
নিজস্ব সংবাদদাতা : মেডিকেল কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে টালবাহনা চলে আসছিল। মূলত এই নির্বাচন নিয়ে বিরোধ দেখা দেয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে দুই বামপন্থী ছাত্র ইউনিয়ন এমসিবিএসএ এবং ডিএসও-র। এর মধ্যে সোমবার হয়ে গেল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে জানান হয়েছে, “নিয়ম না মেনে দুই ছাত্র সংগঠনকে সুবিধা করে দেওয়া হল”। অভিযোগের তীর কার্যত অধ্যক্ষ্র দিকে বলে মনে করছেন মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়ারা। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ জানিয়েছে, “নির্বাচনের বিষয়ে তাঁদের কিছুই জানানো হয়নি। সেই কারণেই মনোনয়ন জমা দেওয়া যায়নি”। অধ্যক্ষের পদত্যাগ এবং নতুন করে স্টুডেন্ট কাউন্সিল ভোটের দাবি জানিয়েছে তারা। জবাবে এমসিবিএসএ এবং ডিএসও-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “কলকাতা মেডিকেল কলেজে তৃণমূলের অস্তিত্বই নেই”।
এই বাকবিতণ্ডার মধ্যে অবশেষে শেষ হয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচন। সোমবার সকাল থেকে ২০টি আসনের জন্য ভোটগ্রহণ শুরু হয়, চলে দুপুর ৩টে পর্যন্ত। ফল ম্প্রকাশ হবে বুধবার সন্ধ্যাতে, এমনটা জানান হয়েছে।
এ বার মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা প্রায় এক হাজার। ভোটগ্রহণ হয় চারটি বর্ষের ৫টি করে মোট ২০টি পদে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে মূল সংগঠন হল মেডিক্যাল কলেজ ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বা এমসিডিএসএ। তারা সবক’টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। চারটি আসনে লড়ছে এসউসিআইয়ের ছাত্র সংগঠন ডিএসও। বাকি আসনগুলিতে কেউ কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ব্যক্তিগত ভাবে।
২০২২ সালে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন পড়ুয়ারা। এমন কি এই নির্বাচনের জন্য দীর্ঘ ১২ দিন ধরে অনশন চালান কয়েক জন পড়ুয়া। ১২ দিনের মাথায় অনশন প্রত্যাহার করার সময় আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা ঘোষণা করেন, নিজেদের ভোট তাঁরা নিজেরাই করবেন। তখন নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠে। শেষমেশ সমাজের বিশিষ্টদের তত্ত্বাবধানে এই ভোট করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সমাজকর্মী ও চিকিৎসক বিনায়ক সেন, অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র, সমাজকর্মী বোলান গঙ্গোপাধ্যায় এবং মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্রকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নজরদারির করতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন পড়ুয়ারা। তাতে রাজি হন তাঁরা। শেষমেশ এই নির্বাচনকে মান্যতা দেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে প্রতি বছর ভোট হচ্ছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে।
তবে এ বছর মূলত আরজি কর কাণ্ডের জেরে নির্বাচন দেরীতে হল। নাহলে এটা ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে হয়ে থাকে। এমসিডিএসএ-র দাবি, এ বারও তৃণমূল নির্বাচনে নানা ভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। যদিও সেই বাধা কাটিয়ে তারা ভোটপ্রক্রিয়ার আয়োজন করতে পারলো। অবশ্য, এই নির্বাচনকে ধর্তব্যের মধ্যে ধরতে নারাজ তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। তাঁদের অভিযোগ, “এই নির্বাচনের বিষয়ে স্বাস্থ্য ভাবন বা ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ হেল্থ সায়েন্সেস, কেউ জানত না”।