
ওঙ্কার ডেস্ক: ২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় সাত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন জানাল ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর এবং সেনাবাহিনীর প্রাক্তন কর্নেল প্রসাদ শ্রীধর পুরোহিত। শনিবার বিশেষ এনআইএ আদালতে সংস্থাটি তাদের চূড়ান্ত লিখিত যুক্তি জমা দেয়, যার পৃষ্ঠাসংখ্যা ছাড়িয়েছে ১,৫০০। সংস্থার তরফে ইউএপিএ আইনের ১৬ নম্বর ধারা উদ্ধৃত করে মৃত্যুদণ্ডের আবেদন জানানো হয়েছে।
২০০৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মহারাষ্ট্রের মালেগাঁও শহরে একটি মোটরসাইকেলে রাখা বিস্ফোরকের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ওই ঘটনায় ছয়জন মুসলিম নাগরিকের মৃত্যু হয়, আহত হন ১০০ জনেরও বেশি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহর মালেগাঁও তখন আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে যায়।
তদন্তের শুরুতে সন্দেহের তীর ছিল ইসলামি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোর দিকে। কিন্তু পরবর্তীতে মহারাষ্ট্র অ্যান্টিi-টেররিজম স্কোয়াড (এটিএস) হিন্দুত্ববাদী উগ্রপন্থীদের সম্পৃক্ততার দিকেই ইঙ্গিত করে। পরে এই মামলার তদন্তভার চলে যায় এনআইএর হাতে। তাদের অভিযোগ, অভিযুক্তরা একটি “হিন্দুত্ববাদী ষড়যন্ত্র” করেছিলেন, যার লক্ষ্য ছিল মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ছড়ানো।
এনআইএর দাবি, অভিযুক্তদের উদ্দেশ্য ছিল একটি চরমপন্থী আদর্শ বিস্তার করা। বিস্ফোরণটি ছিল সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত, যার প্রমাণ মিলেছে ফরেনসিক রিপোর্ট, টেলিফোনে আড়ি পাতা কথোপকথন এবং একাধিক সাক্ষীর বয়ানে। এনআইএর মতে, অভিযুক্তরা একটি সুপরিকল্পিত গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করছিলেন।
সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর অবশ্য বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাঁকে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তাঁর সমর্থকরাও একে হিন্দু জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন। তবে এনআইএর বিবরণে সাধ্বী প্রজ্ঞাকে মামলার অন্যতম প্রধান ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মামলাটি এখন বিচারাধীন। বিশেষ আদালত বিশাল প্রমাণ এবং লিখিত যুক্তির পর্যালোচনার পর রায় ঘোষণা করবে। বিচারপ্রক্রিয়া এবং তার রায় যে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক আবহে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে চলেছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ভারতের আদর্শগত সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলা রয়ে গেছে এক কঠিন বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে।