
নিজস্ব প্রতিবেদন , তিরুঅনন্তপুরম, : কেরলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফর ঘিরে রাজনৈতিক আবহেই বাড়ছে পারদ। বিশেষ করে, কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরের ‘সক্রিয়তা’ এবং মোদীর রসিকতা ঘিরে ফের তোলপাড় রাজনৈতিক মহল। শুক্রবার ভিড়িনজাম সমুদ্রবন্দর উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন, “আজকের অনুষ্ঠান অনেকের ঘুম উড়িয়ে দেবে,” তখন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হাসি ফুটলেও, মুহূর্তেই গম্ভীরতা ছড়িয়ে পড়ে।
বিমানবন্দরে স্বাগত থেকে শুরু করে উদ্বোধনী মঞ্চ— সর্বত্র শশী তারুরের উপস্থিতি কেবল সৌজন্যবোধের পরিচায়ক? নাকি বৃহত্তর কোনও রাজনৈতিক ইঙ্গিত? প্রশ্ন তুলছেন বিশ্লেষকরা। উদ্বোধনী মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, সাংসদ তারুর ও প্রধানমন্ত্রী মোদী একসঙ্গে থাকায় বার্তাও স্পষ্ট— বিজেপি দক্ষিণে জমি তৈরি করতে চায়, আর তার জন্য প্রয়োজনে কৌশলী সম্মিলনের দিকেও তাকিয়ে রয়েছে কেন্দ্র।
৮৮৬৭ কোটি টাকার বিশাল বিনিয়োগে তৈরি ভিড়িনজাম বন্দর প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে আদানি গোষ্ঠীর। উদ্বোধনে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বিজয়নের দিকে তাকিয়ে মোদী বলেন, “আপনি ইন্ডিয়া জোটের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। শশী তারুরও এখানে বসে রয়েছেন। আজকের অনুষ্ঠান অনেকের ঘুম উড়িয়ে দেবে!” তাঁর বক্তব্যের অনুবাদ হওয়ার সময় মোদীর মুখে মুচকি হাসি। দর্শকদের হাসির মাঝেই তারুর এবং বিজয়নের মুখে ধরা পড়ে হালকা অস্বস্তির ছাপ।
শশী তারুরের সাম্প্রতিক অবস্থান কংগ্রেসের অন্দরেই নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কেন্দ্রের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা, আন্তর্জাতিক মঞ্চে মোদীর ভূমিকার স্বীকৃতি এবং ‘দল চাইলে কাজ করব, না চাইলে অন্য অনেক কিছু করার আছে’— এই মন্তব্য সব মিলিয়ে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান ঘিরে ধোঁয়াশা বাড়িয়েছে।
তবে তারুর স্পষ্ট জানিয়েছেন, তিনি কংগ্রেস ছাড়ছেন না। দলবদলের কোনও পরিকল্পনাও তাঁর নেই। তা সত্ত্বেও দলের একাংশ মনে করছে, তারুরের এই অবস্থান কংগ্রেসের আদর্শিক অবস্থানকে দুর্বল করে। বিশেষত যখন দক্ষিণে বিজেপি জমি খুঁজছে, তখন দলের একজন জ্যেষ্ঠ সাংসদের এমন ‘সৌজন্যমূলক’ সক্রিয়তা উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
বিজেপি অবশ্য এই পরিস্থিতিকে নিঃশব্দে রাজনৈতিক লাভের দিকে চালিয়ে নিতে চাইছে। মোদীর ‘ঘুম উড়ে যাবে’ মন্তব্যে সেই কৌশলেরই আভাস বলেই মত পর্যবেক্ষকদের।
অন্যদিকে, কেরলে বিজেপি এখনও ভোটব্যাঙ্কে শক্তিশালী নয়। তবু প্রধানমন্ত্রীর দফায় দফায় সফর, প্রকল্প উদ্বোধন এবং শশী তারুরের মতো নেতার সঙ্গে একই মঞ্চ ভাগ করে নেওয়া যে কৌশলগত পদক্ষেপ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এর ফলে কংগ্রেসের অস্বস্তি যে আরও বাড়বে, তা বলছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। এখন দেখার, এই সৌজন্য সাক্ষাৎ ভবিষ্যতে আর কোনও রাজনৈতিক সমীকরণের দিকে এগোয় কি না।