
বিপ্লব দাশ : নারীদিবস। এটাও কী ক্যালেন্ডারের শুধুমাত্র একটা দিন ! কয়েকটি সভা, কিছু আলোচনা, সমাজমাধ্যমে কিছু পোস্ট, ব্যস ! নারী দিবসের এটাই কী তাৎপর্য ! নারীর অধিকার নিয়ে ১৬৮ বছরের অধুনা ইতিহাসে পরে আসছি। তার আগে আমাদেরই পুরাকালে মেলে নারী অধিকারের মহান উচ্চারণ। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে। পরবর্তীকালে আমরা যা পাই “অভিজ্ঞানাম শকুন্তলম”-এ। ফলে পৃথিবীর কাছে ভারতই নারীর অধিকারের মুখ। আর সেই ভারতই এখন বিশ্বে নারী নিগ্রহের তালিকায় উচ্চস্থানে। এর কারণ কি, তা কি আমাদের খুব অজানা ?
অধুনা নারী জাগরণের ইতিহাসে আমরা দেখে থাকি ১৮৫৭ সালে আমেরিকার নিউ ইয়র্কের একটি প্রতিবাদী মিছিল, সেবার মজুরির বৈষম্য দূরীকরণ এবং কাজের ঘন্টা নির্দিষ্ট করার দাবি নিয়ে নিউ ইয়র্কের পথে নেমেছিলেন আমেরিকার নারী শ্রমিকরা। আন্দোলনরতা মহিলাদের উপর মার্কিন শাসকের লেঠেলবাহিনীর দমন পীড়নের ঘটনা আজও মানব ইতিহাসে একটা কালাদিন হয়ে আছে। এর প্রায় পঞ্চাশ বছর পর প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে সমানাধিকার ও সুরক্ষার দাবিতে নারী আন্দোলন এগানোর শপথ নেয় সেই নিউ ইয়র্কে। ১৯০৯ সালের সেই সমাবেশের নেতৃত্বে ছিলেন সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন। তাঁরই প্রস্তাব ছিল ৮ মার্চকে নারীদিবসা হিসেবে যাতে পালন করা হয়। যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলে ১৯৭৫ সালে।
রাষ্ট্রসংঘের স্বীকৃতির ফলে নিশ্চয়ই সম্মানিত হয়েছে বিশ্ব নারীসমাজ। সচেতনতা বাড়ছেও নিশ্চয়ই। কারণ এই দিনটির লক্ষ্য- মহিলাদের নিরাপত্তা, তাদের কর্তৃত্ব এবং স্বায়ত্তশাসনকে স্বীকৃতি দেওয়া। বিশেষ করে এই দিনটির মাধ্যমে যাতে সমাজে নারীদের বিরুদ্ধে কুসংস্কার ও বৈষম্য দূর করার সচেতনতা বাড়ে। উদ্দেশ্য মহৎ নিঃসন্দেহে। কিন্তু বাস্তবে আমরা কোথায় দাঁড়িয়েছি। আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, শাসন, রাজনীতি, বিচার, বিবেচনার মতো গনজীবনের স্রোত বয়ে চলেছে সেই অভয়া, কামদুনি, আরজি করের পথ ধরে। কবে ঘুরে দাঁড়াবে পৃথিবীর সুহৃদয় মুখ ! মানবতা মানে তো নারী পুরুষের সম্মিলিত প্রবাহমানতা।