
সুমন গঙ্গোপাধ্যায়ঃ হাতে সময় খুব কম। সূত্রের খবর অনুযায়ী মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হতে চলেছে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচন। এরই মধ্যে ঘর গোছাতে নেমে পড়েছে প্রায় সব রাজনৈতিক দল গুলি। বিধানসভায় শূন্য থেকে শুরু করে ৭৭ আসনে অপরদিকে লোকসভারতে ২ আসন থেকে ১৮ আসনে পৌঁছে যাওয়া বিজেপির এবারের টার্গেট বাংলা থেকে আরও বেশি আসন পাওয়া। নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজ্যে আসছেন অমিত শাহ, জে পি নাডডারা। ইতিমধ্যেই বঙ্গ বিজেপিকে ৩৫ আসনের হোম টাস্ক দিয়ে গিয়েছেন অমিত শাহ। সেই মতো কোমর বেঁধে নেমেছে বঙ্গ বিজেপি। তবে যাদের মুখ করে রাজ্যে থেকে লোকসভাতে চমকে দেওয়ার ফলাফলের পরিকল্পনা করছে তারা কারা?
অর্থাৎ ২০২৪ সের নির্বাচনে রাজ্যের ৪২ টি আসনে কে কে পেতে পারে টিকিট? তার নামের একটা সম্ভাব্য তালিকা বিজেপি সূত্রে পাওয়া যাচ্ছে। বিজেপি সূত্রে খবর, দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা কার্যত নেই।
সব মিলিয়ে এই সম্ভাব্য তালিকাতে বেশ কিছু চমক থাকছে। বাদ যেতে পারেন বেশ কয়েকজন সাংসদ। বিজেপি সূত্রে খবর, দার্জিলিং কেন্দ্রে বর্তমান রাজু বিস্তার নাম থাকলেও উঠে আসছে আরও একটি নাম, প্রাক্তন রাষ্ট্রদুত হর্ষবর্ধন সিংলা, যিনি মোদীর অন্যতম প্রিয়পাত্র বলেও পরিচিত। স্বাভাবিক ভাবে এই কেন্দ্রের প্রার্থী বদলের সম্ভাবনা প্রচুর। এবার টিকিট পাচ্ছেন না কেন্দ্রীয় আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী জন বারলা, এবার আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের টিকিট পাচ্ছেন বর্তমান রাজ্য বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগগা। কোচবিহার থেকে এবারও টিকিট পাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও যুব কল্যাণ দপ্তরে রাষ্ট্রমন্ত্রী নিশীথ প্রামানিক। এবার আসা যাক জলপাইগুড়িতে। এই আসনে গতবার বিজেপির টিকিটে জিতে সংসদ হয়েছিলেন চিকিৎসক জয়ন্ত রায় তবে এবার তিনি আর দাঁড়াতে চাইছেন না এই আসনে এবার চমক দিচ্ছে বিজেপি জলপাইগুড়ি আসন থেকে তাদের প্রার্থী হচ্ছেন ধূপগুড়ি বিধানসভার উপ-নির্বাচনে বিজেপির সম্ভাব্য প্রার্থী পুলুওয়ামায় শহীদ হওয়া সৈনিকের স্ত্রী তাপসী রায়। একই ভাবে রায়গঞ্জ আসন থেকেও বর্তমান সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীর টিকিট পাওয়া সম্ভাবনা ক্ষীন। এই আসন থেকে বিজেপির টিকিট পেতে পারেন অভিনেত্রী পাপিয়া অধিকারী। একদা সিপিএম ঘনিষ্ঠ এই অভিনেত্রী ২০২১ সালে বিজেপিতে যোগদান করেন ইতিমধ্যেই ভাল বক্তা হিসাবে যথেষ্ট জনপ্রিয়। এবার এই আসনে তাকে প্রার্থী করে চমক দিতে চাইছে পদ্ম শিবির। বালুরঘাট থেকে এবারও নির্বাচনে লড়বেন বর্তমান বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার তবে বদল হতে পারে মালদা উত্তরের প্রার্থী এই কেন্দ্রে সাংসদ ছিলেন বহুদিনের সিপিএম বিধায়ক খগেন মুর্মু খুব সম্ভবত তিনি এবার টিকিট পাচ্ছেন না, তার বদলে টিকিট পাওয়ার কথা জুয়েল মুর্মুর। তবে মালদা দক্ষিণ থেকে এবারও লোকসভায় টিকিট পাচ্ছেন বর্তমান ইংরেজবাজারের বিজেপি বিধায়িকা শ্রীরূপা চৌধুরী।
