
উজ্জ্বল হোড়, জলপাইগুড়ি : ডুয়ার্সে আবারও মানুষ ও বন্যপ্রাণীর মর্মান্তিক সংঘর্ষ। আলো পড়তেই ক্ষেপে উঠল জঙ্গলের গজরাজ, নিমেষে প্রাণ কেড়ে নেয় এক তরতাজা আদিবাসী চা বাগান শ্রমিকের।
সোমবার গভীর রাতে মেটেলি থানার অন্তর্গত গরুমারা জঙ্গল লাগোয়া বড় দিঘি বনবস্তিতে ঘটে গেল সেই হৃদয়বিদারক ঘটনা। সারাদিন চা বাগানে কাজ সেরে বাড়ি ফিরে ছিলেন বছর ছত্রিশের নন্দু খেরিয়া। অন্যদিনের মতো রাতের খাবার খেয়ে ঘুমোতে গিয়েছিলেন নিজ ঘরে। কিন্তু গভীর রাতে হঠাৎ চিৎকার—“বস্তিতে হাতি ঢুকেছে!”। আতঙ্কে ভাঙে ঘুম। বনবাসীদের নিত্যদিনের দুর্ভোগ এটাই—জঙ্গলের গণ্ডি পেরিয়ে বারবার জনবসতিতে হানা দেয় বুনো হাতির দল।
সেদিনও তার ব্যতিক্রম হল না। স্থানীয়দের সঙ্গে হাতিকে জঙ্গলে তাড়ানোর কাজে নেমে পড়েন নন্দু খেরিয়া। তবে শেষরক্ষা হয়নি। অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা এক হাতির মুখে বন দফতরের বিশেষ টর্চের আলো পড়তেই হিংস্র হয়ে ওঠে জন্তুটি। রেগে গিয়ে এক ঝটকায় শুঁড়ে পেঁচিয়ে পায়ের নিচে পিষে ফেলে নন্দুকে।
খবর পেয়ে ছুটে আসে বন দফতরের খুনিয়া স্কোয়াড। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা বড় দিঘি বস্তিতে। মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজের মর্গে হবে মৃতদেহের ময়না তদন্ত।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বনবস্তি লাগোয়া এই সব এলাকায় পর্যাপ্ত সতর্কতা বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেই। বারবার হাতির হানায় ভুগতে হচ্ছে সাধারণ নিরীহ মানুষকে। বন দফতরকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার দাবিতে সরব তাঁরা। প্রশাসনের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করা হয়নি। তবে নন্দুর মৃত্যুর পর প্রশ্ন উঠছে—কবে অব্যাহত এই সংঘর্ষের স্থায়ী সমাধান হবে?