
নিজস্ব সংবাদদাতা : এই মুহূর্তে বঙ্গ রাজনীতিতে পারদ চড়ছে দিলীপ ঘোষকে ঘিরে। কথার ছয়লাপ চলছে বিজেপির অন্দরে। তার তাপ এসে পড়ছে প্রকাশ্যে। দলীয় সিস্টারচার শিকেয় তুলে কার্যত ব্যক্তি আক্রমণে পিছু হটছেন না কেউই। এই তর্জার কেন্দ্র কাহিনী দিলীপের দিঘায় যাওয়া। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বুধবার দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর থেকে বঙ্গ বিজেপির একাংশের তীব্র নিশানায় সস্ত্রীক দিলীপ ঘোষ।
তাঁদেরই অন্যতম দলের বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ তীব্র শ্লেষের সুরে বলেছিলেন, “ত্যাগী থেকে কী ভাবে ভোগী হতে হয়, দিলীপবাবু তার আদর্শ নিদর্শন!” জবাব দিতে গিয়ে সংযত থাকেননি দিলীপ ঘোষ। বৃহস্পতিবারই তিনি বলেন, “যারা চারটে বিয়ে করে ১৪টা গার্লফ্রেন্ড রাখে, তারা দিলীপ ঘোষের ক্যারেক্টর সার্টিফিকেট দিচ্ছে, আহাম্মক, কোথাকারের!”
এখানেই শেষ নয়, শুক্রবার সকালে আরও সুর চড়িয়েছেন দিলীপ। সরাসরি সৌমিত্রর নামোল্লেখ করে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি বলেন, “সারা রাত কারুর সঙ্গে বিছানায় কাটিয়ে সকালে গঙ্গাস্নান করে বলছে আমি সতী! সৌমিত্র খাঁ এঁটকাঁটা খেয়ে জীবন কাটিয়েছে। সেও নেতা! তার কথার কি গুরুত্ব ? সে পরশু শুভেন্দু অধিকারীকে গালাগাল দিয়েছে। কাল সুকান্ত মজুমদারকে গালাগাল দিয়েছে। ওর বাপ কে ? ওকে জিজ্ঞাসা করুন।”
দিলীপ এও বলেন, “এরকম অনেক নেতাকে আমরা বাড়িতে পুষে রেখেছি! কাল যদি পোষা বন্ধ করি সব ওই দিকে লাইন লাগাবে। তারা বিজেপির পোষ্য!” জবাব দিয়েছেন দলের কলকাতার কাউন্সিলর সজল ঘোষ এবং ব্যারাকপুরের নেতা অর্জুন সিংয়ের প্রতিক্রিয়ারও। দিঘায় যাওয়া নিয়ে টিপ্পনি কেটে সজল বলেছিলেন, দিলীপ ঘোষ এখন কুণাল ঘোষের বেশি ঘনিষ্ঠ! দিলীপের সাফ কথা, “কেন সজল আমার ঘনিষ্ঠ নয় ? আমার সঙ্গে কুণাল ঘোষ ফটো তোলে। সজল ঘোষও ফটো তোলে। আমি সবাইকে ঘনিষ্ঠ মনে করি। কেউ যদি সময় সময় আমার সঙ্গে দূরত্ব বাড়ায় সেটা তার ব্যাপার। আমার কাউকে নিয়ে কোনও অ্যালার্জি নেই।” একই সঙ্গে এও বলেন, “কে চোর, কে ডাকাত সেটা নিয়েও আমার কোনও মাথাব্যথা নেই। যারা কাল পর্যন্ত চোর ডাকাতের সঙ্গে ছিল তারা আজ সতী হয়ে যাচ্ছে। দিলীপ ঘোষ যাকে একবার বন্ধু মনে করে তাকে শেষ দিন পর্যন্ত বন্ধু মনে করে”।
সস্ত্রীক দিলীপ ঘোষের অবস্থা প্রদেশ কংগ্রেসের প্রয়াত নেতা সোমেন মিত্র এবং শিখা মিত্রর মতো হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন ব্যারাকপুরের বিজেপি নেতা অর্জুন সিং। অতীতে অর্জুন তৃণমূলে ছিলেন, সেই প্রসঙ্গ টেনে দিলীপের চাঁচাছোলা জবাব, “আমি ২০১৫ সাল থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে লড়াই করছি। তখন এই নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোলে খেলা করতেন। তার বাড়িতে গিয়ে উচ্ছিষ্ট খেতেন। বাড়ির সামনে লাইন দিয়ে বসে থাকতেন। এখন হঠাৎ বিজেপি হয়েছেন। এরকম যারা হঠাৎ বিজেপি হয়ে লাফাচ্ছেন, তারা সকালে বিজেপিতে প্রাতরাশ করেন। তৃণমূলের বাড়িতে লাঞ্চ করেন। আবার রাতে বিজেপিতে ফিরে এসে ডিনার করেন!”
অর্জুনের উদ্দেশে তীব্র শ্লেষের সুরে এও বলেন, “কারুর টিকিট চলে যেতে বা চাকরি চলে যেতে একেবারে ইঁদুরের মতো হুহু করে বিজেপি ছেড়ে চলে গেছিল। আবার হাওয়া ঘুরতে হুহু করে ফিরে আসছে। তারা যেন দিলীপ ঘোষের ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট না দেয়।” দিলীপ এও বলেন, “আমি এখন দলে চার আনার ফ্রি মেম্বার। কোনও পদ নেই। তবু লোকে আমাকে নেতা মনে করে, তাই আমার সঙ্গে ঘোরে। কারুর দম আছে জঙ্গিপুর গিয়ে সভা করার ? দিলীপ ঘোষ করে এসেছে। কে আসল হিন্দু নেতা সেটা পাবলিক জানে। রাতারাতি হিন্দু নেতা হতে যেও না। হিন্দুত্ব সবাইকে ফিট করে না।”