এবার আসা যাক মুর্শিদাবাদ জেলায় এবার একটি বিশেষ চমক রয়েছে বিজেপির প্রার্থী তালিকা মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্র থেকে সম্ভবত পদ্ম প্রতীকে লড়াই করবেন প্রাপ্তন আইপিএস নজরুল ইসলাম। জঙ্গিপুর থেকে এবারও টিকিট পাচ্ছেন মাফুজা খাতুন। অপরদিকে বহরমপুর থেকে অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী হচ্ছেন সুব্রত মৈত্র। যিনি বহরমপুর বিধানসভা থেকে বিজেপির বিধায়ক। নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপির সম্ভাব্য প্রার্থী আরএসএস ঘনিষ্ঠ সৌমেন মুখোপাধ্যায়। অপরদিকে রানাঘাট থেকে এবার টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা কম বর্তমান সাংসদ জগন্নাথ সরকারের। তার বদলে টিকিট পেতে পারেন বিজেপি বিধায়ক চিকিৎসক মুকুটমনি অধিকারী। তবে বনগাঁ আসন থেকে এবারও টিকিট পাবেন বর্তমান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর।
এবার চলে আসো যাক উত্তর ২৪ পরগণায়। ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে গত নির্বাচনে বিজেপি টিকিটি জয়ী হয়েছিলেন অর্জুন সিং। যদি পড়ে তিনি তৃণমূলে যোগদান করেন এই ব্যারাকপুর লোকসভা আসনে টিকিট পাচ্ছেন বর্তমান বিজেপির মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী ফাল্গুনী পাত্র। অপরদিকে দমদম লোকসভা আসনে বিজেপির টিকিট পাওয়া সম্ভাবনা প্রবল ব্যারাকপুরের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক শিলভদ্র দত্ত’র। বারাসাত লোকসভা আসনে বিজেপির টিকিট পাওয়ার তালিকায় সবথেকে বেশি এগিয়ে আছেন অধ্যাপক বিমল শংকর নন্দ। অপরদিকে বসিরহাট কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিট পেতে পারেন আইনজীবী নাজিয়া ইলাহী খান।
জয়নগর লোকসভা আসনে টিকিট পাবার সম্ভাবনা আরএসএস ঘনিষ্ঠ উৎপল নস্করের। একইভাবে মথুরাপুর আসনে টিকিট পেতে পারেন দিলীপ জাটুয়া। এবার আসা যাক ডায়মন্ড হারবার অর্থাৎ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোকসভা কেন্দ্র। এই আসনে চমক দিতে চাইছে বিজেপি, খুব সম্ভবত এই লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হচ্ছেন সোনালী গুহ তবে মহাগুরু মিঠুন চক্রবর্তীর নাম ও ঘোরাফেরা করছে এই আসনে। যাদবপুর লোকসভা আসনে বিজেপির প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা অভিনেত্রী রাষ্ট্রপতি মনোনীত রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ রুপা গঙ্গোপাধ্যায়, তবে দ্বিতীয় একটি নাম ও ঘোরাফেরা করছে এই আসনের জন্য তিনি কেয়া ঘোষ। তবে বিজেপির আরো একটি মহলের বক্তব্য শেষ পর্যন্ত যদি সোনালি গুহ ডায়মন্ড হারবার থেকে দাঁড়াতে না চান, তবে সেক্ষেত্রে কেয়া ঘোষকে ওই আসনে প্রার্থী করা হতে পারে।
দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রে বড়সড় চমক দিতে চাইছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের লোকসভা আসন দক্ষিণ কলকাতা এই আসন থেকে একাধিকবার তিনি সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও এখন এই কেন্দ্রের সংসদ মালা রায় এবার এই আসনটি ছিনিয়ে নিতে মরিয়া বিজেপি আর তাই সেলিব্রিটি প্রার্থী দাঁড় করিয়ে এই আসন দখল নিতে চাইছে তারা। বিজেপি সূত্রে খবর এই আসনে প্রাপ্তি হবার দৌড়ে এগিয়ে আছেন মিঠুন চক্রবর্তী।
কলকাতা উত্তর থেকে বিজেপির প্রার্থী হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা সজল ঘোষের। হাওড়া থেকে বিজেপির টিকিট পেতে পারেন অভিনেত্রী অঞ্জনা বসু। উলুবেরিয়া থেকে টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা পদ্মশ্রী প্রাপক শিক্ষাবিদ মাসুম আখতারের। একইভাবে শ্রীরামপুর আসন থেকেও চমক দিতে চাইছে বিজেপি এই কেন্দ্রে বর্তমান তৃণমূল সাংসদ আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, এবার এই কেন্দ্রেই বিজেপির প্রার্থী হতে পারেন। কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাক্তন জামাই কবীরশঙ্কর বসু।
