
সুমন গঙ্গোপাধ্যায়ঃ পাশা কী উল্টে যাচ্ছে? কমছে দূরত্ব? কাছাকাছি আসছে দুই পক্ষ?
সূত্রের খবর, লোকসভা নির্বাচনে হাত ধরতে চলেছে জোড়া ফুল। খুব সম্ভবত ২৪ সের নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত আসন সমঝোতা হতে চলেছে তৃণমূল আর কংগ্রেসের। যা কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সোনিয়া গান্ধী- প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর মধ্যস্থতায় বাংলায় হাত ধরতে চলেছে দুই পক্ষ।
প্রথম থেকেই অন্য ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম নিউক্লিয়াস ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী ইন্ডিয়া জোটের দল গুলোকে নিয়ে তৈরী সমন্বয় কমিটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মুম্বই, পাটনা, বেঙ্গালুরুর তিনটি বৈঠকে এই ইন্ডিয়া জোট ঠিকঠাক থাকলেও, দিল্লীতে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকা অর্জুন খারগের ভার্চুয়াল বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখানেই শেষ নয়, এই বৈঠকে যোগ না দেওয়ার কারণ হিসেবে তৃণমূল সুপ্রিমোর যুক্তি তাঁকে না জানিয়ে এই ভার্চুয়াল বৈঠক ডেকেছে কংগ্রেস, আর তাই এই বৈঠকে যোগ দেন নি তিনি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে তাহলে কি ইন্ডিয়া জোট ছাড়ছে তৃণমূল?
মাঝে বাংলায় আসন সমঝোতার সম্ভাবনা তৈরী হলেও –
১। রাজ্যে সাংগঠন প্রায় তলানিতে থাকলেও আসন নিয়ে রাজ্য কংগ্রেসের জেদাজেদি।
২। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর তীব্র তৃণমূল বিরোধীতা জোট সম্ভাবনাতে কার্যত বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ¡
হাইকমান্ড থেকে আসন সমঝোতা নিয়ে তৃণমূলকে বারে বারে বার্তা দিলেও, অধীর চৌধুরীকে কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে কংগ্রেসের সেই ডাক প্রত্যাখ্যান করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী রাহুল গান্ধীর ভারত ন্যায় যাত্রা পশ্চিমবঙ্গে এলেও বামেরা পাশে থাকলেও রাহুলের পাশে দেখা যায়নি ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম বড় শরিক তৃণমূলকে। পাল্টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে দেন, তাঁর রাজ্যে রাহুল ন্যায় যাত্রা করলেও, কার্যত তাঁকে সেই কর্মসূচীতে ডাকাই হয়নি, যদি ও তা আদৌ সত্যি কিনা, সে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, রাজ্য কংগ্রেস মমতার বিরোধীতার রাস্তায় হাঁটলেও, সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে হাঁটতে দেখা যায় কংগ্রেস হাইকমান্ডকে। ন্যায় যাত্রার শুরু থেকে খোদ রাহুল গান্ধী, জয়রাম রমেশদের গলা তে তৃণমূল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঢালাও প্রশংসা শোনা যায়। এমনকী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছাড়া ইন্ডিয়া জোট কার্যত অসম্ভব বলেও বার্তা দেন খোদ রাহুল। যদিও বাংলায় একাধিক সভা থেকে কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ শানাতে থাকেন মমতা। একতরফা ঘোষনা করে দেন রাজ্যের, ৪২ আসনে একাই লড়বে তাঁর দল। জানিয়ে দেন কংগ্রেসের সাথে কোনো আসন সমঝোতা নয়। প্রথম দিকে এ নিয়ে চুপ থাকলেও নেত্রীর পথে হেঁটে তিনিও কংগ্রেসকে কাঠগড়ায় তুলে আসন সমঝোতাতে ‘না’ করে দেন। অন্য দিকে জোট হবে না ধরে নিয়ে ইতিমধ্যেই বামেদের সাথে আসন সমঝোতার ফর্মুলা তৈরী করে কথা অনেকটাই পাকা করেছেন অধীর চৌধুরীরা। বিধান ভবনকে রাজ্যে ১২ টি আসন ছাড়তেও রাজি সেলিম- সুজনরা।
তবে শুধু বাংলায় নয়, একই সমস্যা দেখা যায় পাঞ্জাব, দিল্লী, উত্তরপ্রদেশ এর মতো রাজ্যে, কোথা ও আপ বা কোথাও সমাজবাদি পার্টির সাথে আসন সমঝোতা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়।
