
বিপ্লব দাশ : কূটনৈতিক যুদ্ধের অন্যতম কৌশলই হল বিরুদ্ধ পক্ষকে সীমা লঙ্ঘনের সুযোগ দেওয়া। তা শত্রু হোক, কিংবা শত্রুর মিত্র। এখন তো আর রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় না, এমন কী রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রেরও নয়। যুদ্ধ হয় কর্যত দ্বিধা বিভক্ত বিশ্বের মধ্যে। তাই কোন শিবিরে তার মুখ্য নির্দেশক রাষ্ট্র বিশ্বের কতটা শক্তি আয়ত্ত্ব করতে পারলো সেটাই হল জয়ের আসল রণকৌশল। এখানেই প্রয়োজন কূটনৈতিক বুদ্ধি, পারদর্শীতা। যা আমরা দেখেছিলাম মহাভারতে। যেখানে ছিল অখণ্ড ভারত গড়ার লক্ষ্যে ধর্মযুদ্ধের ডাক।
যুগ বদলের সঙ্গে উদ্দেশ্যর রূপ বদলেছে। কিন্তু মূল প্রক্রিয়া বদলায়নি, বদলায়নি তার অভীপ্সা। সুরক্ষা ও সার্ভভৌমত্ত্ব বা ভূমির প্রসার প্রধান লক্ষ্য হয়ে চলেছে। ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যে উত্তেজনার আবহ ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে তার মূলেও সেই একই। সন্ত্রাসবাদী হামলা আর পাক অধিকৃত কাশ্মীর। এই খুনখারাপি আর আগ্রাসনের মূল চক্রিদের যথাযোগ্য জবাব দেওয়াই যে মূল উদ্দেশ্য, এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছে ভারত।
যুদ্ধেরও একটা উদ্দেশ্য থাকতে হয়। যা সামনে রেখে গড়ে ওঠে তার মেকানিজম অর্থাৎ শিবির নির্মাণ। যদিও এর মধ্যে অবধারিত ভাবে এসে যায় প্রতিটি পক্ষভুক্তদের একটা প্রচ্ছন্ন স্বার্থ, তা হল বাজার বিস্তার। তাই সামরিক যুদ্ধের ভিতর লোভনীয় পুরের মতো কাজ করে বানিজ্য-যুদ্ধ বা ট্রেড-ওয়ার। এতে আমরা বারুদের গন্ধ পাই না বটে কিন্তু এর প্রভাব কম মারাত্মক নয়। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যে ভাবে বানিজ্য নীতি নিচ্ছেন তা কী এই ট্রেড ওয়ারের সমতুল্য নয় ! অধুনা যুদ্ধনীতির অনেকটাই এই স্বার্থসিদ্ধি নির্ভর। বিশ্ববাজারে দুই প্রধান বেসাতি শক্তি- আমেরিকা ও চিন। ফলে দুই শক্তিধর দেশে যে একই ছাতার তলায় আসবে না তার ইংগিত এখন আর অস্পষ্ট নয়।
তবুও ভারত পাকিস্থানের বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যেহেতু ইস্যু সন্ত্রাস দমন। তাই পাকিস্থান যে সন্ত্রস মদতকারী দেশ এটা প্রমাণ করাই ছিল ভারতের প্রধান দায়। পার্লামেন্ট, কার্গিল, পুলওয়ামা পর পহেলগাঁও.…. দিল্লির মনে হওয়া অবান্তর নয় যে অনেক হল এবার প্রত্যাঘাত অবশ্যম্ভাবী। তার আগে আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে সমীকরণটা নিশ্চিত ভাবে আমেরিকা ও তার সহযোগী বনাম চিন ও তার সহযোগী। ভারত বরাবর একটা ভারসাম্য মেনে চললেও বর্তমান পরিস্থিতে তাকে পক্ষ গড়তেই হচ্ছে। এই পক্ষের মোমেন্টাম নির্ভর করছে ভারতের কূটনৈতিক সাফল্যের উপর।