
নিজস্ব সংবাদদাতা ,কলকাতা : মেছুয়াবাজারের মর্মান্তিক ওগ্নিকান্ডের জেরে শহর জুড়ে একের পর এক ছাদ-রেস্তরাঁয় কোপ পড়তে শুরু করেছে। কলকাতার পরে এ বার রুদ্ধ হচ্ছে বিধাননগরের রুফটপ রেস্তরাঁর দরজাও। শুক্রবার পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে আলোচনার পরেই এমন সিদ্ধান্ত নিলেন বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী।
পুরমন্ত্রী হাকিম শুক্রবারেই জানিয়েছেন, “ছাদ কারও ব্যক্তিগত এলাকা নয়। আগুন লাগলে সেখান দিয়েই মানুষকে নিরাপদে সরানো হয়। সেই রাস্তাই যদি বন্ধ থাকে, তবে মুশকিল। তাই আপাতত সব রুফটপ রেস্তরাঁ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই রাজ্য জুড়ে বিপজ্জনক ভবন ও রেস্তরাঁগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন। গঠিত হয়েছে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি। তার সুপারিশ না-আসা পর্যন্ত ছাদে কোনও বাণিজ্যিক ব্যবহার নিষিদ্ধ বলে জানান ফিরহাদ।
এ দিকে, একই সুর কৃষ্ণা চক্রবর্তীর গলায়ও। শুক্রবারই মেয়র বৈঠক করেন পুরসভার কাউন্সিলরদের সঙ্গে। সিদ্ধান্ত হয়, বিধাননগরের সব রুফটপ রেস্তরাঁ আপাতত বন্ধ। প্রতিটি ওয়ার্ডে কোথায় কোথায় এমন রেস্তরাঁ আছে, তার তালিকা তৈরি করে তা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
কৃষ্ণা বলেন, “আমরা কোনও ব্যবসার বিরুদ্ধে নই। কিন্তু মানুষের জীবন আগে। মেছুয়াবাজারের ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, রুফটপ রেস্তরাঁ কতটা বিপজ্জনক হতে পারে।” মেয়র আরও জানান, শুধু রুফটপ নয়, বিধাননগরের সব রেস্তরাঁতেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, আপৎকালীন দরজা ও অন্যান্য নিরাপত্তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ দিকে, মেছুয়াবাজারের ঋতুরাজ হোটেলে আগুনের জেরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় চলছে নজরদারি। জানা গিয়েছে, ওই হোটেলে ফায়ার লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল বহু আগেই। ছিল না কার্যকর অগ্নি প্রতিরোধক ব্যবস্থাও। তদন্তে উঠে এসেছে কাঠের কাজে ব্যবহৃত দাহ্য পদার্থ থেকেই আগুনের সূত্রপাত। অতিরিক্ত ধোঁয়ার কারণে উপরতলায় থাকা অতিথিদের অনেকেই নিচে নামতে পারেননি।
ঘটনার পর দিনই এলাকাটি পরিদর্শনে যান মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু ও কলকাতা পুলিশের কমিশনার মনোজ বর্মা। মুখ্যমন্ত্রী জানান, শুধু বড়বাজার নয়, শহরের সব বিপজ্জনক বাড়ি ও বহুতলের তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নিতে হবে। কলকাতা পুরসভাকে কেন্দ্র করে গঠন করা হচ্ছে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্তকারী দল। একই রকম নির্দেশ গিয়েছে জেলার পুর ও পুলিশ প্রশাসনের দিকেও।
পরিস্থিতি বিচারে ইতিমধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শহরের পরিচিত ম্যাগমা হাউসের ছাদে থাকা রেস্তরাঁ। নোটিস পাঠানো হয়েছে আরও অনেক রেস্তরাঁকে। পুরসভা সূত্রে খবর, তালিকা অনুযায়ী রেস্তরাঁগুলিকে পর্যায়ক্রমে নোটিস পাঠিয়ে বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে স্পষ্ট, আপৎকালীন পরিকাঠামো নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শহরের কোনও রুফটপ রেস্তরাঁ খুলতে পারবে না। আর সেই কঠোর বার্তাই এখন ছড়িয়ে পড়ছে এক পুরসভার পর আর এক পুরসভায়।