
স্পোর্টস ডেস্ক :শেষ মুহূর্তের গোলে জামশেদপুর এফসি-কে ২-০-য় হারানোর পরে মাঠেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ হোসে মোলিনা। তবে যখন সাংবাদিকদের সামনে আসেন, তখন আর ততটা উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি তাঁর মধ্যে। তবে দলের ফুটবলারদের পারফরম্যান্সের ভূয়ষী প্রশংসা করেন। বলেন, এই সাফল্য তাঁদের প্রাপ্য ছিল।
সোমবার ঘরের মাঠে দ্বিতীয় লেগ থেকে ফাইনালে উঠতে অন্তত দু’গোলের ব্যবধানে জয় প্রয়োজন ছিল টানা দু’বারের শিল্ডজয়ীদের। সেই ২-০-র ব্যবধানেই জিতে ফাইনালে পৌঁছে যায় তারা। ৫০ মিনিটের মাথায় নিজেদের বক্সের মধ্যে বলে হাত ছুঁইয়ে ফেলেন জামশেদপুরের ডিফেন্ডার প্রণয় হালদার। এই হ্যান্ডবলের ফলে পাওয়া পেনাল্টি থেকে প্রথম লক গেট খোলেন অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার জেসন কামিংস। সংযুক্ত সময়ে অসাধারণ ও বিশ্বমানের গোল করে দলকে ফাইনালে পৌঁছে দেন আপুইয়া।
এই জয়ের পর সাংবাদিকদের মোলিনা বলেন, “এই জয়টা সত্যিই কঠিন ছিল। কারণ, জামশেদপুর যথেষ্ট ভাল খেলেছে। তাদের স্টাইলে সত্যিই ভাল ডিফেন্স করেছে ওরা এবং আমাদের চাপে ফেলে জিততেও চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আজ আমাদের জয়টা প্রাপ্য ছিল। আপুইয়ার শেষ গোলটা, শেষ মুহূর্তে ওর গোলে শট সত্যিই অসাধারণ ছিল। আমাদের পক্ষে এক দুর্দান্ত মুহূর্ত। এই গোলটা পাওয়ার জন্য আমরা ৯০ মিনিট ধরে অনেক লড়াই করেছি। অবশেষে, আপুইয়া হয়ে ওঠে আমাদের সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তি, যে গোলটা করে দেয়। ওর এটা প্রাপ্য ছিল”।
আপুইয়ার গোল নিয়ে কোচ বলেন, “শেষ মুহূর্তে গোল করার সময় আপুইয়া নিশ্চয়ই ভাবছিল, ‘আমি শুট করব আর গোল করব’। কারণ কেউ যদি সেটা না ভাবে, তা হলে সে শট নেবেই না। ঠিক তাই। আর এটাই সবার সম্মিলিত পরিশ্রমের ফল। আর এই ধরনের একটা দলের কোচ হওয়ায় আমি খুশি”।
গত ম্যাচে হারের পর এই ম্যাচের পারফরম্যান্সে খুশি সবুজ-মেরুন কোচ বলেন, “আমি দলের পারফরম্যান্সে, বিশেষ করে শেষ পর্যন্ত যেভাবে তারা লড়াই করেছে, তাতে খুব খুশি। ওদের বলেছিলাম, নিজেদের ওপর আস্থা রাখো, শান্ত থাকো, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলো। কখনও হতাশ হবে না। ওরা পরিকল্পনা অনুযায়ীই খেলছে। অবশেষে আমাদের যা প্রাপ্য ছিল, তা পেয়েছি”।
সোমবারের ম্যাচের প্রতিপক্ষকে নিয়ে তিনি বলেন, “জামশেদপুরের খুব বেশি না হলেও, কয়েকটা সুযোগ ছিল গোল করার। আমি এখনও মনে করতে পারছি, জাভির একটি শট পোস্টের একদম কাছ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। আজকের সমস্যাটা ছিল পজিশন ধরে রাখা, বল মুভ করানো, হতাশ না হওয়া, ধৈর্য ধরে খেলা চালিয়ে যাওয়া।
