
ওঙ্কার ডেস্ক : সিন্ধু জলচুক্তির অন্তর্গত চন্দ্রভাগা নদীর জল সরবরাহ বন্ধ করল ভারত। সরকারি ভাবে বলা হচ্ছে, জলধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য কাশ্মীরের দু’টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তথা বাঁধের জলাধার পরিষ্কারের কাজ শুরু হল। এত দিন সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তির ফলে বাঁধের জলাধার সংস্কারের ক্ষেত্রে একাধিক বাধা ছিল। পাকিস্তানের অনুমতি ছাড়া এই কাজ করা যেত না। এখানেই নানান অজুহাতে সংস্কারের কাজে বাধা দিয়ে চলতো পাকিস্তান।
পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি নাশকতার পর সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে দেওয়ায় এখন আর এই কাজে বাধা নেই। এবার জলধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য কাশ্মীরের দু’টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তথা বাঁধের জলাধার পরিষ্কাকের কাজে হাত দিল ভারত। এই লক্ষ্যে জম্মু-কাশ্মীরের রামবন জেলার বাগলিহার বাঁধের গেট বন্ধ করে দেওয়া হল। ফলে পশ্চিমমুখী চন্দ্রভাগা নদীর জল আর পাকিস্তানের দিকে যেতে পারছে না। অন্যদিকে, ঝিলম বা বিতস্তা নদীর জলও আটকে পড়ছে। জম্মু-কাশ্মীরের বান্দিপুরা জেলার ঝিলমের শাখানদী কিষানগঙ্গা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ থেকেও জল ছাড়া বন্ধ করে দেওয়া হবে।
চন্দ্রভাঙা নদীর জলধারণ ক্ষমতা বাড়াতে সংস্কারের কাজ বলা হলেও, এটা যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের একটি নয়া কূটনৈতিক চাপ, এমনটাই ভাবছে ওয়াকিবহাল মহল। পহলগাম জঙ্গি হানার পরবর্তী সিন্ধু জলচুক্তি রদ করার সময়ই ভারত সরকার জানিয়ে দিয়েছিল চলতি গ্রীষ্মের মরশুমে একফোঁটা জলও দেওয়া হবে না পাকিস্তানকে। প্রায় সপ্তাহখানেক আলোচনা ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রিক পরীক্ষানিরীক্ষার পর ভারত বাগলিহার বাঁধ এবং নিম্ন অববাহিকার স্লুইস গেট বন্ধ করেছে। এর ফলে ৯০ শতাংশ জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে পাকিস্তানের দিকে।
পেহেলগাঁওয়ের বৈস্যরন উপত্যকায় নিরীহ পর্যটকদের ওপর জঙ্গি হামলার ঘটনায় বড় সিধান্ত ভারতের। ভারতের আকাশসীমা থেকে শুরু করে পাকিস্তানের ভিসা বাতিল করে দিয়েছে ভারত। এছাড়াও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাক নাগরিকদের ভারত ছাড়ার নির্দেশ থেকে শুরু করে পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জানা গেছে, দু’টি বাঁধের একটি তৈরি হয় ১৯৮৭ সালে। অন্যটি ২০০৮-২০০৯ সালে। কিন্তু এই প্রথম বাঁধ দু’টির জলাধার পরিষ্কারের কাজে হাত দিল ভারত। চুক্তি স্থগিত, ফলে শর্তগুলি কার্যত গুরুত্বহীন হয়ে যাওয়ায় এই সংস্কারের কাজ সম্পর্কে পাকিস্তানকে জানানোর বালাই নেই ভারতের কাছে। এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে।
এছাড়াও জাতীয় জলবিদ্যুৎ শক্তি কর্পোরেশনের তরফ থেকে আরও জানানো হয়েছে, বাগলিহার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলাধারের পলি তুলে তাতে জলধারণ ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। এই কাজ শুরু হয়েছিল শনিবার, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় এই কাজ এর মধ্যেই শেষ করে ফেলা হয়েছে। শনিবারই উত্তেজনা পরিস্থিতির মধ্যেই পাকিস্তান যুদ্ধ হুমকি দিতে ব্যালেস্টিক দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র আবদালি পরীক্ষামূলকভাবে উৎক্ষেপণ করে। তারপরেই ভারত জলবন্ধের পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি শুরু করে দেয়। এদিকে, কিষাণগঙ্গা বাঁধ ভারতের মেগা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। এটি পশ্চিম হিমালয়ের গুরেজ উপত্যকায় রয়েছে। সেখানেও যুদ্ধকালীন তৎপরতায় জলধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর কাজ চলছে। এর ফলে পাকিস্তানমুখী নিম্ন অববাহিকা স্রোতের জলের সরবরাহ একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকবে বলে মনে করা হচ্ছে।