
বিপ্লব দাশ : প্রাসঙ্গকিক ভাবেই এবারের রাজ্য বাজেটের দিকে বিশেষ নজর ছিল রাজ্যবাসীর। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও অবশ্যই বিরোধী শিবিরের কাছে রাজ্য রাজনীতির কৌশলগত কারণে এই বাজেটের গুরুত্বও ছিল অপরিসীম। যেহেতু ২৬-এ ভোট, তার আগে এটাই মমতার পূর্ণ বাজেট। ফলে এর মধ্য দিয়েই মমতা আগামী নির্বাচনে কোন পথে হাঁটতে চাইছে তার একটা আভাস থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর সেটাই করে দেখালেন তৃণমূলনেত্রী।
বাজেট বলছে, গ্রামীণ ভোটারই তাঁর পাখির চোখ। এক্কেবারে ৮০/৯০-এর দশকে সিপিএমের ফর্মুলায় তিনিও যে গ্রাম দিয়ে শহর ঘিরতে চাইছেন তার একটা গাঢ় অভীপ্সা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাই রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের ৪ শতাংশ মহার্ঘভাতা বাড়িয়ে মূলত মধ্যবিত্ত শহুরে জনজীবনে খানিক প্রলেপ দিলেও, বাজেট জুড়ে প্রাধান্য পেয়েছে গ্রামোন্নয়নই । গ্রান্মীণ রাস্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আশা-শ্রমিক, নদীবন্ধন, গঙ্গাসাগর সেতু, সুফল বাংলা স্টল,ধান কেনার জন্য নতুন কেন্দ্র…… যেন মাটি জীবনের গন্ধ ছড়িয়ে আছে বাজেট প্রস্তাবে।
মমতার মতো এ দেশের এক দুঁদে এবং বিচক্ষণ রাজনীতিবিদের কাছে যে মাটিই শক্তির উৎস তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তাই কোনো চাকচিক্যের বালাই নেই, এক্কেবারে গ্রামবাংলার প্রাণকেই তিনি ছুঁতে চেয়েছেন। গত কয়েকটি উপনির্বাচনের দিকে চোখ রাখলে দেখা যাবে এর সত্যতা। মমতা যে আগেই ২৬-এর সেমিফাইনাল সেরে নিয়েছেন তা বাজেটের অভিমুখ দেখলে বুঝতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু কেন এই গ্রামমুখীতা ? এর একটা বড় কারণ বোধ হয় আরজি কাণ্ড পরবর্তী পরিস্থিতি। বাংলার মানুষ এই ইস্যুতে যে স্বতস্ফূর্ত জনজাগরণ দেখেছে তা সবদিক থেকে ঐতিহাসিক। আর তার রোষ এসে পড়েছে রাজ্য সরকারের উপর, স্পষ্ট করে বললে তা ক্ষমতাসীন দলের উপর। এর সঙ্গে আছে নানান কেলেঙ্কারি জনিত অভিযোগ। ফলে ভোট এলে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা একটি সরকারের বিরুদ্ধে যে অপশাসনের হাওয়া বইবে এট অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তা যতটা শহরাঞ্চলে, অতটাই কি গ্রামবাংলায় ? উপনির্বাচনগুলির ফলাফলেই মমতা নিশ্চয়ই বুঝে নিয়েছেন ২৬-এর ভোটে লড়াইটা কোথায় সুবিধাজনক। এবারের বাজেটে রয়েছে তারই প্রচ্ছন্ন উত্তর।