
উজ্জ্বল হোড়, জলপাইগুড়ি: অভাব দমিয়ে রাখতে পারে না ইচ্ছাশক্তিকে। এর জলজ্যান্ত উদাহরণ উত্তরবঙ্গের চা-বাগান সংলগ্ন প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা ২০ বছরের বর্ষা ওঁরাও। ইচ্ছা, কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তরুণী বর্ষা পরাজিত করেছেন অভাবের প্রতিবন্ধকতাকে। পায়ের জাদু দেখাতে এবার মধ্যপ্রদেশে আয়োজিত ইন্ডিয়ান উইমেন প্রিমিয়ার লিগের প্রতিযোগিতায় পাড়ি দিচ্ছেন উত্তরবঙ্গের চা-বাগান সংলগ্ন প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা বর্ষা ওঁরাও।
জলপাইগুড়ির ডেঙ্গুয়াঝাড় চা-বাগান সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা বর্ষার জীবনের স্বপ্নের সূত্রপাত ছেলেবেলাতেই। ছেলেবেলা থেকে ফুটবলের প্রতি অশেষ টান ও ভালোবাসা। এপ্রসঙ্গে বর্ষা জানিয়েছেন, ছোটবেলায় দিদির ফুটবল খেলার প্রতি আগ্রহ দেখে তাঁরও ফুটবল খেলোয়াড় হওয়ার ইচ্ছা জেগেছিল। জীবনের কঠিন বাস্তবতা, অভাবের কারণে দিদিকে মাঠ ছেড়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। তখনই বর্ষার মনে ফুটবল খেলোয়াড় হওয়ার জেদ আরও প্রবল আকার নেয়।
যদিও তিনি জানতেন, যদি স্বপ্ন সত্যি করতে হয়, তবে নিজেকেই উদ্যোগী হতে হবে। এরপর মোবাইলে আর্জেন্টিনার ফুটবলার মেসির খেলার নানান কৌশল ভিডিয়ো দেখে শিখতে শুরু করেন। ঘরের এককোণায় বসে মেসির পায়ের কাজ মনে মনে রপ্ত থাকেন, সেইসঙ্গে মাঠে গিয়ে সেসবের অনুশীলন শুরু করেন।
এরপর একদিন খোঁজ মেলে এলাকার বাসিন্দা ফুটবল কোচ অমিত রায়ের। বর্ষার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে অমিতবাবু বুঝতে পারেন, বর্ষার মনে অদম্য ইচ্ছাশক্তি রয়েছে। কোচ তাঁকে নিয়মিত অনুশীলনেরও পরামর্শ দেন। এভাবে বর্ষার স্বপ্নপূরণের পথে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
একদিকে চা-বাগানের কাজের পরিশ্রম, অন্যদিকে স্বপ্নপূরণের অদম্য প্রচেষ্টা চলতে থাকে তালে তাল মিলিয়ে। জমানো টাকা থেকে ফুটবল খেলার জন্যে দরকারি সরঞ্জাম কিনে চলে স্বপ্নপূরণের প্রস্তুতি।
কঠোর পরিশ্রম ও ফুটবলের প্রতি নিবেদিত মনোভাব বর্ষা ওঁরাওকে পৌঁছে দিল মধ্যপ্রদেশের ইন্ডিয়ান উইমেন প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চে। এমন এক স্বপ্নই তো দেখেছিলেন তিনি। বর্ষার সাফল্যে খুশি পরিবারের সদস্যরা, প্রতিবেশীরাও। বর্ষা প্রমাণ করেছেন অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে জাগ্রত হবেই স্বপ্নপূরণের পথ।
ভিডিও দেখুন-