
ওঙ্কার ডেস্ক : পাকিস্তানের তরফ থেকে সামরিক উস্কানি অব্যাহত। তাদের ৩০০-৪০০টি ড্রোন গুলি চালিয়েছিল। সেগুলি অবশ্য ভারতীয় সেনাবাহিনী নিষ্ক্রিয় করে দেয়। শুক্রবার সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, ভারতের ২৬টি স্থানে সশস্ত্র ড্রোন দেখা গেছে, যার মধ্যে রয়েছে উত্তরে বারামুল্লা থেকে দক্ষিণে ভুজ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর।
এইগুলির মধ্যে রয়েছে বারামুল্লা, শ্রীনগর, অবন্তীপোরা, নাগরোটা, জম্মু, ফিরোজপুর, পাঠানকোট, ফাজিলকা, লালগড় জট্টা, জয়সালমের, বারমের, ভুজ, কুয়ারবেট এবং লক্ষী নালা। সিনিয়র পুলিশ সুপার ভূপিন্দর সিং সিধু জানিয়েছেন, ফিরোজপুরের একটি বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে সশস্ত্র ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে, যার ফলে স্থানীয় একটি পরিবারের সদস্যরা গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, “পাকিস্তান আবারও প্রমাণ করলো যে এটি একটি সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র। আমার নিজের রাজ্য পাঞ্জাবে নিরীহ নাগরিকরা গুরুতর আহত হয়েছে। বিশ্বের দেখা উচিত পাকিস্তান কীভাবে ভারতকে উস্কে দিচ্ছে”।
নাগরিকরা, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দারা বলেছেন, সরকার থেকে তাঁদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা যেন ঘরের ভেতরে থাকেন, অপ্রয়োজনে বাইরে না বেরোন এবং সুরক্ষার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ থেকে জারি করা নির্দেশাবলী অনুসরণ করেন। দুই প্রতিবেশীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে একাধিক এলাকায় সতর্কতামূলক ব্ল্যাকআউট জারি করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের আখনুর ও উধমপুর অঞ্চলে, হরিয়ানার আম্বালা ও পঞ্চকুলা অঞ্চলে সম্পূর্ণ ব্ল্যাকআউট জারি করা হয়েছে। পাঞ্জাবের ফিরোজপুর এবং রাজস্থানের জয়সলমীরেও ব্ল্যাকআউট জারি করা হয়েছে।
পাকিস্তানের ড্রোন হামলা অব্যাহত থাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। এর কয়েক ঘন্টা আগেই নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার জন্য শীর্ষ প্রতিরক্ষা দফতরের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে একটি উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেখা করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং তিন বাহিনীর প্রধান এবং প্রতিরক্ষা দফতরের কর্তাদের সঙ্গে।

বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তান ভারতের পশ্চিম সীমান্তে একাধিক বার ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যার লক্ষ্যবস্তু ছিল বেশ কয়েকটি বসতি এলাকা। প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের লক্ষ্য ছিল S-400 ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সহ ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলি্র উপর আঘাত আনার। কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনীর তপরতায় তা ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া, ৩৬টি স্থানে অনুপ্রবেশের জন্য প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল বলে জানান হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এত বড় আকারের আকাশপথে অনুপ্রবেশের সম্ভাব্য উদ্দেশ্য ছিল বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরীক্ষা করা এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা। ড্রোনগুলির ধ্বংসাবশেষের ফরেনসিক তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে এগুলি তুর্কি অ্যাসিসগার্ড সোঙ্গার ড্রোন। সরকারের তরফে জানান হয়েছে, সন্ধ্যার আগে, জম্মু অঞ্চল এবং দক্ষিণ কাশ্মীরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় এবং সাইরেন বাজতে থাকে, যার ফলে জম্মু ও কাশ্মীরের অনেক অংশ অন্ধকারে ডুবে যায়।
জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লা তাঁর X হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে বলেছেন, “আমি যেখানে আছি সেখান থেকে মাঝেমধ্যে বিস্ফোরণের শব্দ, সম্ভবত ভারী কামানের শব্দ, এখন শোনা যাচ্ছে,”। তিনি অন্ধকারে ঢাকা শহরের একটি ছবিও পোস্ট করেছেন, পোস্টটির ক্যাপশনে লিখেছেন, “জম্মুতে এখন ব্ল্যাকআউট। শহরজুড়ে সাইরেন শোনা যাচ্ছে।” তিনি আরও বলেছেন, “জম্মু এবং তার আশেপাশের সকলের কাছে আমার আন্তরিক আবেদন, দয়া করে কেউ রাস্তায় থাকবেন না, বাড়িতে থাকুন। গুজব উপেক্ষা করুন, ভিত্তিহীন বা যাচাই না করা গল্প ছড়াবেন না এবং আমরা একসঙ্গে এটি মোকাবেলা করব”।