
ওঙ্কার বাংলা অনলাইন ডেস্ক, শুভাশিস চট্টোপাধ্যায়ঃ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও শুক্রবার এনডিএর বৈঠকে ফের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শিলমোহর পড়ে গেল মোদীর নাম। আর কাকতালিয় ভাবে এদিনই প্রকাশ্যে এল সংসদ ভবনের স্থায়ী ঠিকানা থেকে স্থানচ্যুত হলেন মহাত্মা গান্ধি। বাপুর সুবিশাল যে মূর্তি সংসদ ভবনের অন্যতম আইকন হিসেবে গড়ে উঠেছিল বিগত অর্ধশতক ধরে, সেখান থেকে স্থানচ্যুত হয়ে জাতীর জনকের ঠাঁই হল নতুন সংসদ ভবনের একদম পিছনের এক কোনায়। বাদ গেল না সংবিধান প্রনেতা বাবা সাহেব আম্বেদকর, ছত্রপতি শিবাজি, রাণাপ্রতাপ, বীরসা মুণ্ডার মূর্তিও। দেশবরণ্য নায়কদের ঠাঁই হল নতুন সাংসদ ভবনের একদম পিছনে, এককোনে। পুরনো সংসদ ভবনের সামনে মহাত্মা গান্ধির ১৬ ফুট উঁচু ব্রোঞ্জের মূর্তিটি ভাস্কর রাম ভি সুতারের তৈরি। এমন নয় যে আগে কখনও বাপুর মূর্তির স্থান বদল হয়নি। নতুন সাংসদ ভবন তৈরির সময়েও মহাত্মা গান্ধির মূর্তিটির সামান্য স্থান বদল হয়েছিল। কিন্তু তখন নতুন ও পুরনো সংসদ ভবনের মাঝের স্থানে রাখা হয়েছিল বাপুর মূর্তিটি। কিন্তু এবার জাতীর জনকের মূর্তিটিকে একেবারে পিছনের সারিতে ঠেলে দেওয়ায় সমালোচনায় সরব কংগ্রেস সহ অন্যান্য বিরোধীরা। কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ ঘটনাকে ভয়াবহ আখ্যা দিয়ে বলেছেন সংসদ চত্বরে বিরোধীদের বিক্ষোভে ইতি টানতেই এটা মোদীর তানাশাহি সিদ্ধান্ত। কংগ্রেস নেতা পবন খেরার আবার অভিযোগ বিজেপি সংবিধান প্রনেতা আম্বেদকরকেই ছাড় দিচ্ছে না। ৪০০ আসন পেলে কি সংবিধানকে ছাড় দিত ? তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকারের আবার প্রশ্ন গান্ধিজি, বাবা সাহেব আম্বেদকরের জায়গায় কি নাথুরাম গডসে এবং নরেন্দ্র মোদীর মূর্তি বসানো হবে ?
প্রসঙ্গত মোদীর শাসনে একাধিকবার গান্ধি হত্যাকারি নাথুরাম গডসেকে বহুবার হিরো বা দেশপ্রেমিক হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছে আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বিজেপি। কিন্তু দেশ জুড়ে প্রবল প্রতিবাদের মুখে পড়ে প্রত্যেক বারই পিছু হঠতে হয়েছে বিজেপিকে। যদিও বাপু সম্পর্কে প্রকাশ্যে কোনও অসম্মানজনক মন্তব্য করেন নি নরেন্দ্র মোদী। বরং স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পে গান্ধিজির চশমাকে ধার নিয়ে প্রচার চালিয়েছেন তিনি। তবে কংগ্রেস সহ বিরোধীদের অভিযোগ মোদী নাথুরাম গডসের বিরোধিতা কখনোই করেন নি। সিপিআই সহ বিরোধী একাধিক সাংসদ এই বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছেন। বিজেপি শিবিরের বক্তব্য সংসদ ভবন চত্বরে কোথায় কোন মূর্তি বসবে তা সম্পূর্ণ লোকসভার স্পিকারের সিদ্ধান্ত। পাশাপাশি বিজেপি শিবিরের দাবি আগে সংসদ ভবন চত্ত্বরে মূর্তিগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। ফলে দর্শনার্থীদের তা ঘুরে ঘুরে দেখতে অসুবিধা হতো, এতে বরং দর্শণার্থীদের মূর্তিগুলি দেখতে সুবিধা হবে বলেই মত পদ্ম শিবিরের। কিন্তু তাতেও বিতর্ক থামার নাম গন্ধ নেই। মোদীর তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর কুর্শিতে বসার আগে কোনঠাসা বাপু থেকে আম্বেদকর। একি নিছকই ভুল না অদ্ভুত সমাপতন। উত্তর দেবে ভাবীকাল।