
সুমন গঙ্গোপাধ্যায়ঃ রাজনীতি এখন ব্র্যান্ড যুগ। আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে ‘মুখ’ ই এখন মুখ্য। তবে আঞ্চলিক স্তরে এই ট্রেন্ড আজকের নয়, করুণানিধী, জয়ললিতা, এন টি রামারাও, বাল থাকরে, শরদ পাওয়ার, লালু প্রসাদ যাদব, শিবু সরেন থেকে শুরু কর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, এক কথায় বলা যায় বিধানসভা র বৈতরনি পার হতে এই মুখ বা এই নাম গুলো যথেষ্ট।
দেশের রাজনীতি তে এই মুখ এর রাজনীতির শুরু
২০১৪ সালে র পর থেকে, ব্র্যান্ড মোদী। আর এই মোদী মুখ ই যেন বিজেপির কাছে জাদুদন্ড। ২০১৪-২০২৩ গোটা দেশ জুড়ে যেন ‘মোদী লহর'( বিজেপির ভাষায়)। আর তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই দরকার হয়ে পড়েছে পাল্টা মুখের। অর্থাৎ কে? কে হবেন ২০২৪ এর নির্বাচনে মোদীর পাল্টা ব্র্যান্ড?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরিওয়াল শরদ পাওয়ার আর সব থেকে এগিয়ে যে নাম তিনি প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। একথা চরম সমালোচ ক ও মানবে ন যে গোটা দেশ বিজেপি র বিরুদ্ধে লড়াই দেওয়ার জায়গাতে একমাত্র কংগ্রেস। তাই এই মুহূর্তে মুখ হওয়ার দৌড়ে অনেক টা ই এগিয়ে ওয়াডনারের সাংসদ। আর এখানেই
বারেবারে একটাই প্রশ্ন উঠেছে। দেশের মসনদ দখলে কি মোদীর পাল্টা হিসাবে কংগ্রেস এর সেরা চাল কি হতে পারেন রাজীব-সোনিয়া তনয়? সংসদ এর ঘরে বাইরে রাহুল এর পরিচয় হয়ে উঠেছিল ‘পাপপু’ হিসাবে। রাতারাতি সোশ্যাল মিডিয়াতে মিম ও ভাইরাল হয়ে যায়। এককথায় রাহুলই যেন হাসির খোরাক l তা কখনো সাংসদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কে জড়িয়ে ধরা থেকে শুরু করে একের পর এক মিম। গোটা দেশে অ- কংগ্রেসি আরও ভালো করে বললে বিজেপি নেতা- কর্মী- সমর্থক দের কাছে রাহুল মানেই পাপ্পু।
আর এই ‘ পাপ্পু ‘ বা ‘ রাহুল বাবা ‘ আদৌ মুখ হতে পারেন কিনা একটা বড় অংশ তা নিয়ে সংশযে। তবে ‘ভারত জোড় যাত্রা’র পর কিছুটা হলেও বদলেছে রাহুল গান্ধীকে নিয়ে আম জনতার ধারনা। দীর্ঘ এই যাত্রা তে পায়ে হেঁটে কৃষক, শ্রমিক, চাকুরীজীবি, স্টুডেন্ট, মহিলা ,যুব দের কাছাকাছি যে ভাবে এই যাত্রাকে পৌঁছে দিয়েছেন, বলা যেতেই পারে দেশের একটা বড় অংশের কাছে ভরসা র মুখ হয়ে উঠছেন রাহুল
কিন্তু দ্বিধা তো আছেই। গান্ধী পরিবারের সদস্য ইন্দিরা গান্ধী র নাতি, রাজীব গাঁধী র পুত্র হিসাবে বা র বা র রাহুলের ম্যাচিওরিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে , এমনকী দলের ভিতরেও একটা বড় অংশ রাহুল গান্ধীর পলিটিক্যাল ম্যাচিওরিটি নিয়ে দ্বিধায় আছেন বলে দিল্লীতে কান পাতলেই শোনা যায়। বিশেষ করে রাহুলের বারবার বিদেশ যাত্রা নিয়ে বিজেপি র পাশাপাশি প্রশ্ন আছে দলের অন্দরেও
তবে ভারত জোড় যাত্রা যেন রাহুল কে অনেক টা বদলে দিয়েছে। একসময় পাপ্পু হয়ে থাকা রাহুল গান্ধী এখন বিরোধী মুখ হিসাবে আস্তে আস্তে নিজের জায়গা করে নিচ্ছেন বলেই মত আর রাজনৈতিক মহলে শুধুমাত্র ভারত জড়ো যাত্রা নয়, কখনো কৃষক কখনো শ্রমিক বা ছাত্র যুবকদের পাশাপাশি একাধিক ক্ষেত্রে সাধারণের সঙ্গে মিশে যাওয়া রাহুলের মধ্যে
