
ওঙ্কার ডেস্ক : যুদ্ধের প্রস্তুতি এখন বহুস্তরীয়, অন্তত দিল্লি পুলিশের সাম্প্রতিক উদ্যোগ থেকে এটা আর অস্পষ্ট থাকছে না। পহেলগাঁও হামলার পর কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছিল এ দেশে বসবাসকারী সমস্ত পাকিস্তানি নাগরিককে অবিলম্বে ভারত ছাড়তে হবে। তাই ১৯৬৯-এর নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী দিল্লিতে বসবাসকারী বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং মায়ানমারের মতো দেশ থেকে যে প্রচুর মানুষ রাজধানীতে ভিড় করে রয়েছে তাদের শানাক্তকরণের কাজ শুরু করে দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ্ও প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তানিদের খুঁজে বের করতে।
কিন্তু এইসব অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্তকরণের কাজ আপাত ভাবে সহজ নয়। এমন পরিস্থিতিতে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য নতুন ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে দিল্লি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনস্থ দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, আধার, প্যান ও রেশন কার্ড দেখিয়ে আর ভারতের নাগরিকত্ব প্রমাণ করা যাবে না। এক্ষেত্রে দু’টি অন্য নথির মধ্যে যে কোনও একটি থাকা বাধ্যতামূলক।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, সন্দেহভাজন বিদেশি, যাঁরা বেআইনি ভাবে দিল্লিতে বাস করছেন, নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে তাঁদের এবার ভোটার আইডি কার্ড এবং পাসপোর্ট দেখাতে হবে। দিল্লি পুলিশের তরফে জানা গেছে, তথ্য যাচাই করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে ইতিমধ্যে বেআইনি অভিবাসীরা আধার, রেশন, প্যান কার্ড তৈরি করে ফেলেছে। যা ভারতের নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র হিসেবে তারা দেখিয়ে থাকে। তাই নাগরিকত্ব প্রমাণের ক্ষেত্রে এবার ভোটার আইডি কার্ড এবং পাসপোর্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।” জানানো হয়েছে, এই দু’টির মধ্যে যে কোনও একটি থাকলেই হবে।
পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে দিল্লিতে সাড়ে তিন হাজার পাকিস্তানি নাগরিক রয়েছে, যাদের মধ্যে ৫২০ জন মুসলিম। তাঁদের মধ্যে থেকে আবার ৪০০ জনকে ইতিমধ্যেই আটারি সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। পহেলগাঁও হামলার পর পাকিস্তানি নাগরিকদের দেশে ফেরত পাঠানোর যে তৎপরতা শুরু হয়েছিল এটা তারই অঙ্গ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনস্থ দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, আধার, প্যান এবং রেশন কার্ড প্রশাসনিক ও সামাজিক কল্যাণমূলক কাজে নথি হিসেবে গৃহীত হবে। কিন্তু ওই সব নথি নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নয়।
এই মুহূর্তে মূলত দু’টি নথিকে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে সরকার স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। তা হল- জন্মের শংসাপত্র এবং ডমিসাইল সার্টিফিকেট, স্থায়ী নিবাসের শংসাপত্র। ভারতে নাগরিকদের একাধিক পরিচয়পত্র রয়েছে, আধার কার্ড, প্যান কার্ড, রেশন কার্ড। কিন্তু এগুলিকে কোনো ভাবে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে ধরছে না সরকার। যেমন- আধার, এটি পরিচয়পত্র হলেও তা কিন্তু নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নয়। অন্যদিকে প্যানকার্ড কর সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত হয়, রেশন কার্ড ব্যবহৃত হয় জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে। এর কোনওটিই নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নয়।
তাই জন্মের শংসাপত্র এবং নিবাসের শংসাপত্রই নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে ধরে কেন্দ্র। ১৯৬৯ সালের জন্ম ও মৃত্যু আইনে এদেশে জন্মগ্রহণকারীদের শংসাপত্র প্রদানের মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা আছে। দেশের কোনও রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে স্থায়ী ভাবে বসবাসের নথি হল নিবাসের শংসাপত্র। ফলে, দিল্লি পুলিশকে দিয়ে প্রকারান্তরে কেন্দ্র যে ভাবে বিদেশীদের সনাক্ত করতে চাইছে তা বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রত্যাঘাতের প্রস্তুতি হিসেবে ধরছেন বিশেষজ্ঞরা।