
ওঙ্কার ডেস্ক : সন্ত্রাসবিরোধী কর্মসূচিতে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করতে যে প্রতিনিধিদল বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে সফর সেরে দেশে ফিরেছে, তাঁদের সঙ্গে মঙ্গলবার নিজের বাসভবনে মিলিত হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রতিনিধিদলের কাছে তাঁর সন্তুষ্টির কথা তিনি গোপন রাখেননি। বলেছেন, “সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলের মধ্যে এত বিরোধী নেতা পাঠানোয় ভারতের তরফে একটা বড় বার্তা দেয়। ভারত এই বার্তা দিতে সফল হয়েছে যে আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ”। এই ধরণের আরও সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল বিশ্বের দরবারে যাওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

সদ্য বিদেশ থেকে ফেরা প্রতিনিধি দলগুলি বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন দিকে ৩৩টি রাষ্ট্রের রাজধানী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সফর করেছে। প্রধানমন্ত্রী X-এ একটি পোস্টে বলেছেন, “বিভিন্ন দেশে ভারতের প্রতিনিধিত্বকারী বিভিন্ন দলের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছি এবং শান্তির প্রতি ভারতের অঙ্গীকার এবং সন্ত্রাসবাদের হুমকি নির্মূল করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তারা যেভাবে ভারতের কণ্ঠস্বর তুলে ধরেছে তাতে আমরা সকলেই গর্বিত”।
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ইতিমধ্যেই প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেছেন। পাকিস্তানের মদতে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের দৃঢ় অবস্থান জানানোর জন্য তাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। এই প্রতিনিধিদলের অন্যতম নেতৃত্বকারী সদস্য কংগ্রেস নেতা শশী থারুর বলেছেন, নয়াদিল্লি সাতটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে যেখানে ইসলামাবাদ পাঠাতে পেরেছিল মাত্র দুটি প্রতিনিধিদল।

প্রতিনিধিদলের ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রী এতটাই খুশি ছিলেন যে সকলকে নিয়ে এক ঘন্টারও বেশি সময় কাটিয়েছেন। তিনি লনের চারপাশে বিভিন্ন টেবিলে ঘুরে বেড়িয়েছেন, বিভিন্ন দলের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা সকলেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে খোলা মনে কথা বলেন। থারুর বলেছেন, “এটি একটি সুন্দর, প্রাণবন্ত, অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল। আমরা সকলেই তার সঙ্গে অনেক কিছু শেয়ার করেছি। আমরা সকলেই পরামর্শ দিয়েছিলাম যে এধরণের উদ্যোগ আরও ঘন ঘন নেওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই এই ধারণাটি বিবেচনা করছেন বলে মনে হচ্ছে”।

সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন। কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই ৫০ জনেরও বেশি সদস্য নিয়ে গঠিত সাতটি প্রতিনিধি দলের কাজের প্রশংসা করেছে। চারটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ক্ষমতাসীন জোটের সংসদ সদস্যরা। যাঁদের মধ্যে ছিলেন বিজেপির দুজন, জেডি(ইউ)-র একজন এবং শিবসেনার একজন, এবং তিনটির নেতৃত্বে ছিলেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা, কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে এবং এনসিপি(এসপি) এর একজন করে সদস্য। বিজেপির রবি শঙ্কর প্রসাদ এবং বৈজ্যন্ত পান্ডা, কংগ্রেসের শশী থারুর, জেডি(ইউ)-এর সঞ্জয় ঝা, শিবসেনার শ্রীকান্ত শিন্ডে, ডিএমকে-র কানিমোঝি এবং এনসিপি (এসপি)-র সুপ্রিয়া সুলে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে তাদের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জাতীয় ঐক্যের বার্তা তুলে ধরার জন্য কেন্দ্র বহুদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিল। কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর এবং এআইএমআইএম-এর সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মতো নেতারা ক্ষমতাসীন জোটের সদস্যদের সাথে বিদেশে ভারতীয় স্বার্থকে সমর্থন করার জন্য যোগ দিয়েছিলেন। প্রতিনিধিদলের বিশিষ্ট প্রাক্তন সংসদ সদস্যদের মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গুলাম নবী আজাদ এবং সালমান খুরশিদ।
২২ এপ্রিল পাকিস্তান-মদদপুষ্ট জঙ্গিদের পয়েলগাঁওয়ে হত্যালীলা চালানোর পর ৭ মে “অপারেশন সিন্দুর”-এর মাধ্যমে ভারত প্রত্যাঘাত করে। ভারতের সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গি শিবিরগুলি গুঁড়িয়ে দেয়। এই প্রত্যাঘাতে জৈশ-ই-মোহাম্মদ, লস্কর-ই-তৈবা এবং হিজবুল মুজাহিদিনের মতো গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত শতাধিক সন্ত্রাসবাদী নিহত হয়।