
নিজস্ব সংবাদদাতা : নাড়ুর দেখভাল কে করবে ? বয়স ষাঠ পেরোলেও সব মায়ের কাছে তার সন্তানের কী আর বয়স বাড়ে ! তাই বুঝি বঙ্গ রাজনীতির জাঁদরেল বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষও হার মানলেন। এতদিনের কৌমার্য ভাঙতে চলেছেন তাঁরই রাজনৈতিক সহকর্মী রিঙ্কু মজুমদার। বিষয়টি নিয়ে টানা হেঁচড়া চলছিল বহুদিন ধরে। তবে তা ফল্গুর মতো বইলেও, তেসরা এপ্রিল আছড়ে পড়ল ইডেনে। ওই দিন ক্লাব হাউসের ১১ নম্বর বক্সে বসে খেলা দেখছিলেন দিলীপ ঘোষ, তাঁর হবু স্ত্রী এবং হবু শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। হবু সন্তানও ছিল সেই পাকাদেখার মুহূর্তে।
তবে এই দিনটি হঠাৎই আসেনি। আবেগটা হয়তো ছিল অন্তঃসলিলা। সেই কবে বিজেপি করার সূত্রে আলাপ দু’জনের। গত লোকসভা ভোটে হেরে যাওয়ার পর দিলীপ যখন খানিক বিমর্ষ, তখনই পাশে এসে দাঁড়ান রিঙ্কু। ডিভোর্সি নেত্রী তাঁকে ভরসা দেওয়ার জন্য সংসার বাঁধার প্রস্তাব দেন। কিন্তু সংসারে কী আদৌ মর্জি ছিল দিলীপের ! তাঁর মায়ের পীড়াপীড়িতে অবশেষে রাজি হতে হল। কিন্তু এটা কি আসল কারণ ? দিলীপও কী বুঝতে পারছিলেন না জীবনের এই বৃত্তটিও জরুরি ! হয়তো বয়সের ভারে তিনিও অনুভব করেছিলেন, জীবন সংগ্রামে একাকীত্বের ভার কখনো সখনো অসহনীয় হয়ে ওঠে। যে কারণে সোমেন মিত্র, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি কিংবা লক্ষণ শেঠের মতো বর্ষীয়ান নেতারা জীবনের শেষ প্রান্তে এসে খুঁজে নিয়েছিলেন নিজেদের জীবনসঙ্গী।
বিষয়টা জানাজানি হতেই বেশ কৌতুহল দেখা যাচ্ছে বাংলার রাজনৈতিক মহলে। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক কুনাল ঘোষ তাঁর এক্স-হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “আগামীকাল কি কোনো সিনিয়র বিজেপি অবিবাহিত নেতার বিয়ে ? রেজিস্ট্রি হচ্ছে ? পাত্রী বিজেপিরই কর্মী ? পার্টির একাংশা কি নেতাকে বারণ করছেন ? যাই হোক, তিনি পার্টির মতামত উড়িয়ে দিয়ে কি নিজের সিদ্ধান্ত রাখবেন ? যদি কাল বিয়েটা হয়, শুভেচ্ছা থাকল।” জানা গেছে, দিলীপ যাতে বিয়ে না করেন, তার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে সঙ্ঘ পরিবারের একাংশ। তাঁদের কেউ কেউ পাড়ি দিয়েছেন দিলীপের বাড়িতেও। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে জানা গেছে, দিলীপ আর কথা ফেরাচ্ছেন না। সিদ্ধান্ত পাকা। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আর ফেরা সম্ভব নয়। তবে সবাই যে দিলীপের এই হঠাৎ পরিবর্তনে বিস্মৃত তা নয়, অনেকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন। দিলীপ অবশ্য দিলীপেই আছেন। স্বভাব ভঙ্গিতে কোনো পরিবর্তন নেই। খোলসা করে তিনি এখনও জানাচ্ছেন না কিছু, আবার জোর দিয়ে অস্বীকারও নয়। এই সংশয়ে মাত্রা বাড়িয়েছেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথাগত রায়। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় জনৈক অর্ঘ্য কুমার নামে এক নেটিজেনের এই বিষয়ক পোস্টে মন্তব্য করেছেন, কিন্তু দিলীপবাবু তো একজন সংঘ প্রচারক ! এঁরা তো বিয়ে করেন না ! এ কি সত্য ?
সব ঠিকঠাক থাকলে শুক্রবারই দিলীপ-রিঙ্কুর চারহাত এক হবে। সানাই বাজুক, কিংবা না বাজুক, বিয়েটা হলে হয়। তাঁর মা চাইছেন, দিলীপ বিয়ে করে সংসারী হোক। অন্তত তাঁরও তো সময় কাটে। কতক্ষণই বা ছেলেকে পান। রাজনীতির কারণে তাঁর নাড়ুকে ভারত চষে বেড়াতে হয়। অন্তত গৃহবধূ এলে এই শেষ বয়সে তাঁরও সঙ্গী মেলে।
কিন্তু এই সিদ্ধান্তে আসার ক্ষেত্রে বাধা ছিলেন দিলীপই। এবং তা রাজনীতির কারণেই। দিলীপ ঘোষ হয়তো ভেবে ছিলেন, রাজ্য বিজেপির সভাপতি হতে পারেন। সেক্ষেত্রে সাংসারে মন দেওয়ার সময় কোথায় ! সামনেই তো নির্বাচন। কিন্তু বিজেপির মতিগতি দেখে সেই আকাঙ্ক্ষা বোধ হয় ম্লান হয়েছে। এখন তাহলে সংসারের রঙ মাখতে বাধা কই !