
বিপ্লব দাশ : পদত্যাগ নিয়ে জবরদস্ত একটা নাটকের পর ফের জাঁকিয়ে বসেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহম্মদ ইউনূস। পদত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশটা যে তাঁর একটা চেলে দেখার কৌশল ছিল, তা পরিষ্কার হতে বিশেষ সময় নেয়নি। নাটকীয় ভাবে একটা কোমল হুঁঙ্কারের পর সে দেশের সেনাবাহিনীও ঝঞ্ঝাট এড়িয়ে যেতে চেয়েছে। দু’ দিন বাদেই জানিয়ে দিয়েছে, তাঁরা জনগণের সঙ্গে আছেন এবং সরকারের সঙ্গেও তাঁদের কোনো বিরোধ নেই। অথচ বাংলাদেশ জুড়ে অচলায়তন বাড়ছে, আর বাড়ছে বলেই ইউনূসের ক্ষমতায়ন দীর্ঘতর হচ্ছে। কারণ এটাই তিনি চান। পরিস্থিতি যতই অপ্রকৃতিস্থ হবে ততই তাঁর পক্ষে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া সহজ। যুদ্ধ হোক, গৃহযুদ্ধ হোক, রসাতলে যায় যাক, তবু এসবই যেন ইউনূসের পক্ষে সুখকর। তাঁর এই চাওয়াকে আরও বেশি স্বস্তি দিল সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন। কারণ, বাংলাদেশের পরিস্থিতি যতই খারাপ হবে ততই সুরক্ষিত হবে ইউনূসের গদি। তাহলে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা কি এখন বিশ বাঁও জলে ?
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পর এখন ইউনূসের টার্গেট বিএনপি। নির্বাচন যত পিছোবে ততই অস্তিত্বের সংকটে পড়বে বিএনপি। দীর্ঘদিন কোনো কর্মসূচি ছাড়া একটি রাজনৈতিক দল তার প্রভাব, গুরুত্ব এবং গ্রহণযোগ্যতা হারায়। তাই সংস্কার, বিচার বাদ দিয়ে আগে নির্বাচন চাইছে বিএনপি। এমনিতে আওয়ামী লীগের নেতানেত্রী, কর্মী,সমর্থকের বেশীর ভাগই এখন হয় আন্ডারগ্রাউন্ডে, নয় দেশছাড়া কিংবা বন্দীদশায়। একই হাল বামপন্থীদের। বাংলাদেশে রাজনৈতিক কন্ঠ বলতে কার্যত বিএনপি। তার উপর শারীরিক কারণে দলনেত্রী খালেদা জিয়া আর আগের মত সক্রিয়ও নন। ইউনূস যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এবং কথায় কথায় আদর্শ হিসবে যা তুলে ধরেন- সেই “সংস্কার, বিচার, এবং তারপর নির্বাচন”, এর মধ্যেই আছে ইউনূসের প্রকৃত আকাঙ্ক্ষা। এমনিতে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচিত সরকার নেই তাহলে বিচার কে করবে, সংস্কার কে করবে ? এই অবাস্তব পন্থাই ইউনূসের প্রধান অস্ত্র। কারণ এ দুটোই সম্ভব নয়, অতএব নির্বাচনও সম্ভব নয়। এখানেই ইউনূস পুষে রেখেছেন তাঁর প্রাণভোমরা। পুষ্টতা পাচ্ছে তাঁর ক্ষমতায় থাকার অদম্য লিপ্সা।