
নিজস্ব সংবাদদাতা, বারাসত : দলের অন্দরের দুর্দশা সামনে এসে পড়ল সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির নির্বাচনে। ভোটাভুটিতে হেরে গেলেন পূর্বতন জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী। যা একটা বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন দলীয় নেতারা। সেই সঙ্গে বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়ল রাজ্য সিপিএম। দলীয় নেতৃত্বের একটা বড় অংশ এ নিয়ে সরব হচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, মৃণাল চক্রবর্তী যে দলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছিলেন, তা বার বার বলা সত্ত্বেও কর্ণপাত করেনি রাজ্য নেতৃত্ব। তাই এই হার শুধু মৃণালের একার নয়, বরং আলিমুদ্দিনের তরফে যাঁরা এই জেলার দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের অদূরদর্শিতাকেই সামনে এনে ফেলল। ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে সিমিএমের রাজ্য সম্মেলন, তার আগে উত্তর ২৪ পরগনার এই পরিস্থিতি অস্বস্তিতে রাখল রাজ্য নেতাদের।
বারাসতে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলন শেষ হয় গত রবিবার। নতুন জেলা কমিটির জন্য ৭৪ জনের নামের যে প্যানেল পেশ হয়েছিল, তার পাল্টা পক্ষ থেকে আরও ২৭ জনের নাম জমা পড়ে। এই নিয়ে চলতে থাকে নানান বাকবিতন্ডা। ফলে জেলা কমিটি গঠন না করেই ২৬তম জেলা সম্মেলনের ইতি টানতে হয়। পরে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ২৫ জনের নাম প্রত্যাহার করান গেলেও বেঁকে বসেন সল্টলেক এবং মধ্যমগ্রামের দুই নেতা। তাঁরা নাম প্রত্যাহার করেননি। ফলে জেলা কমিটি বাছতে ভোটাভুটি অনিবার্য হয়ে পড়ে। রবিবার সেই ভোটাভুটি হয় বারাসতে দলের জেলা দফতরে। কিন্তু ভোট গণনার পর দেখা যায়, হেরে গিয়েছেন মৃণাল চক্রবর্তী, অথচ জিতেছেন মধ্যমগ্রামের নেতা সনৎ বিশ্বাস।
গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলন। শুরু থেকেই দাবি উঠেছিল তৎকালীন জেলা সম্পাদক মৃণালকে সরিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু দলের জেলা নেতাদের এই দাবিকে তোয়াক্কা করেনি রাজ্য কমিটি। দফায় দফায় আলোচনা চলেছে, যদিও মেলেনি কোনো মীমাংসা-সূত্র। এই পরিস্থিতিতে গত রবিবার সম্মেলন শেষ হয়। বিপর্যয় সামাল দিতে সম্মেলনে এসেছিলেন আলিমুদ্দিনের অনেকেই। উপস্থিত হয়েছিলেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী, কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিটব্যুরোর সদস্যেরাও। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। এরপর রবিবার ভোটাভুটি করে কমিটি তৈরি এবং সম্পাদক নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য নেতৃত্ব।
মৃণালের এই হারে সিপিএমের তৃতীয় বিকল্পের নীতিও ধাক্কা খেল বলে মনে করা হচ্ছে। এইসঙ্গে এক প্রাক্তন মন্ত্রীর আধিপত্যও যে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে কার্যত উবে গেল তাও মানছেন অনেকে। দলীয় সূত্রে খবর, রবিবারের ভোটাভুটিতে দলের আরও এক জন বড় নেতা, যিনি বাম আমলে এক মন্ত্রীর আপ্তসহায়ক ছিলেন, দলের মধ্যে তাঁরও অবস্থা অনুকূল নয়। প্রায় হেরে যেতে যেতে এ যাত্রায় টিকে গেছেন। আগামী বুধবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদক নির্বাচন, তত দিন রাজ্যসম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য পলাশ দাসকে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।