
স্পোর্টস ডেস্ক :
সাদা কাগজে একের পর এক শব্দ। কোনওটা সবুজ, কোনওটা লাল, কোনওটা হলুদ। কালো আর নীল তো আছেই। মহাত্মা গান্ধী থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হয়ে সত্যজিৎ রায়—স্বাধীনতার আন্দোলন থেকে সাহিত্য, সাহিত্য থেকে সেলুলয়েড, জড়িয়ে রয়েছে একটাই নাম, ‘সুলেখা।’ বাঙালির আবেগে বাঙালির মননে, সুলেখা কালি যেন জড়িয়ে রয়েছে হৃদয় জুড়ে।
বাঙালির সেই ‘আবেগ’-কেই আরও ছড়িয়ে দিতে এবার একসঙ্গে হাত মেলাল সুলেখা এবং কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাব (সিএসজেসি)। মঙ্গলবার, ক্লাবের ৬৯ তম প্রতিষ্ঠা দিবসে এক অভিনব উদ্যোগের ঘোষণা করল সিএসজেসি। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল এবং মহামেডান জার্সির রংয়ে এখন থেকে পাওয়া যাবে কালি। অর্থাৎ সবুজ-মেরুন, লাল হলুদ ও সাদা-কালো—মোট ছয় রংয়ের কালি নিয়ে আসা হল সিএসজেসি ও সুলেখার যৌথ উদ্যোগে। যার স্লোগান, ‘আবেগ—বাংলা মানেই ফুটবল।’ সিএসজেসির বিশ্বাস, ‘শুধু সাংবাদিকতাই নয়, বাংলার আবেগকে বাঁচিয়ে রাখাও আমাদের কর্তব্য।’
মঙ্গলবার বিকেলে ক্লাব তাঁবুতে এই তিন রংয়ের কালি ও পেন উদ্বোধন হল। দুই প্রাক্তন তারকা ফুটবলার গৌতম সরকার, প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন ছিলেন, তেমনই তিন প্রধানের কর্তারাও সামিল হয়েছিলেন উৎসবে। মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত বলেন, ‘কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাব ও সুলেখা এক নতুন পথের সূচনা করল। বাংলার ফুটবল মোটেই খারাপ জায়গায় নেই। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহামেডান তিন ক্লাবই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে চলেছে।’
ইস্টবেঙ্গল শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকারের কথায়, ‘সিএসজেসির পাশে আমরা সব সময় আছি। যে অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হল, কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।’ মহামেডান সচিব ইস্তিয়াক আহমেদ বলে গেলেন, ‘কালো কালি দিয়ে খারাপ কিছু লেখা হলে, তা আমাদের সাদা রং মানে সাদা কালি দিয়ে মুছে ফেলা যাবে।’
প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম সরকারের মন্তব্য, ‘এই ক্লাব জীবনের শুরুতে আমাকে শ্রেষ্ঠ ফুটবলারের সম্মান দিয়েছিল। আজ তারা আরও এক অভিনব উদ্যোগ নিল। আমাদের গর্ব প্রায় হারিয়ে যাওয়া সুলেখা কালিকে যে ভাবে ফিরিয়ে আনা হল, অনবদ্য।’
প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদন, ‘এখন থেকে তিন ক্লাবের যাবতীয় চিঠিপত্র এই কালিতে লেখা হোক।’
আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত তিন প্রধানে বাংলার ফুটবলে আবার দাপটের কথা উল্লেখ করেন। আইএফএর ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বরূপ বিশ্বাস, সৌরভ পালরা যেমন অভিনন্দন জানিয়েছেন, তেমনই আইএফএর প্রাক্তন সচিব জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের মুখেও ভেসে উঠল শুভেচ্ছাবার্তা।
সুলেখার কর্নধার কৌশিক মৈত্র এবং শুভব্রত গঙ্গোপাধ্যায় আন্তরিক ভাবে পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। সিএসজেসি প্রেসিডেন্ট সুভেন রাহা আবারও মনে করিয়ে দিলেন, সাংবাদিকদের কর্তব্য শুধু খবর করা নয়, বাংলার আবেগকেও সম্মান জানানো। তিনি এমনও বলেন, ‘এই কালি বিক্রি করে যদি কিছু অর্থ আসে, তা কানমারি অ্যাকাডেমির মেয়ে ফুটবলারদের উন্নতিতে কাজে লাগানো হবে।’
অনুষ্ঠানে বর্ষীয়ান সাংবাদিকদের বিশেষ সম্মান জানানো হয়। সব মিলিয়ে আবেগে মিশে গেল এক সুন্দর সন্ধে।