
বিপ্লব দাশ : জমির অর্থনৈতিক সম্ভাবনার পথ উন্মুক্ত না হলে দেশের সার্বিক উন্নতি সম্ভব নয়। দেরীতে হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের হয়তো এই অতি বাস্তব উপলব্ধি হয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নোয়ন মন্ত্রী জানিয়েছেন, “যদি আমরা দ্রুতগামী সড়ক, স্মার্টসিটি, সুরক্ষিত আবাসন, সুস্থিত কৃষি চাই তাহলে আমাদের আক্ষরিক অর্থে জমি দিয়েই শুরু করতে হবে”। কিন্তু দেখা গেছে, নিম্ন আদালতে দেওয়ানি মামলার ৬৬ শতাংশের বেশি জমি এবং সম্পত্তি বিবাদ সংক্রান্ত। এমনকি সুপ্রিমকোর্টে বকেয়া মামলার এক চতুর্থাংশই জমি সংক্রান্ত। ফলে ভারতে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নই সবচেয়ে বড় সমস্যা।
এই সমস্যা মেটাতে কেন্দ্র প্রথমিকভাবে একটি পদক্ষেপ করেছে, তা হল- রাজ্যগুলিকে আবেদন জানান হয়েছে তারা যেন রেকর্ডস অফ রাইটস-এর সঙ্গে আধার নম্বর যুক্ত করার কাজ সম্পূর্ণ করে। এই সংস্কারে জমির মালিকানার সঙ্গে ইউনিক ডিজিটাল আইডেন্টিটি যুক্ত করলে বেনামদারদের দূর করে এগ্রিস্ট্যাক, পিএম কিষাণ এবং শস্যবিমার মতো সুবিধাগুলি উদ্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছোন নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। তাতে জমির অর্থনৈতিক সম্ভাবনার পথ উন্মুক্ত হবে। কারণ, নথির সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির মিল থাকলে ব্যঙ্কগুলি নির্দ্বিধায় ঋণ দিতে পারবে, ব্যবসায়ীরা নিশ্চিন্তে লগ্নি করতে পারবে এবং কৃষকরাও কৃষি সহায়তা পাবে। যদিও এই কাজটি আদৌ সহজ নয় এবং সময় সাপেক্ষও বটে। যেহেতু এই কাজের সঙ্গে প্রশাসনিক, কারিগরী এবং সাধারণ মানুষের বিশাল যোগদান প্রয়োজন, তাই এর গতিও নিরুপায় ভাবে শ্লথ। তাই এই পরিকল্পনা রূপয়িত করতে হলে সংযম এবং দায়িত্বশীল হতে হবে। কেন্দ্রের পরিসংখান বলে, এখনও পর্যন্ত মাত্র ৪ শতাংশ গ্রামে এই সমীক্ষা এবং পুন:সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে।
ভারতে জমি শুধুমাত্র একটি সম্পত্তি নয়, এটি পরিচিতি নিরাপত্তা এবং মর্যাদার প্রতীক। এ দেশের ৯০ শতাংশ নাগরিকের কাছে জমি এবং সম্পত্তি সবচেয়ে মূল্যবান অধিকার। তবুও দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের বিবাদের মূলে প্রকৃত দায়ী হল জমির ত্রুটিপূর্ণ সীমানা নির্ধারণ এবং তামাদি হয়ে যাওয়া নথি। ফলে উন্নয়নে গতি আসেনি এবং উপযুক্ত বিচারও পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং জোরালো সমন্বয় ছাড়া এই কাজ সম্ভব নয়।