
বিপ্লব দাশ : আপাতত শান্ত মুর্শিদাবাদ। কিন্তু সাম্প্রদায়িক অশান্তি অনেকটা তুষের আগুনের মতো। উপর থেকে শান্ত মনে হলেও চাপা থাকে তার প্রজ্জ্বলন। ঠান্ডা হতে সময় লাগে। কারণ তার শীতলিকরণের কাজটি সময় সাপেক্ষের। সুরক্ষা, ভরসা, মানসিক স্থিশীলতার মতো অবশ্যম্ভাবী অনুঘটকগুলির কাজ চরিত্রগত ভাবে সুদুর প্রসারী। এমন অবস্থায় উপদ্রুত এলাকায় পরিদর্শকের ভূমিকা হওয়া উচিত এই শীতলিকরণের অনুঘটকের মতো। কিন্তু এ বিষয়ে পরিদর্শকরা কতটা অভিজ্ঞতা পোষণ করেন তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় থাকে। এক্ষেত্রে মানবিক চেতনাকে কোথাও যেন গ্রাস করে রাখে রাজনৈতিক পক্ষপাত। মোটিভেশন আর মোটিভেটেড অনেকটা জল আর তেলের মতো। মেশে না। ফলে দ্বন্দ্ব থেকেই যায়। আর সেখান থেকে যা উদগীরণ হয় তা কখনো কখনো দাহ্য ধর্মীয় বটে। ভুলে গেলে চলবে না সাম্প্রদায়িক অসন্তোষ মুখ দেখে শান্ত হয় না। তাই শীতল-প্রায় তুষের উত্তাপকে কখনো কখনো উস্কে দেওয়ার কাজ করে। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, হিতে বিপরীত।
মার্স্কের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের কথা মনে পড়ে। যেখানে বলা হয়েছিল- এই জগৎ প্রকৃতিগত ভাবে বস্তুময়। যেখানে সকল বস্তুই গতিশীল। এরা পরস্পর সম্পর্কযুক এবং একে অপরের উপর নির্ভরশীল। এই সম্পর্ক ও নির্ভরশীলতার নিয়ম মেনেই জগতের বিকাশ ঘটে। গণতান্ত্রিক ভারত গড়তে গিয়ে বিখণ্ডের মধ্যে যে অখণ্ডতা, যে ভিন্নতার মধ্যে একতার কথা বলা হয়েছে তা কী প্রকৃতির সত্য সন্ধান ছিল না ! বহু জাতি, বহু ধর্ম, বহু ভাষাকে সমান গুরুত্ব দিয়ে যে একত্রিতকরণের অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছিল, সংসদীয় গণতন্ত্র কী এখন তা স্বীকার করছে না ! তাই কি দেখা যাচ্ছে বিভাজন, হিসেব নিকেষ, আঞ্চলিকতা, যার মধ্য দিয়ে প্রাধান্য পাচ্ছে ক্ষমতা দখলের ম্যাজিক ফিগার। বস্তুত সংঘাত এখেনেই। যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ মুর্শিদাবাদ, যেখানে উপলব্ধি করা যায় কাকে বলে দ্বন্দ্বমূলক বিভাজনবাদ।