পরিবর্তন দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষ ক রা । বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক অভিষেক দে বিশ্বাসের মতে, ” রাহুল গান্ধী র রাজনৈতিক ম্যাচিওরিটি নিয়ে প্রশ্ন থাকাই উচিত নয়। যে রাহুল গান্ধীকে নিয়ে ব্যঙ্গ করা হতো সেই রাহুল এখন অনেক পরিণত।
দেখুন প্রধানমন্ত্রীর মুখ বা বিরোধী নেতা বলেই তাঁকে খুব সিরিয়াস থাকতে হবে তাঁর কি কোনো সীমানা আছে? এটা ঠিক প্রথম সাংসদ বা কংগ্রেসে সভাপতি হিসাবে যে রাহুল গাঁধী কে আমরা দেখেছি, এখন কার রাহুল গান্ধী র উপর যে যাই বলুক যুবরা ভরসা করতে শুরু করেছে। বাকি রাহুল সম্পর্কে যে ধারনা তৈরী করা হচ্ছে তা থেকেই বোঝা যাচ্ছে এই মুহূর্তে রাহুলই এক ও একমাত্র বিরোধী মুখ।” তাঁর আরও ব্যখ্যা, ” দেখুন রাহুল গান্ধীকে পলিটিকাল ম্যাচিওর না বলার মানে যারা ওকে সংসদে পাঠিয়েছেন তাদের রায়কে অপমান করা। আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া রাহুলই এই মুহূর্তে সব থেকে শক্তিশালী মুখ।” ইতিমধ্যেই ইন্ডিয়া জোটের শেষ বৈঠকে আচমকাই রাহুলকে বাদ দিয়ে মল্লিকারজুন খারগের নাম প্রস্তাব করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক মহলের মতে, এর পিছনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ‘ চাল ‘ ছিল, বিশেষ করে রাজনৈতিকভাবে মমতা বিরোধী বলে পরিচিত রাহুলের গুরুত্ব কম দেখাতে এই রাজনৈতিক চাল চালেন মমতা, বলে মত রাজনৈতিক মহলের। তার মানে কি সত্যি গুরুত্বহীন রাহুল? বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক দেবাশিস ঘোষ এর ব্যখ্যা,” না রাহুল গান্ধী আদৌ গুরুত্বহীন নয়, আসলে এর পিছনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক স্বার্থ আছে, আসলে রাহুল কে প্রধানমন্ত্রীর দাবীদার হিসাবে তুলে না ধরে ব্যালান্স গেম খেললেন মমতা, একদিকে খারগের নাম প্রস্তাব করে আসলে নিজের নাম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ভাসিয়ে রাখলেন মমতা। অপরদিকে কোথাও যেন ঘুর পথে বিজেপির দিকের রাস্তা ও পরিষ্কার রাখলেন তিনি। এতে আদৌ প্রমাণ হয় না যে রাহুল দুর্বল।” দেবাশিস ঘোষ-এর আরও বক্তব্য,” আজ মোদীকে ব্র্যান্ড হিসাবে তুলে ধরতে পিছনে রীতিমত অর্থ খরচ করা হয়েছে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে ব্র্যান্ড মোদী প্যাকেজ তৈরী করে তা তুলে ধরা হচ্ছে, অথচ রাহুলকে ব্র্যান্ড করতে কোনো বিশেষ প্যাকেজ বা প্রচুর অর্থ খরচ করে ব্র্যান্ড রাহুল করতে এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি। বরং নিজেকে মুখ হিসাবে তুলে ধরতে রীতিমত পরিশ্রম করছেন তিনি।” রাজনৈতিক মহলের মতে, যতোই প্রশ্ন থাকুক, যতোই ব্যঙ্গ করা হোক, এই মুহূর্তে মোদীর বিরুদ্ধে মানুষের ন্যাচারাল চয়েস রাহুল গান্ধীই।