আসন বদল হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা হুগলির বর্তমান সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের। হুগলি আসনে টিকিট পেতে পারেন ভবানীপুর আসনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়া আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল। আরামবাগ আসন থেকে বিজেপির টিকিট পেতে পারেন এই কেন্দ্রের বর্তমান বিধায়ক মধুসূদন বাগ। অন্যদিকে, সবচেয়ে বেশি আলোচ্য দুটি আসন পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক এবং কাঁথি। যে আসন গুলি কার্যত অধিকারীদের গড় বলে পরিচিত। ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে এই আসন দুটিতে কাদের পদ্ম প্রতীক দেবেন অমিত শাহ নরেন্দ্র মোদিরা। বিজেপি সূত্রে খবর তমলুক লোকসভা আসন থেকে টিকিট পাচ্ছেন এই কেন্দ্রের বর্তমান তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী যিনি সম্পর্কে শুভেন্দু অধিকারীর ভাই। অপরদিকে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে কাঁথি আসন থেকে তৃণমূলকে কঠিন চ্যালেঞ্জে ফেলতে প্রার্থী হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা বর্তমান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর।
তৃণমূলের শক্তিশালী গড় ঘাটাল থেকে বিজেপির প্রার্থী হতে পারেন একদা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পন্ডা। ঝাড়গ্রাম থেকে টিকিট পাচ্ছেন বর্তমান সাংসদ কুনার হেমব্রম তবে দিলীপ ঘোষ বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি এবার টিকিট নাও পেতে পারেন। সূত্রের খবর এই কেন্দ্রে অর্থাৎ মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিট পেতে পারেন ভারতী ঘোষ।
২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে টিকিট না পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তিনি বর্তমান শিক্ষা দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার। তার বদলে বাঁকুড়া কেন্দ্র থেকে টিকিট পেতে পারেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। অপরদিকে বিষ্ণুপুর আসনে এ বছর টিকিট না পাওয়া সম্ভাবনা প্রবল বর্তমান সাংসদ সৌমিত্র খা’র। এই আসনে তৃণমূল সম্ভবত প্রার্থী করছেন সৌমিত্রর প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতা মন্ডলকে, সেক্ষেত্রে বিজেপির টিকিট সৌমিত্র খা’র বদলে পেতে পারেন শালতোড়ার বর্তমান বিজেপি বিধায়ক চন্দনা বাউরী। পুরুলিয়া থেকে টিকিট পাচ্ছেন বর্তমান সাংসদ জ্যোতির্ময় মাহাতো।
প্রার্থী বদল হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা বর্ধমান জেলার তিনটি আসনেই। বর্ধমান পূর্ব লোকসভায় এইবার টিকিট পেতে পারেন বলরাম বেপারী, অপরদিকে টিকিট পাচ্ছেন না সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া, তার বর্ধমান- দুর্গাপুর আসনে টিকিট পেতে পারেন বর্তমান বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্র পল। আসানসোল লোকসভা আসনে টিকিট পাচ্ছেন প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারি।
বীরভূম জেলা দুটি আসনের থাকছে চমক। বোলপুর লোকসভা আসনে এবার টিকিট পাবার প্রবল সম্ভাবনা কলিতা মাঝির। যিনি লোকের বাড়ি কাজ করে সংসার চালান। গত বিধানসভা নির্বাচনে আউসগ্রাম আসনে বিজেপি প্রার্থী ছিলেন। এবার তাকেই অনুব্রতহীন বীরভূমের বোলপুর আসন থেকে প্রার্থী করতে পারে বিজেপি। অপরদিকে বীরভূম আসন থেকে বিজেপির প্রার্থী হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা প্রাক্তন সাংবাদিক বর্তমানে বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের।