
স্পোর্টস ডেস্ক : কলিঙ্গ সুপার কাপে অভিষেক একেবারেই ভাল হল না মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের। আইএসএলের প্লে অফে খেলা নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি বৃহস্পতিবার তাদের ৬-০য় হারায়। মরক্কোর বিধ্বংসী ফরোয়ার্ড আলাদিন আজারেই, যাঁকে আইএসএলে কার্যত আটকে রাখতে সমর্থ হয়েছিল সাদা-কালো বাহিনী, সেই নর্থইস্টের গোলমেশিন এই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন।
বৃহস্পতিবার ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে ডুরান্ড কাপ জয়ীদের সামনে কার্যত আত্মসমর্পণ করেন কলকাতার দলের ফুটবলাররা। সারা ম্যাচে তারা দু’টির বেশি শট গোলে রাখতে পারেনি। নর্থইস্ট সেখানে আটটি শট গোলে রাখে এবং ছ’টি গোল করে। তাদের আধিপত্যের কাছে এ দিন মাথা তুলেও দাঁড়াতে পারেনি মহমেডান। যেটুকু আক্রমণে উঠেছে তারা, তার বেশিরভাগটাই ছিল রবি হাঁসদার উদ্যোগে। তাঁর একটি দূরপাল্লার শট ক্রসবারে লেগে ফিরেও আসে। দলের অন্যান্য ফরোয়ার্ডরা তেমন কিছুই করতে পারেননি। নর্থইস্টের দাপুটে, আক্রমণাত্মক ফুটবলের সামনে মাথা নত করতে বাধ্য হয় মহমেডান। আলাদিন, গিলেরমো, আলবিয়াখ, জিথিন-দের ঘন ঘন আক্রমণে পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে তারা। হতাশ হয়ে ম্যাচের শেষ মুহূর্তে প্রতিপক্ষকে পেনাল্টিও ‘উপহার’ দেন সাদা-কালো বাহিনীর তরুণ গোলকিপার শুভজিৎ ভট্টাচার্য। এই পেনাল্টি থেকেই হ্যাটট্রিকের গোলটি করেন আইএসএলের গোল্ডেন বল ও বুট জয়ী আলাদিন আজারেই।
এ দিন ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই মহমেডানের রক্ষণের দুর্বলতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন জিথিন এমএস। তাঁর গোলে নর্থইস্ট এগিয়ে যাওয়ার পর ১৮ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়ান। প্রথমার্ধেই দলকে তৃতীয় গোল এনে দেন নেস্টর আলবিয়াখ।
দ্বিতীয়ার্ধেও তাদের দাপট বজায় ছিল। ৫৭ মিনিটের মাথায় স্কোর ৪-০ করেন ফের আলাদিন। ৬৬ মিনিটের মাথায় গিলেরমো হিয়েরো পাঁচ নম্বর গোলটি করেন এবং সংযুক্ত সময়ে পেনাল্টি থেকে হ্যাটট্রিকের গোলটি করে ম্যাচের সেরার পুরস্কারো জিতে নেন মরক্কোর গোলমেশিন। শুধু তিন গোল করেননি, একটি গোলে অ্যাসিস্টও করেন তিনি।
অর্থাৎ, গড়ে ১৫ মিনিট অন্তর একটি করে গোল হজম করে মহমেডান এসসি, যা তাদের গৌরবময় ইতিহাসের সঙ্গে একেবারেই মানানসই হয়নি। এ বারের আইএসএলে ভাল শুরু করেও ক্রমশ যে ভাবে পিছিয়ে যায় তারা, শেষ পর্যন্ত লিগ তালিকায় সবার নীচে থেকে অভিযান শেষ করে তারা, এ দিনও সেই শোচনীয় পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা বজায় ছিল।
তৃতীয় মিনিটের মাথায় নেস্টর আলবিয়াখের ক্রসে ছ’ গজ বক্সের ভিতর থেকে গোল করেন জিথিন। আলাদিন খাতা খোলেন ১৮ মিনিটে, গিলেরমোর স্কোয়ার পাসে বক্সের মাথা থেকে গোল করে। জিথিনের স্কোয়ার পাস থেকে গোল করে দলকে বিরতিতে তিন গোলে এগিয়ে রাখেন আলবিয়াখ।
বিরতির পর তাদের আক্রমণের তীব্রতা আরও বাড়ে। থই সিংয়ের একটি গোলমুখী শট মহমেডান গোলকিপারের হাত থেকে ছিটকে আসে আলাদিনের পায়ে। প্রায় ফাঁকা গোল পেয়ে তিনি জালে বল জড়াতে কোনও ভুল করেননি। ৬৬ মিনিটের মাথায় গিলেরমোর সাহায্যের প্রতিদান দেন আলাদিন। তাঁর পাসেই দলের পঞ্চম গোলটি করেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। এর পরেই হ্যাটট্রিক পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন আলাদিন। কিন্তু মহমেডান ডিফেন্ডাররা তাঁকে সমানে আটকে রাখেন।
সংযুক্ত সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে অবশ্য আলাদিনকে সেই সুযোগ করে দেন শুভিজৎ। গোলমুখী আলাদিনকে অবৈধ ভাবে বাধা দিয়ে তাঁকে প্রায় পেনাল্টি ‘উপহার’ দেন অনভিজ্ঞ তরুণ গোলকিপার। এই সুযোগ কাজে লাগাতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি মরক্কান তারকা।
বুধবারই তিনটি কোয়ার্টার ফাইনালের লাইন-আপ নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। শনিবার বিকেলের ম্যাচে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট খেলবে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে। ওই দিনই সন্ধ্যায় এফসি গোয়া ও পাঞ্জাব এফসি মুখোমুখি হবে দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে। রবিবার আই লিগের সফল দল ইন্টার কাশি ও মুম্বই সিটি এফসি একে অপরের মুখোমুখি হবে সেমিফাইনালে ওঠার দৌড়ে। ওই দিনই সন্ধ্যায় নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি খেলবে জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে।