
নিজস্ব সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি : আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস ছিলই। উত্তরবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চল ও সিকিমে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছিল আগেই। সেই আশঙ্কাই সত্যি হলো বুধবার রাত থেকে। প্রবল বর্ষণে উত্তর সিকিমের পাহাড়ি রাস্তাগুলি একের পর এক বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নদীর জল বাড়তে শুরু করতেই উত্তর সিকিমে পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে প্রশাসন। তিস্তার ভয়াবহ রূপ দেখেই এই সতর্কতা জারি করেছিলো স্থানীয় প্রশাসন। তবু সেই সতর্কতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রওনা দিয়েছিল এক পর্যটক বোঝাই গাড়ি। শুক্রবার গুরুদুম্বার লেক থেকে চুংথাং-এর দিকে নামার সময় গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ১০০০ ফুট নিচে তিস্তার উত্তাল জলে তলিয়ে যায়। ঘটনাটি ঘটে মঙ্গন জেলার অন্তর্গত চুংথাং-এর কাছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, গাড়িটিতে চালক-সহ মোট ১১ জন ছিলেন। দুর্ঘটনার খবর পৌঁছতেই মঙ্গন থানা থেকে যোগাযোগ করা হয় সেনাবাহিনী এবং আইটিবিপি-র সঙ্গে। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় তল্লাশি ও উদ্ধার কাজ। গভীর রাত পর্যন্ত চলে অভিযান। উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে মাত্র দু’জনকে—তাঁদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় গ্যাংটকের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি ৯ জন এখনও নিখোঁজ।
শনিবার সকাল থেকে ফের শুরু হয়েছে তল্লাশি। সেনাবাহিনী এবং আইটিবিপি-র বিশেষ প্রশিক্ষিত দল নেমেছে তিস্তার জলে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং নদীর স্রোতের গতিবেগের কারণে উদ্ধারকাজে প্রচণ্ড অসুবিধার মুখে পড়ছেন বাহিনী সদস্যরা।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে পর্যটকদের জন্য আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে উত্তর সিকিম। গত বছর তিস্তার যে ভয়ংকর রূপ সিকিম দেখেছে সেই কারণেই এবছর বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তেই পর্যটকদের জন্য এই সাময়িক নিষেধাজ্ঞা। যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন ।
উল্লেখ্য, গত বছর অক্টোবর মাসে সিকিমে তিস্তার আকস্মিক প্লাবনে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। সেই ঘটনার স্মৃতি এখনও টাটকা। সেই কারণেই এবার বর্ষা শুরু হতেই আগেভাগে পর্যটকদের জন্য উত্তর সিকিমে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল প্রশাসন। কিন্তু সেই সতর্কতা উপেক্ষা করেই ঘটল এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “আমরা আগেই সতর্ক করেছিলাম। আবহাওয়ার অবনতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ করে দেওয়া হয় পর্যটকদের যাতায়াত। তবুও কিছু গাড়ি বিভিন্ন পথে পাহাড়ে উঠে যাচ্ছিল বলে খবর ছিল। দুর্ঘটনার পর আমরা উদ্ধারকাজে কোনও ত্রুটি রাখছি না।”
প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং অবহেলার ফলে তৈরি হওয়া এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পর্যটন দপ্তরও নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে বলে সূত্রের খবর। নিখোঁজদের খোঁজে আপাতত চলছে তল্লাশি। তিস্তার অতল জলে কতটা সাড়া মেলে—সে দিকেই তাকিয়ে উত্তর সিকিম।