
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ চতুর্থ দিনেও থামলো না বসিরহাটের সন্দেশখালি রাজনৈতিক হিংসা। প্রায় তিন দিন ধরে চলা জনরোষের পাল্টা আন্দোলনকারী গ্রামবাসীদের ঘরবাড়ি জ্বালানো ও মারধর, খুন জখমের অভিযোগ উঠল সেই তৃণমূলের বিরুদ্ধেই। পুলিশের উপস্থিতিতেই রাতভর সশস্ত্র হামলা চলে আন্দোলনকারী গ্রামবাসীদের উপরে। রাতের অন্ধকারে দুষ্কৃতীদের হামলার হাত থেকে রেহাই পাননি মহিলা, বৃদ্ধ বৃদ্ধা ও শিশুরা। সন্দেশখালির উদ্ভূত রাজনৈতিক হিংসা ও অস্থিরতা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ আনতে গতকাল সন্ধ্যায় সন্দেশখালিতে পৌঁছান রাজ্য পুলিশের আইজি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিসরাম ঝাঝারিয়া। কিন্তু তার উপস্থিতিতেই ফের কেন হামলা, অগ্নিসংযোগ ও মারধরের ঘটনা ঘটলো সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।তাহলে কি সন্দেশ খালি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে ? নাকি পুলিশ এক তরফা শাসকদলের হয়েই কাজ করছেন। পশ্চিমবঙ্গের বঙ্গোপসাগর উপ-উগুলো ভর্তি উত্তর ২৪ পরগনার সুন্দরবন লাগোয়া বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সন্দেশখালি কি তাহলে উপদ্রুত এলাকায় পরিণত হয়েছে সেই আতঙ্কেই দিনরাত কাটছে সন্দেশখালীর বাসিন্দাদের। সন্দেশখালীর ১ ও ২ নম্বর ব্লকে বেতাজ বাদশা শেখ শাহজাহান এখনো ইডি বা পুলিশের অধরা। ইডিও সিআইএসএফের ওপরে হামলার পর প্রায় ৩৬ দিন কেটে গেলেও শেখ শাহজাহানের হদিস পায়নি কেউ। অথচ সেখানকার গ্রামবাসীদের দাবি শেখ শাজাহান পুলিশি নিরাপত্তায় সন্দেশখালিতেই আছেন। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ আছে। কিন্তু শেখ শাজাহান হীন সন্দেশখালি ভাবতে পারছে না শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। সামনে লোকসভা নির্বাচন তার আগে সন্দেশখালীর তৃণমূল কংগ্রেসের একচ্ছত্র সেনাপতি শেখ শাজাহানের প্রত্যাবর্তন তৃণমূল কংগ্রেসের দলের পক্ষে খুব জরুরি।কারণ গোটা সন্দেশখালীর ভোট ব্যাঙ্ককে তৃণমূলের অনুকূলে আনতে শেখ শাহজাহানের বাহিনীর অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন রাজনৈতিক নিরপেক্ষ না হওয়ায় তাদের ওপর থেকে আস্থা হারিয়েছেন সাধারণ মানুষ। এমত পরিস্থিতিতে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সিপিআইএম থেকে আগত শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরা ও উত্তম সর্দারদের লাগামহীন অত্যাচার, খুন, জখম, ধর্ষণ জরিমানা লুটতরাজের বিরুদ্ধে গ্রামের পর গ্রাম সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বিক্ষোভ আছড়ে পড়ে সন্দেশখালি থানা ও শেখ শাহজাহানের মূল দুই সাগরেদ শিবপ্রসাদ হাজরা ও উত্তম সর্দারের বাড়ির ওপর। উত্তেজিত গ্রামবাসীরাই বিশেষ করে মহিলারা শিবপ্রসাদ হাজরা ও উত্তম সর্দারদের বাড়িঘর, বিঘের পর বিঘে মুরগির পোল্ট্রি ফার্ম ও মেছোভেরির আলা ঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। কিন্তু তাতেই কি শেখ শাজাহান শিবপ্রসাদ হাজরা ও উত্তম সর্দারদের সাম্রাজ্য শেষ হবে প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে। যতক্ষণ না শাসক দল ও সরকার কিম্বা পুলিশ প্রশাসন না চাইছে তাদের এই অত্যাচারের পালা বন্ধ হোক ততক্ষণ কি সম্ভব প্রতিদিন এই জনরোষ দিয়ে অত্যাচারের রেখার শেষ করা। হ্যাঁ সাধারণ গ্রামবাসীরা সেটাই চান এবং তারা আশাবাদী । সাধারণ গ্রামবাসীরা শুধু চান পুলিশ প্রশাসন একটু নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করুক। কিন্তু তা হচ্ছে কই। শুক্রবার জেলিয়া খালির পর শনিবার ফের ভোর রাত থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সন্দেশখালি থানার খুলনা গ্রাম পঞ্চায়েতের শীতলিয়া গ্রাম। গ্রামবাসীদের অভিযোগ গভীর রাতে খুলনা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সত্যজ্যোতি সান্যাল হাটগাছা পোস্ট অফিসের পাশে এবং তৃণমূল নেতা শফিকুল গাজী শীতলিয়া হাই স্কুলের পাশে বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম এবং বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী ও সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভাঙচুর চালায়, অগ্নিসংযোগ ঘটায় এবং ব্যাপক মারধর করে। বাড়ির মহিলাদের বীভৎস করে মারধর এমনকি ছোট শিশুকে ছুড়ে ফেলারও অভিযোগ উঠেছে খুলনা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সত্যজ্যোতি সান্যাল ও খুলনা অঞ্চল তৃণমূল নেতা শফিকুল গাজীর বিশাল সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সন্দেশকালীর থানার পুলিশ। তৃণমূল অঞ্চল প্রধান সত্যজ্যোতি ও শফিকুল কে গ্রেপ্তারের দাবিতে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় গ্রামবাসীরা। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার দাবিতে ভোররাত পর্যন্ত পুলিশকেই গ্রামে আটকে রাখে গ্রামবাসীরা। সকাল হতেই পুলিশ সন্দেশখালি থানায় এলাকার ৮ টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে নোটিশ লাগায় সর্বত্র। বুধবারের ঘটনায় ৫ জন, শুক্রবার জেলিয়াখালীর ঘটনায় ৮ জন এবং আজ শনিবার ভোররাতে খুলনার ঘটনায় ১ জন নিয়ে মোট ১৪ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে সন্দেশখালির রাজনৈতিক হিংসার ঘটনায়। কিন্তু এই গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের লোকজন নেই বললেই চলে। সব থেকে বড় বিষয় হলো আন্দোলনরত গ্রামবাসীদের মধ্যে শুধু কংগ্রেস, বিজেপি, সিপিএম কর্মী সমর্থক এমন টা ঠিক নয়। এদের মধ্যে অনেক তৃণমূল কংগ্রেসেরও প্রচুর পুরাতন কর্মী সমর্থকরা রয়েছে। যাদেরকে দমন পীড়ন করে সিপিএম থেকে তৃণমূলে এসে শেখ শাহজাহান বাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং এই শ্রেণীর তৃণমূল নেতা, কর্মী, সমর্থক ও ভোটাররাও এবার লোকসভা নির্বাচনে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে শাখের করাত হবে যদি শেখ শাজাহান শিবপ্রসাদ হাজরা ও উত্তম সর্দাররা গ্রেপ্তার না হন।