আমাদের বরং অনেকগুলো সুযোগ ছিল গোল করার। আমি পরিসংখ্যান দেখছিলাম— ৩২-৩৩টা বা তারও বেশি শট আমরা লক্ষ্যে রেখেছি। ৯০ মিনিটে এটা অনেক। তবে ওরা রক্ষণে দারুন কাজ করেছে। তবু আমরা খেলে গিয়েছি। তাই এই সাফল্য আমাদের প্রাপ্য ছিল। এখন আমরা রিকভার করব এবং ফাইনালের জন্য যতটা সম্ভব ভাল ভাবে প্রস্তুতি নেব”।
আগামী শনিবার ফাইনালে তাদের মুখোমুখি হতে চলেছে বেঙ্গালুরু এফসি। গত বার শিল্ড জেতার পরেও নক আউট ফাইনালে মুম্বই সিটি এফসি-র কাছে হেরে গিয়েছিল সবুজ-মেরুন বাহিনী। এ বার ফের আইএসএলের ইতিহাসে জোড়া খেতাব জয়ের সুযোগ এসে গিয়েছে তাদের সামনে। সেই খেতাবী লড়াই নিয়ে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কোচ বলেন, “ফাইনালে কেউই ফেভারিট নয়। যে কোনও কিছু ঘটতে পারে। অবশ্যই, আমরা নিজেদের ওপর আস্থা রাখি। আমাদের নিজেদের ওপর ভরসা রাখি। আমরা মনে করি, যদি আমরা আমাদের সেরা খেলাটা খেলতে পারি, তা হলে আমরা ট্রফি জিততে পারব। কিন্তু আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এখন আমাদের সবার আগে রিকভার করতে হবে। আমরা প্রতিপক্ষকে সম্মান করি। তারা পুরো মরশুমে দারুণ খেলেছে”।
সুনীল ছেত্রীর দল নিয়ে মোলিনা বলেন, “ওরা সত্যিই ভাল দল। তাই ম্যাচটা সহজ হবে না। তবে আমি সব সময় একই কথা বলি—আমার দলের ছেলেদের ওপর আমার বিশ্বাস আছে। আমি তাদের ওপর আস্থা রাখি। তারা যে ভাবে কাজ করছে, আমরা সবাই মিলে যেভাবে কাজ করছি, তার ওপর যথেষ্ট আস্থা আছে। আশা করি, আমাদের আর একটা দারুণ রাত আসতে চলেছে এবং আমরা আরেকটি ট্রফি জিততে পারব। তবে আমাদের ছেলেদের জেতার ও গোল করার ইচ্ছা থাকতে হবে। এটা গোল করাকে কঠিন করে তোলে, কিন্তু জয় পাওয়াকে সহজ করে তোলে”।
সারা মরশুমের মতো এই ম্যাচেও এক ঝাঁক গোলের সুযোগ নষ্ট করা নিয়ে মোলিনা বলেন, “আজ আমাদের গোল করার অনেক সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে, অনেক সুযোগই কাজে লাগাতে পারিনি। তবে আজকের দিনটা আজকের মতোই, আর আগামী দিনটা আগামী দিনের মতো। প্রতি দিনই আলাদা। প্রশ্ন শুনে মনে হচ্ছে যেন আমাদের গোল করার সমস্যা আছে। আমাদের গোল করার সমস্যা আছে বলে আপনাদের মনে হয়? আমরা তো লিগে সবচেয়ে বেশি গোল করা দল।
অবশ্যই, আমরা প্রতি শটে গোল করি না বা প্রতিটি সুযোগে গোল হয় না। কিন্তু পৃথিবীর কোনও ক্লাবই কি এটা করতে পারে? না। ভাল দিকটা হলো, আমরা অনেক সুযোগ তৈরি করি। আইএসএলের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, আমরা লিগে দ্বিতীয় সেরা দল, যারা সবচেয়ে বেশি সুযোগ তৈরি করেছি এবং আমরা সবচেয়ে বেশি গোল করা দল। এ দিক থেকে আমি আমার দলের ওপর সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট”।