
কুশল চক্রবর্তী
সদ্য প্রকাশিত রিসার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট আমাদের আবার বোঝাল যে ভারতীয় মুদ্রা বাবস্থার আরও অনেক কিছু করার আছে। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর, বিমুদ্রাকরণের সময় যে কথাগুলো ঢাকঢোল পিটিয়ে বলা হয়েছিল তার অনেক হিসাবই এখন মিলছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিমুদ্রাকরণের ঘোষণায় যে সব উদ্দেশ্যের কথা বলেছিলেন, দিন যত যাচ্ছে তাতে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। বিমুদ্রাকরণের ঘোষিত উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান অংশ ছিল নগদ টাঁকার পরিমান কমিয়ে এনে অর্থনীতিতে আরও বেশী করে ডিজিটাল লেনদেন চালু করা, নকল টাকাকে বাজার থেকে নির্মূল করা আর অর্থনীতিতে কালো টাকার প্রভাব কমিয়ে আনা।
আসুন দেখা যাক, এবারের আরবিআই রিপোর্ট কি বলছে :
২০১৬ সালের ৮ নভেম্বার যখন বিমুদ্রাকরণ ঘোষিত হয়েছিল, তখন ভারতের বাজারে
প্রচলিত নগদ টাকার পরিমান ছিল ১৭.৭৪ লাখ কোটি টাঁকা। আর আজ সেই টাকার পরিমান এসে দাঁড়িয়েছে ৩৬.৯ লক্ষ কোটি টাকায়। আর গতবছর তা ছিল ৩৫.৫৪ লক্ষ কোটি টাঁকা।
অর্থাৎ কিনা প্রতিবছরই নগদ টাকার পরিমান অর্থনীতিতে বেড়েছে। অবশ্য ডিজিটাল লেনদেন যে বাড়েনি তা নয়, নিঃসন্দেহে তা আনেক খানি বেড়েছে। কিন্তু ডিজিটাল লেনদেন বাড়ার পরও রিসার্ভ ব্যাংকে অনেক বেশী টাকা ছাপতে হয়েছে নগদ অর্থনীতিকে ঠিক রাখতে। এটা ঠিকই যে দেশের অর্থনীতিতে জিডিপি বাড়লে নগদ টাকার চাহিদা বাড়ে। কিন্তু সেটা নিশ্চয়ই খেয়াল রাখা উচিত ছিল বিমুদ্রাকরণের ঘোষণার সময়। আর নগদের চাহিদা বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে যে পরিমান ডিজিটাল লেনদেন বাড়ার আশা করা গিয়েছিল তা হয়নি। কারণ সারা দেশ জুড়ে ডিজিটাল চোরদের রমরমার জন্য। সরকার বাহদুর কি সাধারণ মানুষকে ডিজিটাল ফ্রড মুক্ত হবার মত কোনও ভরসা দিতে পেরেছন ? মনে তো হয়না।
এবার আসা যাক নকল নোটের কথায়। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় ছিল দেশেনকল নোটের কারবার নির্মূল করার কথা। এবারের রিসার্ভ ব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, উদ্ধার করা নকল নোটের সংখ্যা গত বছরের ২,২২,৬৩৯ থেকে কমে এই বছরে ২,১৭,২৯৬ এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু শুধু ৫০০ টাকর নোটেই নকল নোটের মূল্য গতবারের ৪.২৮ কোটি টাঁকা থেকে এ বছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৮৮ কোটি টাকায়। ২০০ টাকার নকল নোটের সংখ্যাও বেড়েছে। কমে গেছে ১০. ২০. ৫০, ১০০ ও ২০০০ টাকায় নকল নোটের সংখ্যা। আর বাজারে ১০ টাকা, ২০ টকা, ৫০ টাকা বা ১০০ টাকার বিশেষ চলাচল থাকলে তো নকল নোটের কারবারিরা একাজে প্রলুব্ধ হবে। এখন বাজারে ১০ টাকা বা ২০ টাকা বা ৫০ টাকার নোটই পাওয়া যায় না। তা সে নকল করবে কে ?
এবার আশা যাক কালো টাকর কথায়। কোনও অর্থনীতিতে কী পরিমান কালো টাকা আছে, তার সঠিক পরিমান নির্ধারিত করা খুব কঠিন কাজ। তবে ওয়াকিবহাল মহল বলে থাকে যে, ভারতীয় অর্থনীতিতে ২০ ত্থেকে ৪০ শতাংশের মতো কালো টাকা হয়ত আছে। কিন্তু আমজনতা দেখতে পায় নানা গনমাধ্যমে, হাজার হাজার পোড়া টাকা, বাক্স বাক্স ৫০০ টাকার নোট রয়েছে দেশের বিভিন্নস্থানে। সন্দেহ করা হয়, রাজনীতির সঙ্গে জড়িত মানুষ বা সরকারি উচ্চপদে আসীন মানুষ, এমনকি বিত্তশালী লোকও নাকি এর সাথে সম্পর্ক আছে ? এরপরও কি বলতে হবে কালো টাকার পরিমান এদেশে কমে যাচ্ছে ? তাহলে ৮ নভেম্বর ২০১৬ সালের বিমুদ্রাকরণের সেই দুঃসহ দিনগুলোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না কি ?