
ওঙ্কার ডেস্ক : ভারতীয় আঞ্চলিক সাহিত্যের জয়যাত্রা, বুকার পেলেন বানু মুশতাক । অভিনব লেখা কান্নড় গল্পগ্রন্থ ‘হার্ট ল্যাম্প’ এর জন্য পরিচিতি পেলেন তিনি । আন্তর্জাতিক স্তরে অনন্য সম্মান অর্জন করলেন বানু মুশতাক । কন্নড় ভাষায় লেখা বানু মুশতাকের গল্পসংকলন ‘হার্ট ল্যাম্প’, ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন দীপা ভাস্তি। লেখিকা বানু মুশতাক ও অনুবাদক দীপা ভাস্তি যৌথভাবে জিতলেন আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার ২০২৫ । তিরিশ বছরের বেশি সময় ধরে ‘হার্ট ল্যাম্প’ গল্পগ্রন্থ এর ১২ টি সংকলন তৈরি করা হয়েছে । এই প্রথম কোন ও কন্নড় মহিলা বুকার পুরস্কার পেলেন ।
বানু মুশতাক একজন আইনজীবী ও সমাজকর্মী , বয়স ৭৭ । তিনি ১৯৯০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ‘হার্ট ল্যাম্প’ গল্পগ্রন্থ এর ১২ টি সংকলন তৈরি করেছেন । সেই সংকলনে মুসলিম মহিলাদের জীবনের দৈনন্দিন সংগ্রাম, দমন, লিঙ্গবৈষম্য ও অপ্রতুল জীবনের স্পষ্ট চিত্র উঠে এসেছে ।
মঙ্গলবার লন্ডনের টাটা মর্ডান মিউজিয়ামে ছিল এই বুকার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। বানু মুশতাকের ও দীপা ভাস্তি কে পুরস্কার হিসাবে দেওয়া হয়েছিল ৫০ হাজার পাউন্ড। যা ভারতীয় মরলে ৭৫ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা।
বানু মুশতাক পুরস্কার পেয়ে বলেন, “এই মুহূর্ত যেন হাজারো জোনাকির আলোয় এক আকাশ আলোকিত হওয়া—ছোট, ঝলমলে, কিন্তু সবার জন্য এই আলো। এই সম্মান শুধু ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বৈচিত্র্যকে আলিঙ্গন ও একে অপরকে তুলে ধরার যে যৌথ স্বপ্ন, তারই জয়।”
তিনি আরও জানান , তিনি বলেন, ”ধর্ম, সমাজ ও রাজনীতি মহিলাদের থেকে প্রশ্নবিহীন আনুগত্য চায়। এবং এভাবেই মহিলাদের সঙ্গে অমানবিক নিষ্ঠুর আচরণ করে নিছক অধস্তন বানিয়ে দেওয়া হয়।”
বানু মুশতাকের গল্পগুলিতে বিশেষ করে মহিলাদের জীবনের দুঃখ আশা ভঙ্গের ছবি ফুটে ওঠে। কখনো তা তুলে ধরা হয়েছে বিদ্রুপাত্মক হাস্যরসের মাধ্যমে। তার রচিত “Be women once, Oh Lord!” গল্পে একজন মহিলা ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে বলছেন – ” জগত যদি আবার সৃষ্টি করো, তবে নিজেই একবার মহিলা হয়ে এসো পৃথিবীতে, প্রভু!” ‘Stone Slabs for Shaista Mahal’ গল্পে দেখা যায়, এক স্বামী স্ত্রীর উদ্দেশ্যে তাজমহলের চেয়ে সুন্দর প্রাসাদ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও স্ত্রীর মৃত্যুর পর তাকে ভুলে যায়। ফলত, পড়াশোনা বিসর্জন দিয়ে তাঁর মেয়েকেই সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়।
অন্যদিকে দীপা ভাস্তির অনুবাদকে পুরস্কারজুরি প্রধান ম্যাক্স পোর্টার যেভাবে বর্ণনা করেছেন তা গায়ে কাঁটার দেওয়ার মত। তাঁর কথায়, এ হল ‘ভাষাকে নাড়িয়ে দেওয়া এক বিপ্লবী অনুবাদ’। তাঁর মতে, “এই গল্পগুলি কেবল ভাষাগত বৈচিত্র্যে নয়, নারীর অধিকার, ধর্ম, জাত, ক্ষমতা ও নিপীড়নের জটিল স্তরগুলি ফুটিয়ে তুলেছে।” ২০২২ সালে গীতাঞ্জলি শ্রী তাঁর হিন্দি উপন্যাস ‘রেত সমাধি’ -এর জন্য আন্তর্জাতিক বুকার জেতেন।
পুরস্কারপ্রাপ্তির পর বানু মুশতাক বলেন, “এই বই কোনও স্থানীয় গল্পের সংকলন নয়, বরং এ বিশ্বজনীন গল্পের আঙ্গিকে রচিত”। অন্যদিকে দীপা ভাস্তি বলেন, “বিশ্বের ইতিহাস মূলত মুছে ফেলারই ইতিহাস—বিশেষ করে মহিলাদের কণ্ঠস্বর ও কৃতিত্ব প্রায়শই অদৃশ্য করে দেওয়া হয়। এই পুরস্কার আঞ্চলিক ভাষার সাহিত্যিকদের আরও সামনে আসার পথ খুলে দেবে।” ‘হার্ট ল্যাম্প’-এর জয় জয়কারে গর্বিত গোটা দেশবাসী ।