
স্পোর্টস ডেস্ক :আইএসএলের শুরুতেই হারের হ্যাটট্রিক। এফসি গোয়ার কাছে ৩-২ গোলে হারল ইস্টবেঙ্গল। বেঙ্গালুরু এফসি, কেরল ব্লাস্টার্সের পর এফসি গোয়া। ডুরান্ড কাপ, এএফসি মিলিয়ে টানা পাঁচ হার। রাতারাতি ‘প্রফেসর’ থেকে ‘ভিলেন’ বনে গেলেন কার্লেস কুয়াদ্রাত। গ্যালারিতে উঠল গো ব্যাক ধ্বনি। ভারতে কোচিং জীবনে স্প্যানিশ কোচের সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স। এর আগে অভিষেক আইএসএলে শুরুতেই তিন ম্যাচ হেরেছিল ইস্টবেঙ্গল। এবার তার পুনরাবৃত্তি ঘটল। তবে সেবারের সঙ্গে এবারের পার্থক্য রয়েছে। আইএসএলে এবার সবচেয়ে ভাল দল গড়েছে লাল হলুদ।যে কুয়াদ্রাত ইস্টবেঙ্গলকে সুপার কাপ দেন অর্থাৎ ১২ বছর পরে সর্বভারতীয় ট্রফি তাকেই সমর্থকদের গো ব্যাক! এটাই বোধহয় কলকাতা ময়দান।
যদিও কুয়াদ্রাত কিন্তু হাল ছাড়ছেন না। তিনি বললেন “আমরা চেষ্টা করেছিলাম, ম্যাচের আগে একটা পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু তা কাজে আসেনি। শুরু থেকেই প্রতিপক্ষ আমাদের চাপে ফেলে দিয়েছিল। কুড়ি মিনিটের মধ্যে দুটো গোল খেয়ে গেলে পরিস্থিতি খুব কঠিন হয়ে যায়। আমরা অন্যদের চেয়ে গোলের সুযোগ তৈরিতেও পিছিয়ে আছি। গত ম্যাচ পর্যন্ত সংখ্যাটা ছিল ১৯। অবস্থা এমনই। তিনটে ম্যাচের কোনওটাতেই আমরা ভাল খেলতে পারিনি”।
ফুটবলে এমন সব দলের ক্ষেত্রেই হয় বলে মনে করেন লাল-হলুদ কোচ। বলেন, “আমরা এমন এক কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি যখন কিছুই আমাদের পক্ষে যাচ্ছে না। ফুটবলে এমন হয়। বিশেষ করে ঘরের মাঠে হারাটা মেনে নেওয়া কঠিন। এখন পর্যন্ত আইএসএলে, আমাদের অন্তত এক পয়েন্ট পাওয়ার জন্যও লড়াই করতে হচ্ছে। কিন্তু সফল হচ্ছি না”।
তবে এখনই হাল ছেড়ে দিতে নারাজ স্প্যানিশ কোচ। বলেন, “আমাদের অনুশীলনে আরও পরিশ্রম করতে হবে এবং উন্নতি করতে হবে। আমাদের খেলোয়াড়দের ছন্দে ফেরাতে হবে এবং পরিশ্রম চালিয়ে যেতে হবে। এখন একমাত্র সমাধান এটাই। দিয়ামান্তাকস, ক্রেসপো চোট সারিয়ে ফিরে এলে আশা করি আমরা ভাল খেলব”।
ক্লাবের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আশা ছাড়তে রাজি নন অতীতে আইএসএলে চ্যাম্পিয়ন জয়ী কোচ। তিনি বলেন, “আমরা ভবিষ্যতের জন্য দল গড়ছি। আমাদের দলে অনেক তরুণ খেলোয়াড় রয়েছে, যারা দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে রয়েছে এবং বিষ্ণু, সায়ন, আমনের মতো তরুণরা আমাদের অনেক সাহায্যও করছে। এই দল ভবিষ্যতের জন্য এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আমাদের আশাবাদী হতে হবে। আমরা সবাই এই পরিস্থিতিতে হতাশ। বুঝতে পারছি যে, সমর্থকেরা অসন্তুষ্ট। ওরা আবেগপ্রবণ, ওদের এই ক্ষোভ ন্যায্য। কিন্তু আমরা জানি যে সমর্থকেরা খেলোয়াড়দের এবং ক্লাবকে ভালোবাসে এবং সব সময় ক্লাবকে সমর্থন করবে”। এ দিন ম্যাচের পর অবশ্য গ্যালারিতে উপস্থিতি সমর্থকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
এ দিন ম্যাচের শুরু থেকে গোয়ার দাপুটে আক্রমণের চাপে প্রায় কোণঠাসা ইস্টবেঙ্গল কুড়ি মিনিটের মধ্যে দু’টি গোল খেয়ে যায়। ২৯ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি আদায় করে তা থেকে গোল করে ব্যবধান কমান ফরাসি মিডফিল্ডার মাদি তালাল। কিন্তু ৭১ মিনিটের মাথায় বোরহার হ্যাটট্রিক তাদের জয়ের আশা শেষ করে দেয়। পরপর দলের তরুণ আক্রমণাত্মক ফুটবলারদের নামিয়ে দলকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেন কুয়াদ্রাত। ৮১ মিনিটের মাথায় ব্যবধান কমান পরিবর্ত ফরোয়ার্ড ডেভিড লালনসাঙ্গা। সমতার গোলও আনার চেষ্টা করেন তরুণ অ্যাটাকাররা। কিন্তু গোয়ার দুর্ভেদ্য রক্ষণে আটকে দেয় তাঁদের।
তরুণদের নামানো প্রসঙ্গে কুয়াদ্রাত বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম যে তরুণ খেলোয়াড়রা দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের সাহায্য করতে পারে। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা দল হিসেবে উন্নত ফুটবল খেলেছি। একজন কোচ হিসেবে আমাকে পরিবর্তনগুলো করতেই হত। তাতে কোনও সমস্যা হয়নি। বরং উপকারই পাওয়া গিয়েছে। আমরা দুটো গোল শোধ করতে পেরেছি”।
এই কঠিন পরিস্থিতিতে ক্লাব কর্তৃপক্ষ ও সমর্থকদের প্রতি কোচের বার্তা, “আমরা সবাই ক্লাবের জার্সিকে ভালবাসি। আমাদের আবেগ থাকবে। কিন্তু এই আবেগের জন্য যেন আমাদের নিয়ন্ত্রণ হারাতে না হয়। সবে লিগ শুরু হয়েছে। গত মরশুমে চেন্নাইন এফসি তাদের প্রথম তিনটি ম্যাচ হেরেছিল। তবু প্লে-অফে পৌঁছেছিল দলটা। দেখবেন একটা ম্যাচে ভাল ফল হলে সবকিছু বদলে যাবে। আমাদের সামনে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ রয়েছে। সেই টুর্নামেন্টের জন্য এখন দলকে প্রস্তুত হতে হবে। আশাবাদী থাকতেই হবে আমাদের”।