
নিজস্ব প্রতিনিধি : ৪২ আসন। অথচ প্রার্থী মাত্র ৮ আসনে! বাকী আসনে আদৌ প্রার্থী ঘোষনা হবে কিনা, বা আদৌ বাকী আসনে দল লড়াই করবে কিনা, পুরোটাই ‘ রাম জানে’। তাহলে কি আদৌ ভোট নিয়ে সিরিয়াস নয় বঙ্গ কংগ্রেস? অনেক টাল বাহানার পর বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হলো রাজ্যের ৮ আসনের প্রার্থী। উত্তরে রায়গঞ্জ, মালদহ (উত্তর) মালদহ ( দক্ষিণ)। দক্ষিণবঙ্গে উত্তর কলকাতা, পুরুলিয়া, বীরভূম, বহরমপুর, জঙ্গীপুর।
তবে বাকী আসনে ভবিষ্যৎ কী? কত আসনে বা বামেদের সাথে জোট? জোটে কী শুধু সিপিএম নাকি অন্য শরিকরাও ? না তাও এখনও স্পষ্ট নয়।
তবে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকজন জেলা সভাপতি লিখিত ভাবে বামেদের সাথে জোট করার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আবার জোট প্রার্থী নিয়েও রীতিমত অস্বস্তিতে প্রদেশ নেতৃত্ব। যেমন আলিপুরদুয়ার এর আরএসপি প্রার্থী নিয়ে তীব্র অসন্তুষ্ট কংগ্রেস কর্মীরা। এমনকী এই কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছেন তারা। বাংলায় কার্যত দিশেহারা অবস্থা কংগ্রেসের। এমনকী রাজনৈতিক মহলের মতে, আদৌ লোকসভা নির্বাচন নিয়ে খুব একটা সিরিয়াস নয় বঙ্গ কংগ্রেস। যেমন দেখা যাক উত্তর কলকাতা। এই কেন্দ্রে প্রার্থী প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। উত্তর কলকাতা একদা সৌমেন মিত্র’র গড়। এই কেন্দ্রে লড়াই হেভিওয়েট সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এর সাথে। পদ্ম শিবিরের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা সদ্য প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়। কংগ্রেসের একটা বড় অংশের মতে, উত্তর কলকাতার মতো কেন্দ্রে যেখানে দলীয় সংগঠন প্রায় নেই বললেই চলে, সেখানে শুধুমাত্র সিপিএম এর কাঁধে ভর করে ভোট লড়া ভুল সিদ্ধান্ত। তার ওপর প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্য’র মতো বর্ষিয়ান প্রার্থী। আরও বড় কথা উত্তর কলকাতা কেন্দ্রে প্রদীপ ভট্টাচার্য-র জন সংযোগ প্রায় শূন্য। সেখানে এই কেন্দ্রে জমানত বজায় রাখাটাই বড় প্রাপ্তি।
আসা যাক পুরুলিয়ার কথায় ইতিমধ্যেই এই কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লক। অপরদিকে প্রার্থী ঘোষনা করেছে এআইসিসি। প্রার্থী হয়েছেন জেলা সভাপতি এবং প্রাক্তন বাঘমুন্ডি’র বিধায়ক নেপাল মাহাতো। গত লোকসভা নির্বাচনে একমাত্র এই কেন্দ্রে জমানত ধরে রাখতে পারে কংগ্রেস।
তবে নেপাল মাহাতোকে নিয়ে দলের একটা বড় অংশের ক্ষোভ, তার বড় কারণ তিনি এক দিকে জেলা সভাপতি, প্রাক্তন বিধায়ক, আবার লোকসভা প্রার্থী, তবে যে কয়েকটি জেলাতে কংগ্রেস এখনও প্রাসঙ্গিক তার মধ্যে পুরুলিয়া অন্যতম। এবার আসা যাক মালদহর দু’টি আসনের বিষয়ে। ১। মালদহ (উত্তর) ২। মালদহ ( দক্ষিণ) । এর মধ্যে মালদহ উত্তর গত নির্বাচনে বিজেপির হাতে যায়, অপরদিকে মালদহ (দক্ষিণ) কংগ্রেস জেতে। প্রসঙ্গত, মালদহ আসলে ‘বুড়া বাবা’ ( মালদহতে গনি খান চৌধুরী পরিচিত এই নামে) গড়। তবে ২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে এই জেলা