তবে পাঞ্জাব এ সমস্যা না মিটলেও দিল্লী, গোয়া,গুজরাট, অসম, চন্ডিগড়ে আম আদমি পার্টি এবং কংগ্রেসের মধ্যে আসন সমঝোতা প্রায় চূড়ান্ত বলেই সূত্রের খবর। অপরদিকে উত্তর প্রদেশে অখিলেশ এর সাথে প্রথমে জোট নিয়ে সমস্যা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত মুলায়ম পুত্রের সাথে কথা বলে আসন রফা চূড়ান্ত করছেন রাজীব তনয়া। এআইসিসি সূত্রে খবর, ইন্ডিয়া জোট দুর্বল হয়ে আখেরে বিজেপির ফায়দা হোক তা কোনো ভাবেই চাইছেন না সোনিয়া- রাহুল- প্রিয়াঙ্কা। আর সেই ফর্মুলাতেই শেষ পর্যন্ত বাংলায় ফের জোটের সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে বলে খবর। অপরদিকে, একদিকে সন্দেশখালি, অপরদিকে দুর্নীতি থেকে আবাসন এই ধরনের একাধিক ইস্যুতে লাগাতার বিজেপিরর চাপ এর পাশাপাশি ইন্ডিয়া জোটে কার্যত একা হয়ে পড়া তৃণমূলও এখন কংগ্রেসের সাথে জোটে রাজী বলে খবর। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, লাগাতার দুর্নীতির অভিযোগে পাশাপাশি সন্দেশখালি বা অন্যান্য ইস্যুতে সরকারের প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে, অপরদিকে সংখ্যালঘু ভোট ও লোকসভা নির্বাচনের রাজ্যের শাসক দল হারাতে পারে বলে আশঙ্কা। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই তৃণমূল। এর ওপর কংগ্রেস হাই কমান্ড একাধিকবার আসন সমঝোতার বার্তা দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করে ইন্ডিয়া জোট থাকা বা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্নের মুখে তৃণমূল।
অন্যদিকে, সমাজবাদী পার্টি, আম আদমি পার্টি সহ ইন্ডিয়া জোটের বাকি শরিকদের সাথে রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেসের সাথে আসনরফা চূড়ান্ত হওয়ার ফলে একলা চলতে গিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের কার্যত একা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হচ্ছে বলেও মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তৃণমূল সূত্রে খবর, সব দিক খতিয়ে দেখে সুর নরম করছে জোড়াফুল শিবির। অর্থাৎ কংগ্রেসের সাথে জোটে রাজী তৃণমূল। দিল্লী সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই কেজরিওয়াল, তেজস্বী যাদব, স্ট্যালিন এর মতো নেতারা নিজেরা কথা বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। এমনকী গাড়ি এক্সিডেন্টে পায়ে আঘাত পাওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টেলিফোন করে খোঁজ খবর নেন সোনিয়া গান্ধী। আর সেখানেই দুই নেত্রীর সাথে আসন সমঝোতা নিয়ে কথা হয়, সূত্রের আরও খবর, চলতি মাসেই ‘ ব্যক্তিগত’ কাজে কলকাতা এলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। কথা হয় আসন সমঝোতা নিয়ে। যার নিট ফল, রাজ্যে কংগ্রেসের সাথে আসন সমঝোতার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া। সূত্রের খবর, ৮ আসনের দাবী জানালেও শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসকে ৫ টি আসন ছাড়তে রাজি তৃণমূল। দার্জিলিং, রায়গঞ্জ,
মালদহ উত্তর বা পুরুলিয়া, মালদহ দক্ষিণ, বহরমপুর লোকসভা আসনে ইন্ডিয়া জোটের পক্ষ থেকে কংগ্রেসকে আসন ছাড়তে পারে তৃণমূল। পাশাপাশি জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ লোকসভা আসনে তৃণমূলের সঙ্গে ‘বন্ধুত্বপূর্ন’ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। তবে বামেদের সাথে কোনও সমঝোতায় তৃণমূল যাবে না বলে ইতিমধ্যেই কংগ্রেসকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। তবে শেষ পর্যন্ত সত্যি যদি জোট হয়, কাহিনী মে টুইস্ট আসে, ধরে নিতে হবে রাজনীতিতে অসম্ভব বলে আসলেই কিছু নেই।