
সুমিত চৌধুরী: নিঃসন্দেহে সন্দেশখালি শাসক তৃণমূলের জন্য বিপদ সংকেত। সন্দেশখালি নিশ্চয়ই নন্দীগ্রাম হচ্ছে না।নন্দীগ্রামের প্রতিরোধের পর্যায় ছিল অনেক বেশি উঁচুতে। আক্রমণ ছিল অনেক বেশি সংগঠিত। প্রতিরোধের তীব্রতা ও ছিল তার থেকে বেশি। রাজনৈতিক এবং সামরিক উভয় অর্থে।কিন্তু তা সত্ত্বেও সন্দেশখালি শাসকদলের কাছে বিপদ ঘন্টা।সন্দেশখালি একটা বিষয় সামনে এনেছে। নিচুতলার মানুষজনযদি শাসকদলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সেটাও কোন প্রান্তিক জায়গায় ।তার রাজনৈতিক অভিঘাত থাকে অনেক বেশি।
গত কয়েক দশক ধরে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মানচিত্রের দিশা বদল কিন্তু শুরু হয়েছে গ্রাম থেকে। নকশালবাড়ি থেকে বামফ্রন্টের অপারেশন বর্গা সেখান থেকে সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম। ১৯৯৮ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে একাধিক জায়গায় তৃণমূলের উত্থান বুঝিয়ে দিয়েছিল গ্রামাঞ্চল ও সিপিএমকে চ্যালেঞ্জ করবার মত শক্তি মাথা তুলছে। রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ২০০০ সালের এপ্রিল নাগাদ বামফ্রন্ট সেই সমস্ত এলাকা কবজা করেছিল।
কিন্তু কেশপুর পিংলা গড়বেতা গোঘাটের আঞ্চলিক প্রতিরোধগুলো বুঝিয়ে দিচ্ছিল নিম্নবর্গের মানুষ শাসক দলকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
অবস্থা এমন হয়েছিল যে বিজেপি তৃণমূল কম্বাইনকে ঠেকাতে সিপিএমকে বহু জায়গায় মাওবাদীদের সঙ্গে হাত মেলাতে হয়েছিল। যে মাওবাদীরা পরবর্তীকালে সিপিএমের বিরুদ্ধে বন্দুক ঘুরিয়ে দেয় বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুলে।মা মাটি মানুষের তৃণমূল সরকারকে ক্ষমতায় এনেছিলোসিঙ্গুর নন্দীগ্রামের সংগ্রাম।লালগড়ের সংগ্রাম ও সেই ক্ষেত্রে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছিল।তবে নন্দীগ্রামের তুলনায় সন্দেশখালির সামরিক প্রতিরোধের প্রস্তুতি অনেক কম হলেও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই কেন্দ্রে তৃণমূলের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়া অশনি সংকেত । বিগত নির্বাচনে সন্দেশখালি লাগোয়া ভাঙ্গড় কেন্দ্রটি তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছে। সেখানে জিতেছে মূলত সংখ্যালঘুদের দল আই এস এফ।
স্বাভাবিকভাবে এই ধরনের এলাকা গুলিতে প্রভাবশালী আঞ্চলিক নেতারা যদি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পুলিশ আধা সামরিক বাহিনী ঢুকিয়ে যদি তাদের প্রোটেকশান দিতে হয় তাহলে বুঝতে হবে রাজনৈতিকভাবে সেটা অশনি সংকেত।দ্বিতীয় সমস্যাটা হচ্ছে যা খবর পাওয়া যাচ্ছে গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের এরকম বিভিন্ন মাপের শাহজাহান গড়ে উঠেছে। যেকোনো দলের রাজনৈতিক ভিত্তি ধসিয়ে দিতে এই ধরনের লুটেরা নেতারাই যথেষ্ট ।