
টেকনোলজি ছাড়া যেনো আজকের দিনে আমরা একটা মুহূর্তও কল্পনা করতে পারি না। ২১ শতকের পৃথিবী তথ্য ভাণ্ডারের অন্তর্জালে আবদ্ধ। স্মার্টফোন থেকে স্মার্ট-অ্যাপ্লায়েন্স ; সব কিছুতেই প্রযুক্তির সফলতা এবং অঢেল ব্যবহার যেমন একদিকে আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করেছে, তেমনই কেড়ে নিয়েছে আমাদের বেশ কিছু প্রিয় সখ, আল্লাদ, এবং ভালোবাসা।
ডিজিটাল যুগে মেশিনের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে চলতে গিয়ে কোথাও যেনো আমরাও রোবোটে পরিণত হয়েছি, আলাদা হয়ে গেছি আমাদের প্রিয় ছবি আঁকা, আবৃত্তি করা, কিংবা নাচ, গানের অভ্যাস থেকে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই যান্ত্রিক সময়ে প্রযুক্তির জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে এবং নিজেকে উৎফুল্ল, সতস্ফুর্ত রাখতে সাহায্য করবে নিজের পছন্দসই শখ, অভ্যাস গুলো। আসুন দেখে নিই এই যান্ত্রিক যুগে নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে কী কী অভ্যাস আপনাকে সাহায্য করতে পারে?
১. ছবি আঁকা
শিশু থেকে কিশোর, যুবক এমনকি বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যেও কম- বেশী ছবি আঁকার নেশা থাকে। কাজের ফাঁকে অবসর সময়ে রং, তুলির চর্চা, যেমন একদিকে মস্তিষ্ককে যান্ত্রিক ক্লান্তির থেকে দূরে রাখে তেমনই উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশে বিশেষ সাহায্য করে। ছবি আঁকার অভ্যাস শিশুদের মানসিক বিকাশ এবং পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি ঘটাতেও বিশেষ উপকারী।
২. নাচ
ভরতনাট্যম হোক কি কত্থক, পপ থেকে হিপ-হপ; নাচতে কম বেশি প্রত্যেকেই ভালোবাসেন । নাচ মানুষের সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান এবং বিনোদনের অভেদ্য অংশ। সকল বয়সের মানুষের জন্য নাচের অশেষ উপকারিতা রয়েছে। নিয়মিত নাচের অভ্যাস একদিকে যেমন মেদ কমিয়ে শরীর গঠনে সাহায্য করে, তেমনই হার্টকে সুস্থ রাখতে, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে, মজবুত পেশী গঠনে, হাড়, বাতের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ সাহায্য করে। সর্বোপরি প্রতিনিয়ত নাচের অভ্যাস মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও বিশেষ উপকারী।
৩. সঙ্গীত চর্চা
কথায় আছে, সঙ্গীত কলা ৬৪ কলাবিদ্যার মধ্যে অন্যতম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ। সঙ্গীত কেবলমাত্র বিনোদনের উৎস নয়, বরং বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সময়ের সভ্যতা এবং সংস্কৃতির অভেদ্য অংশ। নিয়মিত সঙ্গীত চর্চা মানসিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপশি স্মৃতিশক্তির উন্নতি সাধনে, মানসিক চাপ দূর করতে, বৌদ্ধিক গুণাবলীর বিকাশে অপরিহার্য। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত চর্চার কিছু বিশেষ দিক আছে যা মনোসংযোগ বৃদ্ধি করতে, এবং শিশুর চিন্তন ক্ষমতার উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে।
৪. বাগান করা/ গাছপালা পরিচর্যা
বিভিন্ন শখের মধ্যে গাছ লাগানো এবং বাগান পরিচর্যা অন্যতম সেরা এবং অভিনব একটি অভ্যাস যা শারীরিক ও মানসিক অবস্থার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত বাগান করা, গাছপালার পরিচর্যার মাধ্যমে একদিন যেমন আপনি পরিবেশকে সবুজ করে তুলবেন, অন্যদিকে যান্ত্রিক ক্লান্তির কারণে ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া আপনার মনকেও সবুজের সমারোহে ভরে তুলবেন খুব সহজেই। প্রতিনিয়ত হরেক রকম রং- বেরঙের ফুলের গাছপালার সংস্পর্শে এলে মানবদেহে অক্সিটোসিন এবং এন্ড্রোফিন হরমোন নিঃসৃত হয়, ফলে আমাদের মানসিক ক্লান্তি, উচ্চরক্তচাপ দূর হয়, এবং মনে আনন্দের অনুভূতি সৃষ্টির পাশাপাশি হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
মনে রাখুন
স্বাস্থ্যই প্রকৃত সম্পদ। রোজের কাজ তো লেগেই থাকবে, তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে শরীর ও মনকে সুস্থ্য রাখলে তবেই আপনি পুরোদমে কাজ করার সুযোগ ও ইচ্ছা দুইই পাবেন। আর তাই, হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও খুঁজে নিতে হবে নিজেকে ভালো রাখার মন্ত্র। ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।