
সুমন গঙ্গোপাধ্যায়: “আমরা নতুন যৌবনের দুত,,,,” এই নির্বাচনে বাম বিশেষ করে সিপিএমের স্লোগান মনে হয় এমনই হওয়া উচিত। লোকসভা নির্বাচন থেকে হয়তো অনেকটাই ‘নতুন ঘোড়া’দের উপর ভরসা করেছে সেলিম- বিমান বসুরা।
তাহলে কি পাকা চুলের সিপিএম থেকে আস্তে আস্তে কাচা চুলের দলে পরিণত হচ্ছে সিপিএম? এর শুরু টা মীনাক্ষীকে দিয়ে। এক কথায় তাঁর হাত ধরেই যেন আলিমুদ্দিনের নতুন যৌবনের দুতেদের উত্থান। বহুদিন পর গোটা দেশ দেখেছিল সিপিএমের ‘কালো মাথার’ ব্রিগেড। আর তার একটা বহি: প্রকাশ দেখা গেল লোকসভা নির্বাচনে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এতদিন সিপিএম মানেই ছিল পাকা চুলের ভিড়, নতুন প্রজন্মের উপর যেন খুব একটা ভরসা পেতেন না, সিপিএমের ম্যানেজাররা। তবে সেই ধারনা এবার অনেকটাই ভেঙে গেল। অর্থাৎ এবারের নির্বাচনে কার্যত
অনেক ক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মকে সামনের সারি এনে, এমনকী প্রার্থী করে পায়ের তলার মাটি অনেক টা ফিরে পেতে চাইছে বামেরা। এমনকী কার্যত হেভি ওয়েট বা চ্যালেঞ্জিং বেশ কয়েকটি আসনে প্রবীনদের ওপর ভরসা না করে নতুনদের উপরেই বাজি ধরেছে সিপিএম একটু চোখগুলি দেখা যায়। যেমন ডায়মন্ড হারবারের প্রতিকুর রহমান বয়স মাত্র ৩৩ লড়াকু ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিত, লড়াই সরাসরি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। যেমন দিপ্সিতা ধর, বয়স মাত্র ৩০। শ্রীরামপুর আসনে তৃণমূলের হেভিওয়েট সাংসদ কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রীতিমতো মাটি কামড়ে লড়াই করছেন। সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় আইনজীবী এই সিপিএম প্রার্থীর বয়স ৩১। তমলুকে প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের দেবাংশ ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে এই আসনটির দিকে তাকিয়ে আছে গোটা বাংলা এর পাশাপাশি যাদবপুরে সিপিএম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য,
ইতিমধ্যেই বছর ৩১ এর এই ছাত্র নেতা রীতিমত ঝড় তুলে দিয়েছে, তৃণমূলের যুব সভা নেত্রী সায়নী ঘোষ, আর বিজেপির অনির্বাণ গাঙ্গুলির বিরুদ্ধে জোরদার লড়াই দিচ্ছে সৃজন। অন্যদিকে ঝাড়গ্রামের সোনামনি টুডু
বছর ৩৫ এর এই আদিবাসী নেত্রী ইতিমধ্যেই শাল- মহুলের জেলায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।
জলপাইগুড়ির বছর ৩৬ এর শিক্ষিক প্রার্থী দেবরাজ বর্মন, চা শ্রমিক থেকে শুরু করে সাধারন মানুষের মন জয় করেছেন।।একইভাবে আরামবাগের বছর ৩৮ এর বিপ্লব মৈত্র, হাওড়ার ৩৯ বছরের সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। এই নির্বাচনে এরই সিপিএমের ডাকহর্স।
তাহলে কি রিস্ক -এর ভয়তেই তরুণ প্রজন্মকে বোরে করে হারানো জমি ফিরে পেতে চাইছে সিপিএম? বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিৎ দাস এর ব্যখ্যা, ” সিপিএম এতদিন ছিল প্রবীণদের দল, বিশেষ করে প্রায় ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার সময়ে নবীন প্রজন্ম কে কোনো গুরুত্বই দেয়নি তারা। খুব সত্যি কথা কোনও রাজনৈতিক দলে পরের প্রজন্ম বা রিজার্ভ বেঞ্চ কে জায়গা না দিলে টিকে থাকা খুব মুস্কিল। এতো বছর ক্ষমতাতে থাকার পর তাদের সরকারের দুর্নীতি,
দলতন্ত্র, শিক্ষায় অনিলায়নের অভিযোগ দূর করতে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বকে যে সামনে দরকার সেটা দেরীতে হলেও বুঝতে পারছে সিপিএম, বিশেষ করে এতদিন যারা বামপন্থা নিয়ে আলোচনা করে এসেছেন তাদের উপর মানুষ ভরসা করতে পারছে না। তাই এখন নতুন প্রজন্ম নতুন করে নতুন ভাবে এই বামপন্থা নিয়ে চর্চা করা শুরু করেছে
তখন কিছু টা হলেও ভরসা জাগছে। ” রাজনৈতিক মহলের মতে, লকডাউনের সময় রেড ভলেন্টিয়ার্স এবং শ্রমজীবী ক্যান্টিনের হাত ধরে সিপিএমে প্রবীণদের থেকে নবীনদের হাতে
ব্যটন উঠে আসে। আর এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক অভিষেক দে বিশ্বাস এর মতে, ” দেরী হলেও সিপিএম সার সত্য টা বুঝেছে যে নতুনদের মন মানে সমর্থন পেতে গেলে পাকা চুল নয়, কাচা চুলের টেক সেভি ছেলে মেয়েদের দরকার তাই শুধুমাত্র প্রার্থী দেওয়াতে নয় সিপিএমের প্রায় প্রতিটি কর্মসূচিতেই এখন সামনে চারিদিকে দেখা যাচ্ছে মীনাক্ষী, সায়ন, সৃজন প্রতিকূর,শতরূপদের।” তাহলে কি নবীন দের ধরেই এই লোকসভার বৈতরনী পার হবে সিপিএম? বিশ্বজিৎ দাসের মতে, ” এক্ষুনি এর ফল হাতে আসবে সেটা ভাবা ভুল। তবে যদি এই নতুন মুখেরা যদি ভোট শতাংশ বাড়াতে পারে সেটাই অনেক। “