রমিনেন্ট ফেস রাহুল গান্ধী, আর এই রাজ্যে এই রাহুলের মিছিলে বাঁধা দিচ্ছে তৃণমূল সরকার। কোথাও যেন একটা তৃণমূল বিজেপি গোপন আঁতাত তত্ত্বটি সামনে চলে আসছে। এটা কিন্তু সংখ্যালঘুরাও এখন বুঝতে পারছে।” অধীর প্রসঙ্গে বিশ্বজিতের বক্তব্য এই মুহূর্তে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রতিটা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে যিনি লড়াই করছেন তিনি অধীর চৌধুরী যারা তৃণমূলের কট্টর বিরোধী তাদের কাছে অধীরের এই স্ট্যান্ড যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য তাই আমার মনে হয় অধীর চৌধুরী ছাড়া এই মুহূর্তে রাজ্য সেরকম মুখ না থাকলেও কংগ্রেস এই ন্যায় যাত্রা থেকে ভালো ডিভিডেন্ট তুলতে পারবে।” তবে এতো গেল বিশ্লেষন, কিন্তু আসল ফল মিলবে ভোট বাক্সে।