
নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর চব্বিশ পরগনা : খড়দহের আদর্শপল্লীর ছোট্ট এক গলির ভেতরে লুকিয়ে থাকা এক অনন্য জয়ের গল্প এখন রাজ্যের মুখে মুখে। ষাঠোর্দ্ধ এক নারী, যিনি একসময় মাধ্যমিক পরীক্ষাও দিতে পারেননি, তিনিই আজ স্নাতকোত্তরে ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে নজির গড়লেন। নাম তাঁর বন্দনা সরকার।
একসময়কার স্বনামধন্য সুরকার প্রবীর সরকারের স্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত নাট্যকার প্রবীর গুহর বোন এই বন্দনাদেবী। পড়াশোনার শুরুটা যে সহজ ছিল না, তা তিনিই খোলাখুলি জানিয়েছেন সংবাদমাধ্যমে। বিয়ে হয়ে যাওয়ায় মাধ্যমিক পরীক্ষাও দেওয়া হয়ে ওঠেনি। দিনের পর দিন হীনমন্যতায় ভুগেছেন, মনের মধ্যে গুমরে মরেছে ‘অপূর্ণতা’র বেদনা। কিন্তু হার মানেননি।
যে বয়সে বেশিরভাগ মানুষই বিশ্রাম নেওয়ার কথা ভাবেন, তখন তিনি আবার খাতা-কলম হাতে তুলে নেন। মুক্ত বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, তারপর উচ্চমাধ্যমিক, সেখান থেকে স্নাতক স্তর পেরিয়ে অবশেষে সদ্য প্রকাশিত স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ। তাও আবার প্রথম শ্রেণিতে।
এই পথ চলা ছিল না একা। পাশে ছিল তাঁর পরিবার, যা তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি। তাঁরা অবিরাম আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছেন, পড়াশোনায় সহযোগিতা করেছেন, আর সর্বদা মনে করিয়ে দিয়েছেন ‘পড়াশোনার কোনও বয়স হয় না’।
ফলাফল প্রকাশ হতেই যেন স্বপ্নপূরণ ! উচ্ছ্বসিত বন্দনা সরকার বলছেন, “আজ আমি যেন নতুন করে জন্ম নিলাম। আমি নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছি, এটাই আমার সবথেকে বড় পাওয়া।”
স্বামী প্রবীর সরকার বলছেন, “ওর জেদটা বরাবর দেখেছি। তবে পড়াশোনার জেদটা দেখে আমরাও অভিভূত। বয়স যে শুধুই একটা সংখ্যা, বন্দনা সেটা আজ সবাইকে শিখিয়ে দিল।”
আজকের এই সমাজে যেখানে মেয়েদের অনেক সময়ই পড়াশোনা, বিশেষ করে বিয়ের পর, থেমে যায়, সেখানে বন্দনা সরকারের এই কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণার। শুধু নারীদের নয়, সমাজের প্রতিটি মানুষকে শেখায়, স্বপ্ন দেখতে কোনও দিন দেরি হয় না। আর তা ছুঁতে চাই শুধু অদম্য জেদ আর অধ্যবসায়।