
ওঙ্কার ডেস্ক : ফের উসকানিমূলক কথায় জড়াল বাংলাদেশ। সে দেশের এক অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্তা এএলএম ফজলুর রহমান সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, “ভারত যদি পাকিস্তানকে আক্রমণ করে তাহলে তাহলে বাংলাদেশের উচিত হবে উত্তর পূর্ব ভারত দখল করে নেওয়া”। এব্যাপারে চিনের সঙ্গে যৌথ সামরিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন। উত্তর পূর্ব ভারতের সাত রাজ্য নিয়ে এর আগেও মাঝে মাঝে এমন আপত্তিজনক কথা উঠেছে। গত মার্চে চিন সফরে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস ভারতের উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিকে ল্যান্ড লকড বা ভূমি বেষ্টিত এলাকা বলে উল্লেখ করেছিলেন। যুক্তি হিসেবে দেখাতে চেয়েছিলেন, ভারতের ওই এলাকার সঙ্গে সমুদ্রের যোগ নেই। যা আছে বাংলাদেশের।
উত্তর পূর্ব ভারতের নিরাপত্তা নিয়েও বারবার অবাঞ্ছিত কথায় মেতেছে বাংলাদেশ। এবার মুখ খুলেছেন ফজলুর রহমান। তিনি বিডিআর হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নিয়োজিত কমিশনের চেয়ারম্যান।
সমাজমাধ্যমে তাঁর প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভারত সরকার সরকারিভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া না দিলেও ঢাকার সরকারি কর্তারা সতর্ক। আপত্তিকর পরিস্থিতি সামলাতে চটজলদি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করেছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, ফজলুর রহমানের বক্তব্যের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার একমত নয়। এটা তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত। এই বক্তব্যের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকে জড়ানো ঠিক হবে না।
বিডিআর কমিশনের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান সমাজমাধ্যমে আরও লিখেছেন, ‘একথা আমি বলেছি। কেন বলেছি তার বিশ্লেষণ হল ভারতের বিজেপি সরকারের সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে যে ভারতে এনআরসি বা নাগরিক পুঞ্জি চালু করে ভারতের মুসলমানদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে আবদ্ধ করে হত্যা করা। কিংবা ভারতের মুসলমানদের বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তানে পুশ করে পাঠিয়ে দেওয়া। এই পরিকল্পনা ভারত নিয়েছে ইজরায়েলের কাছ থেকে। আপনারা লক্ষ্য করছেন কীভাবে ভারতে মুসলমানদের হত্যা করা হচ্ছে”।
অবসরপ্রাপ্ত ওই সামরিক কর্তা তথা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের তৈরি গুরুত্বপূর্ণ কমিশনের প্রধানের কথায়, এই উপমহাদেশে মূলত দুটি মুসলমান দেশ পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। মালদ্বীপ এতো ছোট আর সামরিক ভাবে দুর্বল যে ভারতে মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার কোনও দায়িত্ব মালদ্বীপ পালন করতে পারবেনা। তাহলে ভারতে মুসলমানদের জান এবং মাল রক্ষার মূল দায়িত্ব পালন করতে হবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে।
তিনি লেখেন, “এইতো কয়দিন আগে ভারতে মুসলমানদের ওয়াকফ সম্পত্তির সবটাই বিজেপি সরকার কেড়ে নিয়েছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই ভারতে মুসলমানদের কবর দেওয়ার জায়গা পাওয়া যাবেনা। ভারতে কোনও মাদ্রাসা, মসজিদ থাকবে না। কারণ শত শত মসজিদ, মাদ্রাসা ওয়াকফ জমির উপর অবস্থিত এবং ওয়াকফের টাকায় চলে। ওয়াকফ না থাকলে এইসব মসজিদ থাকবেনা। মাদ্রাসাও থাকবে না। ইতিমধ্যেই ভারতের সরকার রাস্তা এবং খোলা স্থানে নমাজ পড়া নিষিদ্ধ করেছে। অথচ হিন্দুরা রাস্তায় হোলি খেলছে এবং রাস্তায় দলবেঁধে অনুষ্ঠান করছে বাধাহীন ভাবে”।
ফজলুর মনে করছেন, “এবারে নরেন্দ্র মোদী সরকার পাহেলগামে নিজেরা পর্যটকদের হত্যা করে পাকিস্তানের উপরে দোষ চাপিয়ে আক্রমণ করে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেছে। যদি ভারত পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয় তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি ভারতের হুমকি কি পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে কল্পনা করতে পারেন! তাই পাকিস্তানকে সামরিকভাবে রক্ষা করা এখন আমাদের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এর মানে এই নয় যে আমাদেরকে পাকিস্তানের বন্ধু হতে হবে। এটা একটা স্ট্রাটেজিক বিষয়। পারস্পরিক নির্ভরতার বিষয়। যদি ভারত পাকিস্তানকে আক্রমণ করে তবে চিনের সঙ্গে মিলে ভারতের উত্তর পূর্ব সাত রাজ্যকে দখলে নেওয়া এটা ভারতের পাকিস্তান আক্রমণের রিজিওনাল ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া। যাতে ভারত পাকিস্তান আক্রমণ করতে উৎসাহিত না হয়। পরিশেষে বলবো আমার কাছে সব চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এই উপমহাদেশে মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করা। মুসলমান বান্ধব মানুষদের স্বার্থ রক্ষা করা। কে কি ভাবল তা নিয়ে আমার কোনও মাথা ব্যাথা নাই”।