
নিজস্ব সংবাদদাতা : “চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া আমাদের ধর্ম”। ঠিক এই ভাষায় সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে চাকরিহারাদের সভায় আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুপ্রিম কোর্টের ৩ এপ্রিলের ঐতিহাসিক রায়ে বাতিল হয়ে যায় ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ এসএসসি প্যানেল। মর্মান্তিক প্রভাব পড়ে প্রায় ২৬,০০০ চাকরিহারার উপর। যার ফলে বহু পরিবারের উপর নেমে আসে বিপুল অনিশ্চয়তা, বাড়তে থাকে মানসিক চাপ ও ক্ষোভ। এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী নিজে আগ্রহী হয়ে চাকরি হারাদের সভায় যোগ দেওয়ার কথা জানান। সেই অনুযায়ী সোমবার, নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত হয় এক বিশেষ সভা।
কিন্তু বৈঠকের আগেই অযোগ্য বনাম যোগ্য: সংঘর্ষ শুরু হয় ইনডোর এর বাইরে। বৈঠকের আগেই তৈরি হয় উত্তেজনা। অযোগ্য ঘোষিত চাকরিহারাদের সভায় প্রবেশ করতে না দেওয়ায় পুলিশ ও চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। যাঁরা প্রবেশ করতে পারেননি, তাঁদের অভিযোগ, “আমরা চাকরি হারিয়েছি, তাও আমাদের কথা শোনার সুযোগ নেই!”
তবে মুখ্যমন্ত্রীর সোজাসাপ্টা বার্তা দিয়েছেন বৈঠক থেকে। তিনি জানিয়েছেন, “আমাদের হৃদয় পাথর নয়। আমরা জেনে শুনে কারও চাকরি খাই না। কারণ, বদলা চাই না, বদল চাই।” সিপিএম জামানাকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “ওদের আমলে চিরকুট দিয়ে চাকরি হতো। কারো চাকরি খাইনি আমি। এছাড়াও ২৬০০০ জনের চাকরি বাতিল হবার জন্য তিনি সিপিএম নেতা এবং উকিল বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য্য কেই দায়ী করেন। বলেন উনি কেন কেস করেছিলেন তাই তো আজ যোগ্য অযোগ্য সবার চাকরি গেল। ওনাকে আইসোলেট করা উচিৎ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “একটা-দুটো ভুল হতেই পারে, কিন্তু তার জন্য হাজারো যোগ্যদের শাস্তি হতে পারে না। আমি বেঁচে থাকতে কোনও যোগ্য প্রার্থীকে চাকরি হারাতে দেব না।” রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকে টেনে এনে মুখ্যমন্ত্রী আরও প্রশ্ন তোলেন, “এই রায়ের পেছনে কি কোনও খেলা নেই? সেই খেলাটা কে খেলল?” তাঁর মতে “শিক্ষাব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার জন্য একটা চক্রান্ত চলছে। ২০২২ সাল থেকে নোংরা খেলা শুরু হয়েছে। এটা কোর্টের দোষ নয়, দোষ ওদের। যাঁরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাঁদের শাস্তি হোক, কিন্তু যোগ্যরা কেন শাস্তি পাবে?”
সর্বপরি মুখ্যমন্ত্রী চাকরি হারাদের আশ্বস্ত করে জানান, “আমরা রিভিউ পিটিশন করব। এসএসসি সমস্ত তথ্য দিয়েছে। আমাদের পক্ষে লড়বেন অভিষেক মনুসিংভি, কপিল সিব্বল, রাকেশ দিবেদি, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা এক ইঞ্চিও পিছোব না।” তিনি আশ্বাস দেন, “টার্মিনেশন লেটার তো পাননি। যান, কাজ করুন। আমরা চিন্তা করেই রেখেছি, যোগ্যদের চাকরি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। দু’ মাসের মধ্যে সব ব্যবস্থা হবে। পাবেনই, যোগ্যরা বঞ্চিত হবেন না।” চাকরি হারানোদের প্রতি তাঁর আবেদন “কারও উস্কানিতে প্ররোচিত হবেন না। মাথার উপর মা-মাটি-মানুষের সরকার আছে। চিন্তা করবেন না। আগে যোগ্যদের সমাধান করি, পরে যাঁরা অযোগ্য প্রমাণিত হবেন, তাঁদের কথাঐ আমি ভাবব। পথ হারালে নতুন পথ খুঁজে পাওয়া যায়।”
সবশেষে চাকরিহারাদের সাহস জাগিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা দেন “আমরা এই কেসটা লড়ব রয়াল বেঙ্গল টাইগারদের মতো। চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া আমাদের ধর্ম।” তবে সুপ্রিম কোর্টের সিলমোহর দেওয়া রায়ের পরে এই মুহূর্তে রাজ্যের শিক্ষা ও প্রশাসনিক মহলে যে অস্থিরতা চলছে, তা প্রশমনের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলবে। তবে হাজারো পরিবারের চোখে এখন একটাই আশা, চাকরি ফিরে পাওয়া।