থেকে শূন্য হাতে ফিরতে হয় ‘হাত’কে। যদিও লোকসভার একটি আসন জেতে কংগ্রেস। তবে এইবার এই আসনে প্রার্থী বদল করেছে কংগ্রেস। আবু হাশেম খান চৌধুরী (ডালু) র বদলে প্রার্থী করা হয়েছে তার পুত্র ঈশা খান চৌধুরীকে। তবে সূত্রের খবর, ঈশাকে প্রার্থী করায় খুশী নন ডালু বাবু এবং তার অনুগামীরা। প্রথমে শারীরিক কারনে দাঁড়াতে না চাইলেও পরে দলকে জানান তিনি লড়াই করতে প্রস্তুত। তবে শেষ পর্যন্ত টিকিট না পাওয়ায় যথেষ্ঠ ক্ষুব্ধ তিনি। অপরদিকে সংগঠনের অবস্থাও খুব খারাপ। তাই রাজনৈতিক মহলের মতে, এইবার এই আসন ধরে রাখা কংগ্রেসের কাছে খুব কঠিন।
তবে একমাত্র যেই আসনে কংগ্রেস চোখ কান বুজে জয়ের স্বাদ পেতে পারে তা হলো বহরমপুর আসন l যেখানে প্রার্থী অধীর চৌধুরী। এই কেন্দ্রের ৫ বারের সাংসদ। তবে এবার এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান। অপরদিকে বিজেপির ডা:নির্মল চন্দ্র দাস। তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, লড়াই কঠিন হলেও শেষ পর্যন্ত ভোট করার অভিজ্ঞতাতে জিতবেন অধীর। আর বামেদের সমর্থন তো আছেই। এবার আসা যাক জঙ্গীপুর। একদা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ও পরে তার পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় এর আসন। যদিও বর্তমান সাংসদ খালিলুর রহমান এলাকায় খুব জনপ্রিয়। এর পাশাপাশি সংগঠনের জোড়। অপরদিকে কংগ্রেস এই কেন্দ্রে বামেদের সমর্থনে প্রার্থী করেছে
মুর্তজা হোসেন বকুলকে। যিনিও এলাকায় যথেষ্ট পরিচিত মুখ। লড়াই দেবেন কিন্তু জিততে পারবেন কি? উত্তর ৪০% সুযোগ। মালদহ উত্তর এ প্রার্থী মুস্তাক আলম।
একাধিক সমীক্ষা রিপোর্ট এই কেন্দ্র এবারও পেতে পারে বিজেপি। তবে একদিকে বিজেপি অপরদিকে তৃণমূল দুই প্রার্থী হিন্দু হওয়ার সংখ্যালঘু ভোটে কতোটা থাবা কংগ্রেস প্রার্থী বসাতে পারে তার প্রভাব তৃণমূলের ফলের উপর পড়বে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বীরভূম থেকে কংগ্রেস প্রার্থী মিলটন রশিদ প্রার্থী হলেও তিনি যে জিততে পারেন, সেই আশা হয়তো নিজেই করেছেন না। উত্তরবঙ্গে আরো একটি আসন প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস সেটি হল রায়গঞ্জ। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সী’র নিজের ঘর এবং গড় বলে পরিচিত এই আসন। প্রিয়রঞ্জন এর পর তার স্ত্রী দীপা দাসমুন্সী জিতে সাংসদ ও মনমোহন সিং মন্ত্রীসভার প্রতি মন্ত্রীও হন। যদিও গত নির্বাচনে এই কেন্দ্র বিজেপির প্রার্থী দেবশ্রী জয়লাভ করেন এবার এই আসনে কংগ্রেস প্রার্থী প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক আলী ইমরান রমজ (ভিক্টর)। রীতিমত নির্বাচন ও ভোট বোঝেন, পাশাপাশি এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয় মুখ। আর এই কেন্দ্রের সম্ভবত একমাত্র সংখ্যালঘু প্রার্থী। তারপর এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী নিয়ে কানাইয়ালাল আগরওয়াল, আব্দুল করিম চৌধুরীদের মত প্রভাবশালী নেতাদের ক্ষোভ এবং তৃণমূলের ভিতরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অনেকটাই এগিয়ে যাচ্ছে কংগ্রেস প্রার্থীকে।