
তাপস মহাপাত্র : বাজারে গিয়ে যাঁরা মাথা গরম করেন তাঁদের একটা স্বস্তির খবর দিয়েছে জাতীয় পরিসংখ্যান দফতর। বিষয়টা যেন ওদের চেয়ে আমরা ভালো এমন গোছের। ভুক্তভুগিরা ভালো করেই জানেন, মাছ, মাংস, সবজি সহ যেকোনো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসে কী লাগাম ছাড়া বাজারদর। বহুদিন রসনাতৃপ্তির চেয়ে বিরক্তিই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোজনরসিক বাঙালির। প্রশ্ন একটাই, উত্তরও একটাই। সরকার কি করছে কিংবা সরকারের জন্যই বাজার আগুন। তা যে এক্কেবারে মিথ্যে তা নয়, আড়তদার বা ডিস্ট্রিবিউটারের উপর বহিরাগত আর্থিক চাপ অনেকক্ষেত্রে বাজারকে প্রভাবিত করে। বাড়তি খরচের ভার এসে পড়ে পণ্যদ্রব্যের উপর। ফলে তার বাজার মূল্য চোকাতে হয় ক্রেতাদের। বাজার দরের এই বাড়বাড়ন্তের জন্য দায়ী এই ফোড়ে কালচার। এর মধ্যেও বাঙালির কাছে এটাই স্বস্তির যে বাজার দরের ক্ষেত্রে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে অনেক কম। কারণ কেরলের যেখানে ৬.৭৬ শতাংশ, তুলনায় বাংলার ৩.৩৮ শতাংশ।
এই মুদ্রাস্ফীতিই হল দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সাধারণ মানুষের কাছে সরকার জনদরদী হতে পারছে কিনা তার অনেকটাই নির্ভর করে বাজার দরের উপর। তাই দেশের লাগাম ছাড়া মূল্যবৃদ্ধির সূচক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার চেষ্টা চালাতে হয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে। খুব সম্প্রতি খুচরো মুদ্রাস্ফীতির যে সূচক প্রকাশ করেছে কেন্দ্র তাতে দেখা যাচ্ছে, অনেক রাজ্যের চেয়ে এ রাজ্যের বাজারের উত্তাপ তুলনামূলক ভাবে কিছুটা কম।
১২ ফেব্রুয়ারি খুচরো মুদ্রাস্ফীতি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। তাদের প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, জানুয়ারি মাসে খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ৪.৩১ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরের নিরিখে খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার কমেছে ৯১ বেসিস পয়েন্ট। যার ফলে কিছুটা সস্তা হয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর বাজার। খুচরো মুদ্রাস্ফীতির এই হার অঞ্চল বিশেষে আলাদা হয়ে থাকে। স্থানীয় কর, পরিবহনের খরচ, ও অন্যান্য কারণ মুদ্রাস্ফীতিকে প্রভাবিত করে।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারিতে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় খুচরো মুদ্রাস্ফীতির ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে রয়েছে কেরল। মূল্যবৃদ্ধির সূচক ছিল ৬.৭৬ শতাংশ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে ওডিশা এবং ছত্তীসগঢ়। ওই দুই রাজ্যে মুদ্রাস্ফীতির হার যাথাক্রমে ৬.০৫ শতাংশ এবং ৫.৮৫ শতাংশ। তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে হরিয়ানা, ৫.১ শতাংশ এবং বিহারে ৫.০৬ শতাংশ। কর্নাটক, তামিলনাড়ু এবং উত্তরাখণ্ডের মূল্যবৃদ্ধির সূচক ছিল ৫.০৩, ৪.৯৪ এবং ৪.৮৯ শতাংশ।
এই তালিকায় সবার নিচে রয়েছে দিল্লি, সূচক নেমেছে ২.০২ শতাংশে। দিল্লির ঠিক উপরে রয়েছে তেলঙ্গানা, মুদ্রাস্ফীতির হার ২.২২ শতাংশ। জানুয়ারিতে মহারাষ্ট্র, রাজস্থান এবং গুজরাতের খুচরো মুদ্রাস্ফীতির সূচকে সাড়ে তিন থেকে চার শতাংশের মধ্যে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির সূচক কম থাকা রাজ্যের তালিকায় নাম আছে ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের। এই দুই রাজ্যে মুদ্রাস্ফীতির হার যথাক্রমে ২.৫৬ এবং ৩.৩৮ শতাংশ বলে জানা গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নিজের রাজ্য গুজরাতের খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় বেশি, ৩.৮৮ শতাংশ। শহরাঞ্চলের খুচরো মুদ্রাস্ফীতির নিরিখে শীর্ষস্থানে রয়েছে বিহার। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় জায়গায় রয়েছে কেরল ও উত্তরাখণ্ড। এক্ষেত্রে দিল্লি কিন্তু সবার নিচে, ১.৯৬ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলের খুচরো মুদ্রাস্ফীতির সর্বনিম্ন হার দেখা গিয়েছে আদিবাসী অধ্যুষিত ঝাড়খণ্ডে, মাত্র ১.৮৫ শতাংশ।
উল্লেখ্য, ভোক্তা খাদ্য মূল্য সূচকের উপর ভিত্তি করে খাদ্যে মুদ্রাস্ফীতির হার হিসাব করে সরকার। এ বছরের জানুয়ারিতে যা ছিল ৬.০২ শতাংশ। জাতীয় পরিসংখ্যান দফতরের এই হিসেব থেকে একটাই পাওয়া, অনেকের চেয়ে বাংলার মানুষ অনেকটাই ভালো আছেন। দেশের বেশিরভাগ রাজ্যের বাজার আরও চড়া। অন্তত এই ভেবে আর মাথা গরম নয়।