
ওঙ্কার ডেস্ক : ফের দুর্ঘটানার কবলে মহাকুম্ভের পুণ্যার্থীরা। শনিবার রাতে নয়াদিল্লি স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল মহাকুম্ভের ১৮ জন পুণ্যার্থী। মৃতদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে দিল্লি পুলিশ। যার মধ্যে রয়েছে ৭ বছরের শিশু, ৭৯ বছরের বৃদ্ধাও। এই মর্মান্তিক ঘটনায় সরব হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়েছেন, ঘটনাটি দেখিয়ে দিল নাগরিকদের সুরক্ষায় সঠিক পরিকল্পনা কতটা জরুরি। আরজেডি নেতা তথা প্রাক্তন রেলমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব এই ঘটনার কথা বলতে গিয়ে মহাকুম্ভকে ‘ফালতু’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাতে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
বিরোধীরা একযোগে আক্রমণ করেছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে। মৃতের সংখ্যা লুকোনো হচ্ছে বলেও অভিযোগ। বিজেপি অবশ্য এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। এই ঘটনার জন্য কেন্দ্রকে দুষেছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। তিনি বলেছেন, নয়াদিল্লি স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে এত মানুষের মৃত্যুর খবর খুব দুঃখজনক। মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, এই ঘটনা রেলের ব্যর্থতা এবং এই সরকারের অসংবেদনশীলতার প্রমাণ। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে বলেছেন, এই ঘটনার যে সমস্ত ভিডিয়ো দেখছি, তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। মোদী সরকার নয়াদিল্লি স্টেশনে মৃতের সংখ্যা গোপন করার চেষ্টা করছে। সেটা আরও লজ্জার। এই ঘটনাকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলেছেন আরজেডি নেতা লালু প্রসাদ যাদব। তাঁর অভিযোগ, রেলের অব্যবস্থার জন্য এতগুলো মানুষ মারা গেলেন! রেলমন্ত্রীর এর দায় নেওয়া উচিত। এর পরেই বিতর্ক উস্কে দিয়ে তিনি ‘কুম্ভকে এক্কেবারে ফালতু’ বলে অভিহিত করেন।
রাতেই হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজ নেন দিল্লির সদ্যপ্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আতিশী মার্লেনা। তিনি বলেন, মহাকুম্ভের পুণ্যার্থীদের সঙ্গে এই ধরণের ঘটনা মানা যায় না। মহাকুম্ভের পুণ্যার্থীদের জন্য প্রয়াগরাজেও কোনও সুব্যবস্থা নেই বলে জানান আতিশী। সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব বলেছেন, সরকারে যাঁরা আছেন, তাঁদের উচিত মৃতদের পরিবারের সদস্যদের চোখ দিয়ে বিষয়টি দেখা। রাজনীতিক হিসাবে নয়। মৃতদের দেহ রাজ্যে ফেরত পাঠানোর সুবন্দোবস্ত করা উচিত। আহতদের চিকিৎসায় যাতে ত্রুটি না-থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। মৃত্যুর তথ্য লুকিয়ে আর পাপ করা উচিত নয় বিজেপির।
এই ঘটনায় সরব হয়েছে তৃণমূলও। দলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ বলেন, কুম্ভের ভিড় নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ মোদী সরকার। এই ধরনের ঘটনার দায় এড়িয়ে এরা শুধু তথ্য লুকোনোর চেষ্টা করে। এই সরকারের অদক্ষতার জন্য এত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। যদিও বিরোধীদের দাবি উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। দিল্লিতে তাদের মুখপাত্র অজয় অলোক জানিয়েছেন, এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত হবে এবং তার ভিত্তিতে পদক্ষেপ করা হবে।’’
মৃত ১৮ জনের মধ্যে কেউ কেউ কুম্ভ থেকে স্নান সেরে ফিরছিলেন, কেউ আবার কুম্ভের দিকে যাচ্ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শনিবারের রাতটা যেন তাঁদের কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। স্টেশন জুড়ে শুধুই আর্তনাদ এখনও কানে বাজছে। পর পর দু’টি ট্রেন সময় মতো না আসায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হল বলে জানা গিয়েছে। স্টেশনে তিল ধরানোর জায়গা ছিল না। তৃতীয় ট্রেন স্টেশনে ঢুকতেই শুরু হয়ে যায় হুড়োহুড়ি। নিমেষেই পরিস্থিতি ভয়াভহ হয়ে ওঠে। ভিড়ের ধাক্কায় লোকজন লুটিয়ে পড়ে প্ল্যাটফর্মে। তাঁদের উপর দিয়ে চলে যেতে থাকে পিছনের ভিড়। রেলের তরফে ইতিমধ্যে মৃতদের পরিবারের জন্য ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যাঁদের আঘাত গুরুতর, তাঁরা আড়াই লক্ষ এবং যাঁদের আঘাত ছোটখাটো, তাঁরা এক লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পাবেন। শনিবারের ঘটনার তদন্তের জন্য দুই সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেল।