
সুমন গঙ্গোপাধ্যায়ঃ শিয়রে সমন। যুদ্ধের ক্ষেত্রও প্রস্তুত। কিন্তু দেখা নেই সেনাপতি থেকে সৈন্যবাহিনীর। কথা হচ্ছে লোকসভা নির্বাচনের। আর এই নির্বাচনের যুদ্ধে যেন থেকেও নেই বাম- কংগ্রেস। চলতি মাসের ১৯ তারিখ প্রথম দফায় নির্বাচন, অর্থাৎ ভোটের দামামা বেজেই গিয়েছে। ইতিমধ্যেই ৪২ আসনে প্রার্থী ঘোষনা করে থেমে থাকা নয়, কার্যত প্রচারে ঝড় তুলে দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়দের একাধিক জনসভাও জোড়কদমে চলছে, পিছিয়ে নেই বিজেপিও, ইতিমধ্যেই রাজ্যে সভা করে গিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রীও। কিন্তু বাম- কংগ্রেস?
প্রচার শুরু তো দূরে থাক, এখনো পর্যন্ত আসন সমঝোতার জায়গাতেই পূর্ণাঙ্গ ভাবে পৌঁছাতে পারছে না আলিমুদ্দিন ও বিধান ভবনের ম্যানেজাররা।
এখনও যেন ঘুমিয়ে সেলিম- অধীররা। প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়,” জোট বা আসন সমঝোতা নিয়ে এখনও পূর্ণাঙ্গ কোন রূপ সামনে আসেনি। বেশ কিছু জায়গায় এখনও জট আছে। আর এই বয়ান থেকেই বোঝা যাচ্ছে ভোট কে সামনে রেখেও কতোটা পিছিয়ে বাম- কংগ্রেস।
জোট নিয়ে প্রথম থেকেই একটা জট সিপিএম ও কংগ্রেস শিবিরে। সিপিএম কংগ্রেসের সাথে হাত মেলালেও, হাত কে সাথে নিয়ে চলতে নারাজ বাম শরিক আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, সিপিআই। ইতিমধ্যেই কোচবিহার, পুরুলিয়া ,ঘাটাল কেন্দ্রে ফরওয়ার্ড ব্লক, সিপিআই এর বিরুদ্ধে প্রার্থীরা দিয়েছে কংগ্রেস। বাকী কতো আসনে কংগ্রেস লড়াই করবে, বামেরাই বা কটা আসনে শেষ পর্যন্ত প্রার্থী টিকিয়ে রাখবে, না। এখনও পর্যন্ত স্বয়ং নেতারাই হয়তো বলতে পারবেন না। আর যারা প্রচারে আছেন? হা। তারা আছেন বটে। হয়তো প্রচার ও করছেন। কিন্ত? রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিৎ দাসের বক্তব্য, “তাঁরা প্রচারে আছেন, কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে জেতার জন্যে নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাম- কংগ্রেস প্রার্থীরা যেন শুধু মাত্র থাকতে হয়, সেই ভাবে প্রচারে আছেন।” ইতিমধ্যেই আইএসএফ হাত ছেড়েছে, একাধিক লোকসভা কেন্দ্রে মান- অভিমানে কোথাও বামেরা আবার কোথাও কংগ্রেস কর্মীরা প্রচারেই নামেন নি।
শাসক দলে থাকার সুবিধা হিসাবে দেওয়াল লেখা থেকে শুরু ব্যানার বা পোস্টারে যেখানে তৃণমূলের প্রচার রীতিমত চোখ ঝাজিয়ে যাচ্ছি এমনকি যেখানে রীতিমতো তৃণমূলকে টক্কর দিচ্ছে বিজেপি সেখানে কার্যক্রম অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে কংগ্রেসবা সিপিএমএর দেওয়াল লেখা বা পোস্টার ব্যানার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
মালদহ, জঙ্গিপুর, রানাঘাট, কৃষ্ণনগর,কোচবিহার এমন একাধিক কেন্দ্রে কোথাও সিপিএম আবার কোথাও কংগ্রেসের কর্মীরা প্রচারে নামতে নারাজ। বিশ্বজিৎ দাস এর বক্তব্য,” এই দুই দল আদৌ কি লড়াইতে আছে? খুব স্পষ্ট বলতে বাম বিশেষ করে সিপিএম এর কংগ্রেস এই দুই দল যেন ধরেই নিয়েছে যে এই নির্বাচনে তাদের শূন্য হতেই ফিরতে হবে। যেমন কংগ্রেস প্রায় ১৩ আসনে প্রার্থী দিয়েছে, কিন্তু শুধু মাত্র বহরমপুর, মালদহ ছাড়া খুব একটা কোথাও প্রচারে নেই। তারা যেন ধরেই নিয়েছে এক বা দুটি আসন পেলেই আমরা খুশী, একই অবস্থা সিপিএম-এরও,খুব স্পষ্ট করে বলতে এরা যেন শুরুই করছে লাস্ট হওয়ার জন্যে।” সূত্রের খবর, নির্বাচন সামনে,প্রার্থীর নামও ঘোষিত, কিন্তু এখনও একাধিক জায়গায় বাম বা কংগ্রেস নেতৃত্ব নিজেদের মধ্যে বসে উঠতেই পারে নি। যৌথ কমিটি তৈরি তো দূরস্ত। অনেকটা যেন নিয়ম রক্ষার লড়াই।
অথচ, লড়াইতে থাকলে, বিশ্বজিৎ দাসের ব্যখ্যা, “একদিকে বিজেপি অপরদিকে রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে একটা বড় অংশের মানুষ ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে সংখ্যালঘু দের একটা বড় অংশ এই নির্বাচনে বাম- কংগ্রেস কে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিল, তবে বাম- কংগ্রেসের এই গড়িমসির কারণে তারাও এখন খুব একটা ভরসা করে উঠতে পারছে না।” সব থেকে বড় কথা আদৌ জোট কিনা, বা ঠিক কোন ফর্মুলাতে জোট, গোটা বিষয় নিয়ে বড় ধোঁয়াশা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বাম কংগ্রেস সমর্থকদের মধ্যেও এমনকি একাধিক দেওয়াল লিখনে কোথাও বাম প্রার্থীদের সমর্থনে কংগ্রেস সমর্থিত কথাটা যেমন লেখা থাকছে না। অপরদিকে কংগ্রেস প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বাম সমর্থিত কথাটা চোখেই পড়ছে না। বিশেষ করে পুরুলিয়া কোচবিহার বা ঘাটালে সিপিএমের কি ভূমিকা হবে সেটা নিয়েও একটা বড় প্রশ্ন খোদ আলিমুদ্দিনের অন্দরেই। বিশ্বজিৎ দাসের মতে, ” আসলে এই বাম- কংগ্রেস জোটে র অবস্থা অনেকটা সেই পরে পাওয়া ১৪ আনার মত, এক অধীর, এক ঈসা আর এক সেলিমেই আটকে। আর এর থেকে বেশী কিছুর ইচ্ছাও যেন নেই।” সব মিলিয়ে সামনে ভোট। অথচ ঠিক যেন নাম কে ওয়াস্তে হোটেলে উঠছে সেলিম- সুজন- অধীররা।