
ওংকার ডেস্ক : অ্যান্ড্রু টেট। অন্তত ৮০০ কোটি টাকার মালিক। নাগরিকত্ব রয়েছে আমেরিকা এবং ব্রিটেনে। বিশ্বে প্রবল ভাবে নারীবিদ্বেষ ছড়িয়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলা এবং নিজেকে তার স্বঘোষিত সম্রাট হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কয়েক বছর ধরে নানান কীর্তির স্রষ্টা তিনি। এইসব কু-কীর্তির মাধ্যম হিসেবে তিনি ব্যবহার করে আসতেন সোশ্যাল মিডিয়া। নিজের একটি ওয়েব সাইডও আছে। যেখানে অর্থের বিনিময়ে তাঁর অনুরাগীদের নারীবিদ্বেষী ভিডিয়ো দেখাতেন তিনি। ফেসবুক, টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামে যৌনতাবাদী ভিডিও তৈরি করে বহু অনুরাগীও তৈরি করেছেন তিনি। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে ৫০ লক্ষের উপর ফলওয়ারও তাঁর।
এই জগত গড়ে তোলার আগে তিনি ছিলেন একজন পেশাদার কিকবক্সার। ২০০৫ সালে ‘কিং কোবরা’ নামে ওই খেলায় বেশ নাম করেছিলেন। লাইট হেভিওয়েট বিভাগে দু’টি বিশ্বখেতাবও রয়েছে তাঁর দখলে। পরে এমএমএ-তেও যোগ দেন। গ্রেফতার হওয়ার আগেও রোমানিয়ার একটি এমএমএ সংস্থার হয়ে ধারাভাষ্য দিতেন তিনি। তবে ২০১৬ সালের আগে পর্যন্ত রিংয়ের বাইরে অ্যান্ড্রুর তেমন কোনো পরিচিতি ছিল না।

ব্রিটেনে একটি রিয়্যালিটি শো-তে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। সেখানে সমকাম-বিরোধী এবং বর্ণবৈষম্যমূলক কথা বলার অভিযোগ ওঠে অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে। এক মহিলাকে বেল্ট দিয়ে আঘাত করার ভিডিও প্রকাশ্যে আসায় ওই রিয়্যালিটি শো থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। এখান থেকে বাদ পড়লেও নেট মাধ্যম ছেড়ে যাননি তিনি। নিজের চরিত্রকে আরও বেশি করে মানুষের সামনে তুলে ধরতে সোশ্যাল মিডিয়াকেই আশ্রয় করেন। নিজের সুঠাম শরীর দেখাতে নানান পোজে ছবি, ভিডিও পোস্ট করতে থাকেন। সেসব বেশ জনপ্রিয়তা পেতে থাকে। সেই সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে ফলওয়ার। চলতে থাকে আত্মপ্রচার। কিন্তু তাঁর নারীবিদ্বেষ এবং যৌনধর্মী বিষয়বস্তুর প্রচারের মাত্রা এমন অবস্থায় পৌঁছোয় যে শেষ পর্যন্ত তাঁর ফেসবুক, টুইটার এবং ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিতে হয়।
এবার এই ঔদ্ধত্যের আরেক নজির দেখা গেল। গত ৯ মার্চ রোমানিয়া থেকে ফ্লরিডায় পোঁছোন এই স্বঘোষিত নারীবিদ্বেষী অ্যান্ড্রু টেট এবং তাঁর ভাই ট্রিস্টান। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে তাঁদের কার্যকলাপে ক্ষেপে ওঠেন ফ্লোরিডার মানুষ। তাঁদের বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগ ওঠে, যা উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে ফ্লরিডা জুড়ে। যার ফলে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তও শুরু করে আমেরিকার প্রশাসন। এর আগে এই একই অভিযোগে ২০২২ সালে গ্রেফতার হয়েছিলেন অ্যান্ড্রু। ভাই ট্রিস্টান সহ তাঁকে নজরবন্দী করে রাখা হয়েছিল রোমানিয়ায়। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে দুই ভাইয়ের উপর থেকে রোমানিয়ার বাইরে যাওয়া নিয়ে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে একটি ব্যক্তিগত বিমানে দেশ ত্যাগ করেন। ফ্লরিডায় পৌঁছেই ফের তদন্তে জড়িয়ে পড়েন।

এমনিতেই রোমানিয়ার ধনকুবের অ্যান্ড্রুকে নিয়ে বিতর্কের খামতি ছিল না। নানান কু-কর্মের জেরে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের কেন্দ্রে থেকেছেন। একই সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছিলেন নারীবিদ্বেষী এবং পুরুষতান্ত্রিক মতবাদের প্রচার। ‘হাসলার ইউনিভার্সিটি’ নামে একটি ওয়েবসাইট থেকে সেই মত প্রচার করতেন দুই ভাই। অভিযোগ এ সবের আড়ালে চলত নারী পাচারও। তাঁর ধনকুবের হয়ে ওঠার একটা বড় উৎস ছিল এইসব অসামাজিক কুকর্ম। মহিলাদের দিনের পর দিন আটকে রেখে যৌন হেনস্থা করা এবং জোর করে যৌনাচারের ভিডিও তোলার অভিযোগ আসে পুলিশের কাছে। প্রেমের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মহিলাদের ফাঁসাতেন বলে অভিযোগ। তার পরই তদন্ত শুরু করে রোমানিয়া প্রশাসন। ২০১৫ সালে ধর্ষণেরও অভিযোগ উঠেছিল টেটের বিরুদ্ধে। সে সময় ব্রিটেনে ছিলেন অ্যান্ড্রু। নিজেকে বাঁচতে তিনি চলে যানয়ে রোমানিয়ায়।
জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য তিনি সমাজমাধ্যমে নিজের বিলাসবহুল জীবনযাত্রার ছবি এবং ভিডিয়ো পোস্ট করতেন নিয়মিত। এক সময় তিনি দাবি করেছিলেন, তাঁর ৩৩টি বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে। রোমানিয়া প্রশাসনের দাবি, দাদার থেকে কোনও অংশে কম যান না ভাই ট্রিস্টানও। ইনস্টাগ্রামে তাঁরও অনুরাগীর সংখ্যা ২৩ লক্ষের কাছাকাছি। ট্রিস্টানও দাদার মতোই নিজের বিলাসবহুল জীবনের প্রচার করতেন নেটমাধ্যমে।নিজেদের ওয়েব সাইটকে বিশ্ববিদ্যালয় বলেও ঘোষণা করেছিলেন দুই ভাই। গুরু সেজে নিজেদের মতবাদ প্রচার করতেন। নারীদের তুলনা করতেন কুকুরের সঙ্গে। বলতেন, ধর্ষণের জন্য নারীরাই দায়ী। এইসব মন্তব্য করে নানান সময়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন তাঁরা। এমন কি, নারীরা পুরুষদের কেনা পণ্যের মতো, এমনটাই ভাবতেন অ্যান্ড্রু। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছিল, যে সব মহিলাদের আটকে রেখেছিলেন অ্যান্ড্রু, তাদের সঙ্গে যৌনদাসীর মতো ব্যবহার করা হত।
যাই হোক, ইলন মাস্ক টুইটারের ক্ষমতা দখল করার পর নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট ফিরে পান অ্যান্ড্রু। আর সঙ্গে সঙ্গেই তিনি শুরু করে দেন তাঁর পুরোনো খেলা। যার সর্বশেষ অভিযোগটি উঠেছে ফ্লোরিডায়।