
ওঙ্কার ডেস্ক : সুনীতা মনে করিয়ে দিলেন ২২ বছর আগের এক স্বপ্নভঙ্গের কথা। সেদিনের নাসার বিজ্ঞানীরা আজও ভুলতে পারেন না। এতবছর ধরে যে বেদনা বুকে চেপেছিল, সেখানে যেন মুক্তির বার্তা নিয়ে ২৮৬ দিন পর পৃথিবীতে ফিরলেন সুনীতা উইলিয়ামস। যেন মিশন শেষ পর্যন্ত সেদিনের অনিশ্চয়য়তা দাঁত বসিয়েছিল নাসা স্পেস সেন্টারে।
সেই দুর্ঘটনার স্বাক্ষী ছিলেন সারা পৃথিবীর মানুষ। অন্ধকারের বুক চিরে ছুটে আসছে তিনটে আলোর রেখা। এছাড়া আর কোনো সংযোগ ছিল না। কল্পনা তলিয়ে যাচ্ছেন কল্পনার মধ্যে। সেবার কল্পনা চাওলার কোনো যোগাযোগ ছিল না কলম্বিয়ার সঙ্গে। ফিকে হয়ে আসা আলোর রেখা এক ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার বার্তা বয়ে আনে। গ্রাউন্ড স্টেশনে নাসার বিজ্ঞানীদের দুমড়ানো চোয়ালে প্রগাঢ় হতাশা। এতদিনের এত শ্রম আর স্বপনকে চোখের সামনে শেষ হয়ে যেতে দেখেছিলেন তাঁরা। মহাকাশ অভিযান সেরে পৃথিবীতে ফেরার পথে মাটি থেকে প্রায় দু’লক্ষ ফুট উঁচুতেই দাউদাউ করে জ্বলে যায় মহাকাশযান কলম্বিয়া। আমরা চিরদিনের জন্য হারিয়েছিলাম কল্পনাকে। সুনীতার ফিরে আসার সঙ্গে যেন আবার ফিরে এলো কল্পনাকে হারানোর সেই মর্মান্তিক বিষাদ।
বুধবার ভোর রাতে নাসার লাইভ টেলিকাস্ট অনেকেই দেখেছেন। তা যেন এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হয়ে রইল দর্শকদের কাছে। ভোর ৩টে ২৭, সুনীতাদের নিয়ে ফ্লোরিডার সমুদ্রে অবতরণ করেছে স্পেস এক্স-এর মহাকাশযান। এর পরেই ক্যাপসুল থেকে হাসি মুখে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল সুনীতাদের। তা যেন এক বিশ্বাস্য দৃশ্য। আনন্দে, আবেগে চোখের জল ফেলেছেন অনেকে। যার সঙ্গে মিশেছিল ২২ বছর আগের দিনটিও। ২০০৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে কলম্বিয়ার দুর্ঘটনা যেন আজও বিঁধে আছে। কলম্বিয়ার কন্ট্রোলরুম চোখের জল মুছতে মুছতে দেখেছিল কী ভাবে অনন্ত সমাধি নিলেন সাত সাতজন অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত মহাকাশচারী। মাত্র ৪২ বছরে শেষ হয়ে যায় কল্পনা চাওলার জীবন। জীবনের ৩১ দিন মহাকাশেই কাটিয়েছিলেন তিনি। প্রথম সফল অভিযানের পরে, দ্বিতীয় অভিযান শেষে ফেরার সময় মহাকাশযান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর। কয়েক হাজার মাইল ভ্রমণ করেছেন মহাকাশে। তাই তাঁর মুখেই হয়তো মানায়, “আমি কোনও নির্দিষ্ট দেশের নয়, সৌরজগতের নাগরিক।”
১৯৬১ সালের ১৭ মার্চ হরিয়ানার কার্নালে একটি গোঁড়া পরিবারে জন্মেছিলেন কল্পনা। যে রাজ্যে মেয়েদের জন্মাতে দেওয়া হয় না, জন্মালেও অনার কিলিং হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যে রাজ্যে মেয়ের সংখ্যা কম হওয়ায় একই মেয়েকে পরিবারের পাঁচ ভাই মিলে বিয়ে করার ঘটনা ঘটে, যে রাজ্যে লিঙ্গ বৈষম্য দেশের মধ্যে সব চেয়ে বেশি, সেই রাজ্যে জন্ম নেওয়া একটা মেয়ের মহাআকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখাটাই ছিল অলীক কল্পনা। তাই হয়তো কল্পনা কল্পনাতেই থেকে গেলেন।
এই দুর্ঘটনার পর টানা দু’বছর সব রকমের মহাকাশ অভিযান বন্ধ রেখেছিল নাসা।