
বিপ্লব দাশ : মানুষ এখন ভীষণ ভাবে হুজুগের দাস। যা হচ্ছে, যতক্ষণ না তা পানসে লাগছে, সেটা নিয়েই মেতে থাকতে চাইছে। তারপর আরও একটা, অন্য এক হুজুগধর্মী কিছু পেলেই হল, তাই নিয়েই নতুন তুলকালাম। পৃথিবীর সমস্ত ব্র্যান্ডিং চলছে মানুষের এই চাহিদাকে নিয়েই। তা গায়ে মাখা সাবান হোক, কিংবা রাজনীতি, বিষয়টি আসলে আলাদা কিছু নয়। এর মধ্যেই এখন সবকিছুরই প্রত্যাশার জয়।
সবার কাছে তাই নতুনের খোঁজটাই আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ। আমরা আর পিছন ফিরে তাকাতে চাই না। সেজন্যই আশঙ্কা এখানে একটা ম্যাজিক রিয়েলিটি। তাই প্রশ্ন জাগে, মানুষের এই হুজুগকে ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে না তো ! যেহেতু, এ যুগে শাসন ক্ষমতাও অনেকাংশে এই ব্র্যান্ডিং নির্ভর। এই যে টেস্ট ক্রিকেট থেকে টি-টোয়েন্টি, সিনেমা হল থেকে ওটিটি অ্যাপস, জায়ান্ট টিভি থেকে ডিজিটাল….। রাজনীতিটাও কী এমন কোনো অধুনা সংস্করণে এসে দাঁড়িয়েছে। তাই তার ভাষা গেছে বদলে। তাই তার শুধু জবাব আছে কিন্তু জবাবদিহি নেই। হাল আমলের রাজনীতি তাই দায় নিতে জানে না, জবাব দিতে জানে।
পহেলগাঁও হত্যালীলার পর সবাই মেতেছেন যুদ্ধের উন্মাদনায়। ড্রয়িং রুম থেকে সভা-সম্মেলন সর্বত্রই চেঁচিয়েছেন, “জবাব চাই জবাব চাই”। কিন্তু এটাই তো প্রথম নয়, পুলওয়ামা, উরি কিংবা সংসদে হামলার পরও……। কিন্তু কেউ একবারও কি প্রশ্ন তুলেছেন- কেন এমন হল, খুঁত ছিল কোথায় কিংবা এমন যাতে আর না হয় তার জন্য এই এই……। আমরা মেতেছি ঘটানার জবাব কী ভাবে দেওয়া হবে তাই নিয়ে। ওই যে- মানুষ এখন ঘাঁড় ঘুরিয়ে দেখতে চায় না। নতুন চাই, শুধু নতুন চাই। আর নতুন মানে সামনে।
এর আগে আমরা দু দু বার দেখেছি পাকিস্তানের মাটিতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জঙ্গি শিবির। কিন্তু কেউ কি খবর রাখেন, আমাদের নিরাপত্তারক্ষীদের কী ভাবে প্রতিদিন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হয় কাশ্মীরে ! যে লড়াই এক্কেবারে মুখোমুখি, দূর নিয়ন্ত্রিত নয়। কেউ কি পিছন ফিরে দেখেছেন, অষ্টপ্রহর যাঁরা সম্মুখ সমরে দেশকে রক্ষা করতে গিয়ে হারিয়ে গেছেন, কেন তাঁরা গেলেন ! কেউ কি ঘুরে দেখেছেন, তাদের নিরাপত্তা কি আদৌ আছে ? শুধু জবাব দিলেই হয় না, জবাবদিহিও করতে হয়।