
ওঙ্কার ডেস্ক : পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে ফুঁসছে গোটা দেশ। সীমান্তে যেন পুরোদস্তুর যুদ্ধের আবহ। যেন পাকিস্তান বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের সময় গুনছে ভারতীয় সেনা। এই চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে এবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনে কথা বললেন মার্কিন বিদেশসচিব। সূত্রের খবর, ভারতকে বুঝিয়ে শান্ত করার জন্য আমেরিকার কাছে আর্জি জানিয়েছেন শাহবাজ শরিফ।
ফোনে কথা বলার সময় সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পাকিস্তানের অগ্রণী ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন শাহবাজ শরিফ। তাঁর দাবি, এখনও পর্যন্ত সেদেশে সন্ত্রাসের শিকার হয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে ৯০ হাজার মানুষ। এমনকী আর্থিকভাবে ১৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। সূত্রের খবর, পাক প্রধানমন্ত্রী মার্কিন বিদেশ সচিবকে নিজেদের নিরপরাধ প্রমাণ করতে নানান যুক্তি দিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান প্রসঙ্গ। তিনি জানিয়েছেন, আফগানভূমি থেকে পরিচালিত ISKP, TTP ও BLA-এর মতো জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পথ থেকে পাকিস্তানকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে, যা অত্যন্ত হতাশা ও উদ্বেগজনক।
এমনকী পহেলগাঁও হামলার সঙ্গে পাক-যোগের অভিযোগ অস্বীকার করে গোটা বিষয়টি নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য সামনে আনার দাবি জানান শাহবাজ শরিফ। পাশাপাশি, মার্কিন বিদেশসচিবকে পাক প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভারত যাতে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে সে বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করুক আমেরিকা।
পাশাপাশি সিন্ধু জল চুক্তি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করার কোনও অধিকার ভারতের নেই বলে উল্লেখ করেন শাহবাজ শরিফ। তাঁর দাবি, পাকিস্তানের ২৪০ মিলিয়ন মানুষ নির্ভর করেন সিন্ধুর যে জলের ওপর, তাকে ভারত যেভাবে যুদ্ধের হাতিয়ার করছে তা অত্যন্ত নিন্দার। শান্তিপূর্ণ উপায়ে জম্মু-কাশ্মীর সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান সম্ভব হলে তবেই দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায় রাখা সম্ভব বলেও দাবি করেন পাক-প্রধানমন্ত্রী। বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গেও কথা বলেন মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবি।পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি উত্তেজনা প্রশমনের পরামর্শ দিয়েছেন।
পহেলগাঁওয়ে পাক জঙ্গিদের হামলায় ২৫ জন পর্যটক-সহ ২৬ জনের মৃত্যুর পরেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদকে সংঘাতের পরিবর্তে সমস্যার ‘দায়িত্বশীল সমাধান’ খুঁজতে বলেছিল। তা সত্ত্বেও কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্তরে একাধিক পদক্ষেপ করেছে দু’দেশ। এক সপ্তাহ ধরে নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) চলছে গুলির লড়াই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতীয় সেনাকে যে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণের ছাড়পত্র দিয়েছেন। এই আবহে ইসলামাবাদের তরফে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য ওয়াশিংটনে বার্তা পাঠানো হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে সক্রিয় হয়েছেন রুবিয়ো।
মার্কিন বিদেশ দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস জানিয়েছেন, জয়শঙ্করের সঙ্গে কথোপকথনের সময় রুবিয়ো পহেলগাঁওয়ে প্রাণহানির জন্য গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন এবং জঙ্গি হামলায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ভারতের বিদেশমন্ত্রীকে সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতা করার এবং দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। মার্কিন বিদেশ দফতরের ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে, ‘‘দু’দেশের মধ্যে যে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা করুক, এবং দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করুক।’’