
শুভাশিস চট্টোপাধ্যায়ঃ ১৫০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম পিছিয়ে গেল দেশে আদম সুমারির কাজ। ভারতের ইতিহাসে প্রথম জনগণনা হয়েছিল ১৮৭২ সালে। তারপর থেকে প্রতি ১০ বছর অন্তর চলে আসছে এই নিয়ম, এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। সামনের বছর দেশে লোকসভা নির্বাচন। সেই যুক্তিতে জনসংখ্যা গণনা এবং সীমানা পুনর্বিন্যাসের কাজ পিছিয়ে দিল কেন্দ্র। প্রসঙ্গত প্রতি ১০ বছর অন্তর দেশে জনসংখ্যা গণনার কাজ করে আরজিআই বা রেজিস্টার জেনারেল অ্যান্ড সেনশাস কমিশন। সেই হিসেবে শেষ জনগণনা হয়েছিল ২০১১ সালে মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়। ২০২১ সালে আদম সুমারি হবার কথা থাকলেও করোনার জন্য তা বাতিল করে কেন্দ্র। ঘোষণা করা হয় জনগণনা করা হবে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই। কিন্তু সেই ঘোষণার সময়ও পিছিয়ে যায়। ২০২১ সালের বাজেটে জনগণনার জন্য বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৩ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ সালের বাজেটে সেই বরাদ্দ ব্যাপক কমিয়ে ১ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা ঘোষণা করে কেন্দ্র। তখন থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে নরেন্দ্র মোদির সরকার কি আদৌ আদম সুমারি করতে ইচ্ছুক তা নিয়ে। এরপরই গতকাল ২ জুলাই কেন্দ্র একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানায় লোকসভা ভোটের আগে জনগণনা এবং এলাকা পুনর্গঠনের কাজ করা সম্ভব নয়। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রতিটি রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের প্রশাসনকে জানানো হয় পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি জারি করা না পর্যন্ত ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে আদম সুমারির কাজ হবে ধরে এগিয়ে চলতে। প্রসঙ্গত গত মে মাসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানান সরকার সংসদে একটা বিল আনার পরিকল্পনা করেছে, যাতে জনসুমারির সময় পরিবারের প্রত্যেক নাগরিকের জন্ম মৃত্যুর পরিসংখ্যান ভোটার কার্ডের তথ্য ডিজিটালি সংগ্রহ করা হবে। কেন্দ্রের যুক্তি এতে উন্নয়ণমূলক প্রকল্পগুলি যথার্থ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। বিরোধীদের অভিযোগ জনগণনার সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পঞ্জী বা NPR কে জুড়ে দেওয়াই লক্ষ্য মোদি সরকারের। এইভাবেই দেশে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তাঁদের ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখতে চাইছে কেন্দ্র। কিন্তু অসমে এই প্রক্রিয়া জোড় ধাক্কা খেয়েছে। ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাদ গেলেও অভিযোগ তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই হিন্দু। কয়েকশো কোটি টাকা খরচ হয়ে গেলেও সমস্যার সমাধান তো হয়ইনি, উল্টে ঝক্কি বেড়েছে মোদি সরকারের। সেই কথা মাথায় রেখে লোকসভা ভোটের আগে আর বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে চান না মোদি অমিত শাহরা। তাই প্রথমে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে এই কাজ হবে বলে ঘোষণা করেও ফের আদম সুমারির কাজ ও সীমানা পুনর্বিন্যাসের কাজ পিছিয়ে দিল নরেন্দ্র মোদির সরকার।